রাজধানীর কাওরানবাজারে দুই বাসের চাপে এক তরুণের হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই নিউমার্কেট এলাকায় দুই বাসের চাপে আয়েশা খাতুন (২৫) নামের এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিনি তার মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন ওই নারীকে উদ্ধার করে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এই ঘটনায় বিকাশ পরিবহনের দুটি বাস জব্দ ও একটির চালক মোজাহারুল ইসলাম ওরফে শাহ আলমকে গ্রেফতার করেছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। ভুক্তভোগীর স্বামী তানভীর আহমেদ তাহের বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় মামলা করেছেন।
আহত আয়েশা খাতুনের স্বামী তানভীর আহমেদ তাহের বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) সকাল ৭টার দিকে মেয়ে আহনাদকে ধানমন্ডির স্কলারস স্কুলে পৌঁছে দিতে আয়েশা বাসা থেকে বের হন। একটি রিকশায় তারা নিউমার্কেটের চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে এলে একই দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা বিকাশ পরিবহনের দুটি বাস রিকশাটিকে দুদিক দিয়ে চাপ দেয়। এতে ওই রিকশায় থাকা আয়েশা, আহনাদ ও রিকশাচালক আহত হন। আয়েশার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখম হয়। আহনাদ মাথায় সামান্য আঘাত পায়।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু লোক ওদের উদ্ধার করে ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই মোবাইল ফোনে আমাকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর আমি এবং আমার শাশুড়ি হাসপাতালে ছুটে আসি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আমার স্ত্রীর মেরুদণ্ডের দুটি হাড় সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। কোমর থেকে নিচের অংশ অকেজো হয়ে গেছে। তার মেজর অপারেশন করা হয়েছে। এখন তিনি বসতে পারবেন কিন্তু চলতে পারবেন না।’
তানভীর আহমেদ তাহের বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনা আমাদের সুখের সংসার তছনছ করে দিলো। সরকার কি এই চালকদের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে না।’
নিউমার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এই ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার মোজাহারুল ইসলাম বিকাশ পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৯২৭৮) বাসের চালক ছিলেন। অন্য বাসটির (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৯৯৯৪) চালক পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। থানা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার চালক মোজহারুল ইসলাম গাজীপুরের টঙ্গী থানার ব্যাংকপাড়া সুমি আক্তারের বাসার ভাড়া থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগাছায়। তার বাবার নাম আনছার আলী।
গত ৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে দুই বাসের চাপায় রাজীব হোসেন (২২) নামের এক ছাত্রের একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে হাতের অপারেশন করার পর ৪ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাংলামোটর থেকে ফার্মগেটমুখী বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের গেটে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন রাজীব। সেটি সার্ক ফোয়ারার কাছে পাশে সিগন্যালে এসে থামে। এ সময় একই দিক থেকে আসা স্বজন পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে দোতলা বাসের পাশ দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় বাস দুটি গায়ে গায়ে লেগে গেলে চাপা খেয়ে রাজিবের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই বাসের মধ্যে ঝুলতে থাকে।