X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনার পর গাড়িচালক পালিয়ে যান যে কারণে

আমানুর রহমান রনি
২০ এপ্রিল ২০১৮, ২৩:৫৮আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:৪৪

বাস দুর্ঘটনা (ছবি- সংগৃহীত)

দুর্ঘটনার পরপর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গাড়িচালক পালিয়ে যান। কখনও গাড়ি নিয়ে, কখনও বা গাড়ি ও যাত্রীদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে সড়কে ফেলে রেখেই। অনেক সময় চালক দুর্ঘটনার পরও গাড়ির চাকার সঙ্গে বাঁধিয়েও আহত ব্যক্তিকে বহুদূর টেনে নিয়ে যান। মাঝেমধ্যে যাত্রী ও পথচারীদের সহযোগিতায় চালককে আটক হয়। তবে বেশিরভাগ সময় তাদের ধরা যায় না। চালকদের এমন আচরণের কারণ কী শুধুই জনরোষ এড়ানো, নাকি অন্য কিছু? সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ চালক ও গাড়ির কাগজপত্র ত্রুটিপূর্ণ। তাই ঘটনার পর তারা আর সেখানে থাকেন না। জনরোষে পড়ার আশঙ্কাটাও বড় বিষয়। তাই দুর্ঘটনার পরপর তারা পালিয়ে যান।’

এ বিষয়ে জানতে ৫৬ জন গাড়িচালকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। দুর্ঘটনার পর চালকরা পালিয়ে যায় কেন- এ প্রশ্নের জবাবটি কেউ কেউ গুরুত্ব দিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ হেসে বলেছেন, ‘গণধোলাই খাওয়ার চেয়ে পালিয়ে যাওয়া ভালো।’

টঙ্গী-গুলিস্তান রুটের তুরাগ পরিবহনের গাড়িচালক আব্দুস সালাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুর্ঘটনা কেউ ইচ্ছা করে করে না, হয়ে যায়। যেকোনও দুর্ঘটনার পর যাত্রী, পথচারী সব এক হয়ে যায়। চালককে মারধর করে। এজন্য দুর্ঘটনার পর চালক পালিয়ে যায়। বসে বসে মার খাওয়ার দরকার কী?’

কেউ গাড়ির নিচে পড়েছে, তা দেখেও চালক গাড়িটি তার গায়ের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সালাম বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় মাথা কাজ করে না।’

তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে একাধিক ট্রাকচালকের সঙ্গে কথা হয়। এদের অনেকেই সড়কে ট্রাক নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছেন। তাদের একজন হাবীবুর রহমান। তার ট্রাকে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এমন কাউকে কি তিনি কখনও হাসপাতালে নিয়েছেন- এ প্রশ্নের জবাবে হাবিব বলেন, ‘অনেক ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে কাউকে হাসপাতালে নিতে পারিনি। গাড়ি চালিয়ে চলে আসছি। অথবা বন্ধ করে চলে আসছি। কারণ, চালককে পেলেই মানুষ মারধর করে।’

এভাবে পালিয়ে আসা ঠিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে চালককে যেভাবে মারধর করে তাতে অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনায় আহতদের সহযোগিতা করা চালকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই চালক পালাতেই চায়।’

দুর্ঘটনার পর গাড়িচালকের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চালক ও সাধারণ মানুষ উভয়ই জানে সড়কে এই মৃত্যুর কোনও বিচার হয় না। তাই চালক দুর্ঘটনার পর যদি পালিয়ে যেতে পারে, তাহলে তার আর শাস্তি পেতে হবে না। এছাড়া তিনি বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় ছাড়া পাবেন। আইনে যে সাজা আছে তাও কম। আর সাধারণ মানুষ জানে চালকদের কোনও বিচার হয় না, তাই তারা আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয়। চালককে পেলে মেরেই ফেলবে এমন অবস্থা।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আইন পরিবর্তন করা দরকার। তাহলে এভাবে পালিয়ে গিয়েও কেউ রক্ষা পাবে না। পৃথিবীর কোথাও এমন দৃষ্টান্ত নেই, চালক গাড়ি রেখে যেভাবে লাফিয়ে পড়ে পালায়, তাদের সংগঠনগুলোও এই পালানো সমর্থন করে। তাই তারা চলন্ত গাড়ি থেকেও লাফিয়ে পড়ে পালায়।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চালকরা পালিয়ে গিয়ে আইনগত কোনও সুবিধা বা অসুবিধা পায় না। কিন্তু পালিয়ে যাওয়া মানেই সাধারণভাবেই ধরে নেওয়া হয়, সে অপরাধী। মানুষ মনে করে, অপরাধী বলেই তারা পালিয়েছে।’

নিসচা’র তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ বেপরোয়া গাড়ি চালানো। এছাড়াও ট্রাফিক আইন অমান্য করার সংস্কৃতি, অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় এই প্রবণতা কমছেই না।

তাদের দাবি, দেশের সব হাইওয়েতে গতিনির্ণয়ক যন্ত্র স্থাপন করা প্রয়োজন। সড়কের পাশেই বাজারসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা রয়েছে। এসব সড়কের পাশ থেকে সরানো উচিত। প্রতিযোগিতামূলক ওভারটেকিং বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘চালকদের মানবিক বিষয়গুলো নিয়ে কাউন্সিলিং করা প্রয়োজন। দুর্ঘটনার পর তাড়াহুড়ো করে গাড়িটি নিয়ে পালানোর কারণে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। যে মানুষটি গাড়িতে ধাক্কা খায় বা নিচে পড়ে তাকে বাঁচানোর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে চালককেই মানবিক হতে হবে। আর ‍চালক যদি তারপরও ওই মানুষটির ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে চান, সেটা দুর্ঘটনা থাকে না। এটা অপরাধ, আর সেটা বুঝতে পেরেই চালকরা পালিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘গাড়ি চালকদের হাতে মালিকরা গাড়ি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন। তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি, মানবিক বোধ বৃদ্ধিতে আরও কাজ করার জায়গা রয়েছে। এসব করার জন্য পরিবহন মালিক সমিতি ও গাড়ির মালিকদের সমন্বয়ে আঞ্চলিক কমিটি গঠন করে পর্যায়ক্রমে গাড়ির চালকদের নিয়ে সভা-সেমিনার করা দরকার।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিরি হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ) ১,৪২৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১,৪৫৬ জন। গড়ে প্রায় প্রতিদিন ১৬ জন মানুষ সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪,৩৮০ জন। এদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন।

 

 

 

/এসটি/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী