একটি বাঁশের বেড়ার ঘর, তার পাশে শুকনো খড়ের পালা, খুঁটিতে বাধা তিনটি ছাগল। ঠিক তার পাশেই সবজির চাষাবাদ। ঘরের চালে কবুতরের বাসা, আর উঠানে মাছ ধরার পোলো দিয়ে মুরগীর ছানা আটকে রাখা। পাশেই বাড়ির কর্তা চাকতি ঘুরিয়ে বানাচ্ছেন মাটির হাঁড়ি। এসময় বাড়ির পাশে থাকা পুকুরে মাছগুলো যেন খেলা করছে। বৈশাখের আগমনে সবকিছুই যেন নতুন রূপ নিয়েছে। এই বাড়িটি থেকে কিছু দূরেই বসেছে বৈশাখী মেলা। নতুন বছরের আগমনে ওই গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। বাঙালির ঐতিহ্য ধারণ করা হরেক রকম খেলনা (পালকি, হাতি, ঘোড়া, ঝুল, বাহারি হ্যারিকেন, ঝুড়ি, পুতুল, কুলা, গলার মালা, কানের দুল, হাতের বালা, হাত পাখা) কাপড় ও শাড়ি এবং মজাদার সব খাবারের পশরা বসিয়েছে গ্রামের মানুষেরা। বাংলার নববর্ষকে বরণ করে নিতে বাউল-গায়েনরা মেলার এককোণে গাইছেন বৈশাখের গান। আর পাশে চলছে সাপের খেলা, আছে নাগরদোলা, দূরদূরান্ত থেকে এই গ্রামে এসে মেলায় বসেছে তারা। আর ১০ গ্রামের মানুষ আনন্দ মনে যোগ দিচ্ছে উৎসবমুখর এই বৈশাখী মেলায়।
এ যেন গ্রামের চির চেনা দৃশ্যের অবতারণ। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে র্যাব সদর দফতর সেঁজেছিল গ্রামীণ সাজে। শনিবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর র্যাব সদর দফতরের ভেতরে এমন চিত্র দেখা যায়। ১৪২৫ বাংলা সনকে বরণে দফতরের শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ মেমোরিয়াল হলে এবারের বৈশাখী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষের সব ঐতিহ্য তুলে ধরেই অনুষ্ঠান সাজায় এলিট ফোর্সটি।
র্যাবের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য খাবাবের স্টলগুলোতে বাঙালিয়ানা হরেক আইটেম দেখা যায়। চিড়া, খঁই, মুড়ি, বাতাসা, সন্দেশ, নাড়ু, লাড্ডু, বালুসা (মিষ্টি), মোড়ালি, নিমকি, সন্দেশসহ আরও বিভিন্ন মিষ্টান্ন। অন্য স্টলে ছিল বাঙালি সব পিঠা। এছাড়াও দুপুরেও ছিল সব বাঙালিয়ানা খাবার খিচুরির সঙ্গে বিভিন্ন পদের ভর্তা, পান্তা ভাত শুকনো মরিচ মুরগি ও গরুর মাংস।
উৎসবে প্রায় সবার গায়েই ছিল রঙিন পাঞ্জাবি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাংলা বর্ষবরণ পালন করেছে তারা। উৎসবকে আরও মুখোরিত করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট থেকে আসা কর্মকর্তা ও সদস্যরা। সঙ্গে ছিলেন গণমাধ্যম কর্মীরাও।
অনুষ্ঠানে চলছিল বৈশাখের গান, একে অন্যের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন অতিথিরা। দুপুর ১টার দিকে, অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তাকে স্বাগত জানান র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ সদস্যরা। এরপর ‘হু-হুমনা হু-হুমনা’ ধ্বনিতে পুলকিত হলো পুরো অফিস। পালকিতে তুলে অনুষ্ঠান স্থলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সব জায়গা ঘুরে দেখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার সঙ্গে ছিলেন আমন্ত্রিত সব অতিথিরা। পরে বর্ষবরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন সবাই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম। এছাড়াও র্যাব-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।