ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২১ এপ্রিল রাতে সন্তানসম্ভবা শারমিন আক্তারকে যখন ভর্তি করা হয় তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছিলেন, ‘শিশুটি মায়ের গর্ভেই মারা গেছে।’ এরপর আজ (সোমবার) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে শারমিনের স্বাভাবিক প্রসব হলে দেখা যায়, শিশুটি নড়াচড়া করছে না। তখন ঢামেকের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। এমনকি তার ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-ও দেওয়া হয়েছে। আজিমপুর কবরস্থান থেকে বেঁচে আসা ‘মৃত’ শিশুটি সম্পর্কে তার মামা শরিফুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আবু তায়েব।
শিশুটি বর্তমানে শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছে।
শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক বলেন, ‘১৯ এপ্রিল সাভারের স্থানীয় একটি ক্লিনিকে শিশুটির মা শারমিন আক্তারকে ভর্তি করা হয়। তিনি রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত ছিলেন। সেখানে তাকে দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। ২০ এপ্রিল সকালে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন স্থানীয় চিকিৎসক। ওইদিনই তাকে সাভারের মালেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মালেক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ শারমিনকে ভর্তি করেনি। তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে।’
ডা. মো. আবু তায়েব বলেন, ‘‘২১ এপ্রিল রাত একটার সময় ঢামেকে ভর্তি করার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, ‘শিশুটি মায়ের গর্ভেই মারা গেছে।’ পরে সোমবার (২৩ এপ্রিল) সকাল পৌনে আটটায় শারমিন আক্তারকে ডেলিভারির জন্য নিয়ে আসা হয়। ৮টা ১০ মিনিটে তার স্বাভাবিক প্রসব হয়। কিন্তু দেখা যায়, শিশুটি নড়াচড়া করছে না। সেসময় ঢামেকের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। সকাল সাড়ে ৯টায় শিশুটির মামা মো. শরিফুল ইসলাম আজিমপুর কবরস্থানে শিশুটিকে কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যান। ১০টা ১২ মিনিটের দিকে এক মহিলা শিশুটিকে গোসল করানোর সময় তার মামাকে জানান যে, শিশুটি বেঁচে আছে। গোসল করানোর সময় সে নড়ে উঠেছে।’
ডা. তায়েব বলেন, ‘শিশুটি বেঁচে আছে শুনে তাৎক্ষণিক তার মামা শরিফুল ইসলাম তাকে আজিমপুর মাতৃসদনে নিয়ে যান। ওখানকার চিকিৎসক শরিফুলকে শিশুটির বেঁচে থাকার বিষয়ে নিশ্চিত করেন। ওইসময় শিশুটির হার্টবিট খুব আস্তে আস্তে চলছিল এবং খুব আস্তে সে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল। আজিমপুর থেকে পরে তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখানে আনার পরপরই প্রথমে শিশুটিকে চিকিৎসকরা কাপড়ে মুড়িয়ে নেন। তারপর আমরা তাকে কার্ডিয়াক আইসিইউতে ভর্তি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘শিশুটিকে যখন ভর্তি করানো হয়, তখন তার হার্টবিট ছিল ৩০-৩৫। আইসিইউতে নেওয়ার পরে তার হার্টবিট ৮০-৯০-তে উঠেছে। শিশুটি এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। আমরা তাকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা কোনও মিরাকলের অপেক্ষা করেছি।’
শিশুটির মামা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে, ‘আপনারা গাছ চান, নাকি ফল চান?’ তখন আমরা বলেছি— গাছ বেঁচে থাকলে ফল এমনিতেই পাওয়া যাবে।’
তিনি জানান, শিশুটির মা শারমিন বর্তমানে ঢামেক হাসপাতালের ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। গতকাল (রবিবার) রাতে তার রক্ত বমি হয়েছে।
আজিমপুর মাতৃসদনের সুপার ডা. ইসরাত জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে শিশু ইউনিটে তার প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় আমরা তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পরিবারের লোকদের সঙ্গে শিশু হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘পরিবার আমাদের জানিয়েছিল, শিশুটিকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করতে নেওয়া হয়েছিল।’
আজিমপুর কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘কবরস্থানের লাশ নিবন্ধনের রেজিস্টার খাতায় শিশুটির নাম লেখা হয়েছে মীম। ঠিকানা লেখা হয় ধামরাইয়ের শ্রীরামপুরে। তার বাবার নাম মিনহাজউদ্দিন। মা শারমিন আক্তার।’
আরও পড়ুন: