রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তাকে গত ১৯ মার্চ পুলিশ পরিদর্শক জালাল উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) দিবাগত রাত ২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন আসামি হাসানকে ধরতে ডিবি পুলিশের একটি টিম পীরেরবাগ ৬০ ফুট রাস্তার ভাঙা ব্রিজ এলাকায় যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে একদল যুবক গুলি ছুড়তে শুরু করলে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে সহযোগীরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে একজনের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। অভিযানিক দলের সদস্যরা তাদের সঙ্গে থাকা ছবি মিলিয়ে দেখে প্রাথমিকভাবে নিহত ব্যক্তি হাসান বলে নিশ্চিত হন। ঘটনাস্থল থেকে দুই সার্জেন্টের চুরি যাওয়া সরকারি পিস্তলসহ তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। রাত ৩টার দিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় নিহত যুবকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল।
মিরপুর থানার এসআই খন্দকার মঞ্জুর রাহী বলেন, ‘৬০ ফুট ভাঙা ব্রিজের কাছে ডিবি পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে এক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে তথ্য ছিল হাসান তার সহযোগীদের নিয়ে পীরেরবাগের ওই এলাকায় অবস্থান করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়। কিন্তু আগের দিনের মতোই পুলিশকে দেখেই হাসান ও তার সহযোগীরা গুলি ছুড়তে শুরু করে।
গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, তারা প্রাথমিকভাবে নিহত যুবককে সন্দেহভাজন খুনি হাসান বলে শনাক্ত করেছেন। নিহতের বয়সের সঙ্গে হাসানের বয়সেরও মিল রয়েছে। এমনকি ছবি দেখেও মেলানো হয়েছে। শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুক্রবার তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা হবে।
গত ১১ জানুয়ারি মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের একটি বাসার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে দুই সার্জেন্ট–মামুনুর রশীদ ও সোহেল রানার সরকারি দুটি অস্ত্র চুরি হয়। এই ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর চুরি হওয়া ওই পিস্তল দুটি উদ্ধার করতে গত ১৯ মার্চ রাতে পীরেরবাগের ১০৫১এ নম্বর বাড়ির দোতলার ছাদের টিনশেড বাসায় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগ। অভিযান চালানোর আগে বাসাটি রেকি করতে যান ডিবি পুলিশের সদস্যরা। দোতলা বাড়ির ছাদের পরিস্থিতি দেখার জন্য ভবনের কার্নিশ বেয়ে ওঠার চেষ্টা করেন পরিদর্শক জালাল উদ্দিন ওরফে জাহাঙ্গীর। বিষয়টি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা প্রথমে ইট দিয়ে জালাল উদ্দিনের মাথায় আঘাত করে ও পরে তার মাথা বরাবর দুই রাউন্ড গুলি করে। এ সময় জালাল উদ্দিন কার্নিশ থেকে নিচের দিকে পড়ে গিয়ে ঝুলে থাকেন। ডিবির সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালান। ঘটনার কিছু সময় পর গুরুতর আহত অবস্থায় ডিবির পরিদর্শক জালাল উদ্দিনকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মধ্যরাতে তিনি মারা যান।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাসান মূলত একজন গ্রিলকাটা চোরচক্রের মূল হোতা। তার সঙ্গে মানিকসহ আরও কয়েকজন গ্রিল কেটে চুরি করে। হাসান-মানিকসহ এই চক্রের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে মিরপুর ও আশপাশের থানায় একাধিক চুরির মামলা রয়েছে। পুলিশের হাতেও সে গ্রেফতার হয়েছে একাধিকবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, অভিযানের সময় হাসানের সহযোগীরা সবাই পালিয়ে গেছে। মানিকসহ তার অন্য সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।