X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাড্ডায় আ.লীগ নেতার ভাই খুন: নেপথ্যে আধিপত্য বিস্তার

আমানুর রহমান রনি
২৪ এপ্রিল ২০১৮, ০১:৩১আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:৫৮

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের ঘটনাতেই বাড্ডার বেরাইদে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ভাই কামরুজ্জামান দুখু (৩৫) খুন হয়েছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ দ্বন্দ্ব চলছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনও মামলা হয়নি।

নিহত কামরুজ্জামান দুখু সোমবার দুপুরে বাড্ডার বেরাইদে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো এলাকায় থমথমে পরিবেশ। মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ। সংঘর্ষের বিষয়ে স্থানীয়রা কেউই কথা বলতে চায় না। ঘটনার সময় অনেকে গোলাগুলি দেখলেও এ বিষয়ে সবাই নিশ্চুপ।

রবিবার (২২ এপ্রিল) বেরাইদ ক্রাউন সিমেন্ট কারখানার কাছে ঢাকা-১১ আসনের সংসদ সদস্য একেএম রহমতউল্লাহ ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন জাহাঙ্গীর আলমের ভাই কামরুজ্জামান দুখু।

ঘটনার পর নিহত কামরুজ্জামান দুখুর ভাই ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য রহমতুল্লাহর ভাগ্নে ফারুকের নেতৃত্বে অতর্কিতে গুলি চালিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।’

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য রহমতুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কে কী বলল, সে বিষয়ে সেই ভালো বলতে পারবে।’ 

আরও পড়ুন: বাড্ডায় দুই গ্রুপের গোলাগুলি, আ.লীগ নেতার ভাই নিহত

ঘটনাস্থলে সোমবার গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আছেন। আশপাশে কোনও লোকজন নেই। পথে কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করলেও কেউ কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।

ক্রাউন সিমেন্ট কারখানার পাশের এক স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বালু উত্তোলন নিয়ে দুই গ্রুপের ঝামেলা আছে। কয়েক দিন আগে থেকেই নিহত কারুজ্জামানের বালু-সিমেন্টের দোকান বন্ধ ছিল। এরপর গতকাল এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাড্ডার স্থানীয় সংসদ একেএম রহমতুল্লাহর ভাগনে ফারুক এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরের মধ্যে বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি বেরাইদ ইউনিয়ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে অন্তর্ভুক্ত হলে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন স্থানীয় সংসদের ছেলে হেদায়েতুল্লাহ রণ ও জাহাঙ্গীর আলম। এরপর থেকে এমপি গ্রুপ ও জাহাঙ্গীর গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক ব্যক্তি বলেন, ‘বেরাইদ ক্রাউন সিমেন্ট ফ্যাক্টরি নিয়ন্ত্রণ করতো কামরুজ্জামান দুখু। ওই ফ্যাক্টরি থেকে প্রতিমাসে তার আয় ছিল প্রায় ১০ লাখ টাকা। বেশ কয়েক মাস ধরে ফ্যাক্টরিটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছিল এমপি সমর্থক ভাগ্নে ফারুকের সহযোগীরা। রবিবার দুপুর থেকে ওই ফ্যাক্টরিতে অবস্থান নেয় ফারুক গ্রুপের মহসিন, আজাদ, মারুফসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় জাহাঙ্গীর গ্রুপের লোকজনও। পরে বিকালের দিকে বড় বেরাইদ ফোর্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বিল্ডার্সের সামনে উভয় গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত হলেও আহত হয় আরও ৮ জন। তবে ঘটনার সময় ভাগ্নে ফারুক সেখানে ছিল না।’

এলাকায় স্থানীয় এমপির মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত ভাগ্নে ফারুক। জাহাঙ্গীর আলমও স্থানীয় এমপির লোক ছিলেন। কাউন্সিলর নির্বাচনের আগে (আদালতের আদেশে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি) বেরাইদ মুসলিম হাইস্কুল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসে কাউন্সিলর হিসেবে রহমতুল্লার ছেলে রণকে প্রার্থী ঠিক করেন। জাহাঙ্গীর এমপির ছেলের প্রার্থী হওয়া নিয়ে হ্যাঁ-না কিছু বলেননি। কিন্তু মনোনয়নপত্র ফরম ছাড়ার পর রণের পাশাপাশি জাহাঙ্গীরও কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এরপর থেকে এমপি গ্রুপের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের চরম বিরোধ দেখা দেয়।
স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘স্থানীয় এমপিই জাহাঙ্গীরকে নেতা ও চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। সে আগে দোকানে পলিথিন বিক্রি করতো। চেয়ারম্যান হওয়ার পর রাতারাতি পাল্টে যায় জাহাঙ্গীর ও তার ভাইদের ভাগ্য। সবকিছু এমপির কারণে হয়েছে। এখন এমপিকেই সে চেনে না।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই কোনও পার্টি করে না। সে নিরীহ মানুষ, ব্যবসা করতো। আমি ডিএনসিসি’র উপনির্বাচন নিয়ে মামলা করায় এমপি আমার ওপর খেপে গেছে। কারণ, আমি নিজেও কাউন্সিলর প্রার্থী।’

এদিকে দুপক্ষের সংঘর্ষ হতে পারে এমনটি পুলিশ আগেই আঁচ করতে পেরেছিল। এজন্য পুলিশ সদর দফতরেও বাড্ডা থানা পুলিশ এ বিষয়ে জানিয়েছিল। তবে তারপরও কোন পক্ষকে নিবৃত করা যায়নি।

সোমবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনও মামলা হয়নি। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলা করতে কেউ আসেনি। অভিযোগ দিলেই আমরা অভিযোগ নেবো। তবে ঘটনার পর বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছি। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ কেউ আটক আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না এখনও কেউ আটক নেই।’

অপরদিকে গুলিবিদ্ধ আটজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে।

/এমও/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক