X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গি কার্যক্রম দমনে সাইবার জগতে নজরদারি বাড়াচ্ছে পুলিশ

জামাল উদ্দিন
০৪ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:১৬আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০১৮, ১৯:৪৯

জঙ্গি দমনে সাইবার নজরদারি

জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন ছাড়াও অন্যান্য অপরাধ দমনে সাইবার জগতে নজরদারি বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও জঙ্গি দমনে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম বন্ধে ফিজিক্যাল পেট্রোলিংয়ের চেয়ে সাইবার জগতে পেট্রোলিংয়ে জোর দিতে হবে। এর মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এজন্য সাইবার অপরাধ দমনে লোকবল বাড়ানোর পাশাপাশি টেকনিক্যাল সাপোর্ট বাড়ানো জরুরি বলেও মনে করেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) কয়েকজন কর্মকর্তা।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আগের মতো জঙ্গিরা এখন আর সংঘবদ্ধ নেই। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবিরোধী ১৬টি বড় অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এসব অভিযানে ৫৯ জন শীর্ষ জঙ্গি মারা যায়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ গুলি ও অস্ত্র। গ্রেফতার করা হয় আরও অনেককে। তারা বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে বন্দি রয়েছে।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বড় ধরনের নাশকতা চালানোর সক্ষমতা এখন জঙ্গিদের নেই। আগের মতো তারা সংঘবদ্ধও হতে পারছে না। তবে তারা সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। কিন্তু সদস্য সংগ্রহ করে তাদের ট্রেইন-আপ ও অর্গানাইজ করে অপারেশনের জন্য পাঠানোর বিষয়গুলো থাকে। এসব করে অর্গানাইজ হওয়ার মতো অবস্থা জঙ্গিদের আর নেই। জঙ্গিদের চেয়ে দৌড়ে এখন পুলিশ অনেক এগিয়ে আছে। কিছু করার পরিকল্পনার পর্যায়েই তারা ধরা পড়ে যাচ্ছে। তারা চাচ্ছে যে অনলাইনে বা বিভিন্ন মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কাউকে মোটিভেট করা। যে যেখানে আছে সেখানেই তাকে কাজ সেরে ফেলতে হবে। সেজন্য তারা ছদ্মবেশে বিভিন্ন নামে ফেসবুক, টুইটার গ্রুপ খুলছে। সেখানে তারা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে। সেখানে অনেকেই অংশ নিচ্ছে। কিন্তু সবাই যার যার বাড়িতেই আছে।

উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন মনে করল যে তার এলাকায় একজন নাস্তিক মতাদর্শের লোক আছে, তার ওপর অ্যাকশনে যাবে। সেখানে সে এ কাজটি করবে। কিন্তু কারও সঙ্গে শেয়ার করল না। মনে মনে প্রস্তুতি নিলো। এ ধরনের আক্রমণ ঠেকাতে ফিজিক্যাল পেট্রোলিংয়ের চেয়ে অনলাইন বা সাইবার জগতে পুলিশ বা গোয়েন্দাদের পেট্রোলিং বাড়াতে হবে। এজন্য প্রশিক্ষণ ও জনবল বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই সন্ত্রাসীরা এখন অনলাইনে কাজ করছে। তাদের প্রত্যেকটি গ্রুপের আবার নিজস্ব অর্থায়নে পৃথক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপস আছে। এতেই বোঝা যায় প্রযুক্তিগতভাবে তারা কতটা সুসংগঠিত। আর এদের যদি মনিটরিং করতে হয় তাহলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের দেশের ভেতরে যে গেটওয়েগুলো আছে, সেই গেটওয়েগুলোতে আমাদের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার দুটোই ব্যবহার করতে হবে। এ দুটো জিনিস ব্যবহার করার মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের কার্যক্রমের ডিজিটাল কর্মকাণ্ড নজরদারি করা যাবে। তাদের অর্থায়নের উৎসটা কী সেটাও জানা যাবে। কিন্তু আমাদের যেসব ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স আছে সেগুলো গেটওয়েগুলোতে নেই। ফলে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম সঠিকভাবে ধরা যাচ্ছে না। গেটওয়ের ভেতরেই আমাদের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার বসিয়ে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংযুক্ত করে নজরদারি করলে বিষয়টি অনেক বেশি কার্যকর হবে।

সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-কমিশনার আলিমুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা তো অনলাইনে নজরদারি করেই আসছি। কিন্তু সাইবার ওয়ার্ল্ড তো অনেক বিশাল। এ জগতে পৃথিবীর যেকোনও জায়গা থেকে কাজ করা যায়। সব তো পারবো না, তবে আমরা চেষ্টা করছি যেখানে যেখানে বন্ধ করা যায় সেখানে বন্ধ করতে। একটি ডোমেইনের মধ্যে অনেক সাব-ডোমেইন থাকে। সেটা সরাসরি বন্ধ করার সুযোগ নেই। সেখানে ডোমেইনটা বন্ধ করতে হবে। ওয়ার্ড প্রেস কিন্তু একটা ব্লগ সাইট। যেখানে অনেক ক্রিয়েটিভিটি আছে। বাংলাদেশে অনেকেই এখানে লেখালেখি করেন। সেখান থেকে সুস্থ অনেক কিছুই আমরা পাচ্ছি। এখন আমি যদি ওয়ার্ড প্রেস বন্ধ করে দেই তাহলে যারা এখান থেকে ক্রিয়েটিভ জিনিসপত্র পান, লিখতে পারেন, তাদের জন্য কিন্তু জায়গাটা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই একদিনে তো কোনও কিছু সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি। এখন মেইন ডোমেইন যেখানে আছে সেখানে আমরা ফিল্টারিং করার চেষ্টা করছি। এরপর আমরা দেখবো ব্লগসাইট যেগুলো আছে সেখানে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমরা কিছু করতে পারি কিনা। কারণ, সোর্সটা বন্ধ করতে না পারলে কনটেন্ট তারা পাবেই। একবার কোনও কিছু চলে এলে সেখান থেকে শেয়ার হতে হতে সেটা ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে তারা কাজগুলো করতে পারছে।

আলিমুজ্জামান বলেন, বহির্বিশ্বের সঙ্গে যেসব গেটওয়ে আছে সেগুলো কন্ট্রোল করে বিটিআরসি। তাছাড়া গেটওয়ে বা যারা আমাদের ডাটাগুলো বহন করে, এ পর্যায়ে যারা এটা চালায় তারাও কাজ করছে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করার ব্যাপারে। আমরাও তাদের বলছি কোন কাজটা কীভাবে প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু এখানে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। ইচ্ছা করলেই এখানে সব বন্ধ করা যায় না। সেটা আস্তে আস্তে করতে হবে। চেষ্টা অব্যাহত আছে। এর আগেও আমরা বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছি। কয়েকদিন আগেও এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে সময় লাগবে।

পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সহেলী ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সব ধরনের কার্যক্রম নজরদারি পুলিশের নিয়মিত প্রধান কাজগুলোর একটি। জঙ্গিদের কৌশল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশও তাদের পরিকল্পনা ও তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সাইবার জগতে নজরদারির বিষয়ে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। 

/জেইউ/টিএন/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লেবাননে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
লেবাননে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
মুজিবনগর দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
মুজিবনগর দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
আইইউবিতে অনুষ্ঠিত হলো জলবায়ু বিজ্ঞানী সালিমুল হক স্মারক বক্তৃতা
আইইউবিতে অনুষ্ঠিত হলো জলবায়ু বিজ্ঞানী সালিমুল হক স্মারক বক্তৃতা
আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে