X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চার বছর মর্গে ধর্মান্তরিত লাইজুর লাশ: রায়ের কপির অপেক্ষায় পরিবার

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৩ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:৫৩আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:৫৮

হোসনে আরা লাইজু (নীপা রানী রায়) চার বছর ধরে মর্গে থাকা নীলফামারীর ধর্মান্তরিত হোসনে আরা লাইজুর (নীপা রানী রায়) লাশ ইসলামিক রীতি অনুযায়ী দাফনে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও এখনও রায়ের কপি পায়নি পরিবার। ফলে লাইজুর লাশ দাফনে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লাইজুর শ্বশুর জহুরুল ইসলাম।

রায়ের কপি না পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে সোমবার (২৩ এপ্রিল) সাংবাদিকদের জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১২ এপ্রিল রায় হয়েছে। আদালত ধর্মান্তরিত লাইজুর লাশ ইসলামিক রীতিতে দাফনের নির্দেশ দিয়েছেন। রায়ের লিখিত কপি হাতে পাওয়ার দুদিনের মধ্যে লাশ দাফন করতে বলা হয়েছিল। গত ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টের আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি আমরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। কিন্তু জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, হাইকোর্টের আদেশের মূল কপি পাওয়ার পর তারা লাশ দাফনে পদক্ষেপ নেবেন।’

এ বিষয়ে নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মো. নাহিদ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনও আদেশ আসেনি। আদালতের আদেশ পেলেই লাশ দাফনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল ধর্মান্তরিত হওয়া নীলফামারীর হোসনে আরা লাইজু (নিপা রানীর) মরদেহ ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায় প্রদানকারী  বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষরের পর ১৫ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।

হোসনে আরা লাইজুর লাশ ইসলামিক রীতি অনুযায়ী দাফন করতে গত ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে এই আদেশ লিখিত আকারে হাতে পাওয়ার দুদিনের মধ্যে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি হোসনে আরা লাইজুকে দাফনের আগে তাকে পরিবারের দেখার সুযোগ দিতে বলা হয়। এক আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি শেষে বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে মেয়ের বাবার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সমীর মজুমদার। অন্যদিকে ছেলের বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট একেএম বদরুদ্দোজা। হুমায়ুন ফরিদ লাজু ও হোসনে আরা লাইজু

মামলার বিবরণ অনুসারে, নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের খামার বমুনিয়া গ্রামের অক্ষয় কুমার রায় মাস্টারের মেয়ে নীপা রানী রায়ের (২০) সঙ্গে একই উপজেলার পূর্ব বোড়াগাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন ফরিদ লাজুর (২৩) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর পালিয়ে যান। এরপর নীপা রানী রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি মোছা. হোসনে আরা বেগম লাইজু নাম ধারণ করেন। নীলফামারীতে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিটে দুই লাখ ১ হাজার ৫০১ টাকা দেনমোহরে হুমায়ুন ফরিদ লাজুকে বিয়ে করে। এরপর তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন। এ অবস্থায় মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার রায় ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাদী হয়ে নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ের সব কাগজপত্রসহ আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দি দেন। পরে আদালত সার্বিক বিবেচনায় অপহরণ মামলাটি খারিজ করে দেন।

মেয়ের বাবা মামলার খারিজ আপিলে তার মেয়েকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মস্তিষ্ক বিকৃতি রয়েছে (পাগল) দাবি করে আদালতে কাগজপত্র দাখিল করে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষার জন্য রাজশাহী সেফ হোমে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। লাইজু সেফ হোমেই অবস্থান করছিলেন।

পরে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি লাইজুর স্বামী লাজু বিষপানে আত্মহত্যা করেন। লাজুর আত্মহত্যার বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে লাইজুর বাবা তাকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করলে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান তার বাবা। তবে মেয়েকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মস্তিষ্ক বিকৃতি (পাগল) দাবি করে আদালতে দায়ের করা মামলাটি চলমান থেকে যায়।

২০১৪ সালের ১০ মার্চ দুপুরে বাবার বাড়িতে নিজের শোয়ার ঘরে সবার অগোচরে কীটনাশক পান করেন লাইজু। পরে তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ডোমার থানা পুলিশ হাসপাতাল থেকে মেয়েটির মরদেহ রাতেই উদ্ধার করে। পরের দিন (১১ মার্চ) নীলফামারী জেলার মর্গে মেয়েটির মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। ওইদিন পুত্রবধূ দাবি করে লাজুর বাবা জহুরুল ইসলাম ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক লাইজুর দাফনের আবেদন করেন। তবে মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার রায় হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে মেয়ের সৎকারের জন্য নীলফামারী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে লাইজুর মরদেহ তার শ্বশুরের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে লাইজুর বাবা আপিল করেন। এরপর জজ আদালত লাইজুর মরদেহ তার বাবার কাছেই হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন তার শ্বশুর। সেই আবেদনের নিষ্পত্তি করে মুসলিম রীতিতে লাশ দাফনের আদেশ দেন হাইকোর্ট।

বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লাইজুর মরদেহ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরেই রাখা হয়।

আরও পড়ুন- চার বছর মর্গে থাকা ধর্মান্তরিত লাইজুর লাশ মুসলিম রীতিতে দাফনের নির্দেশ

 

 

/বিআই/এফএস/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা