X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফাহিম মাশরুরকে নিয়ে কী ঘটেছিল?

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৬ এপ্রিল ২০১৮, ০১:০৩আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:৪৭



ফাহিম মাশরুর (ফাইল ছবি) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার একটি মামলায় আটক করা হয়েছিল চাকরিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিডি জবস’র প্রধান নির্বাহী ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুরকে। আটকের পর পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন তাকে আটক করা হলো আর কেনইবা এভাবে ছেড়ে দেওয়া হলো?

ফাহিম মাশরুরকে আটকের খবরে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ৫৭ ধারায় আটক হওয়া কোনও ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি।

জানা গেছে, ফাহিম মাশরুরের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আল সাদিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় একটি মামলা করেছিলেন। গত ২২ এপ্রিল কাফরুল থানায় এই মামলা করা হয়। এতে ফাহিমের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে উসকানিমূলকভবে মিথ্যা ও অপমানজনক স্ট্যাটাস ও তথ্য আপলোড করে অপপ্রচারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ দেশে অরাজক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরির অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া, ফাহিমের ফেসবুক আইডি থেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আপলোড ও শেয়ারসহ মিথ্যা ও অপমানজনক স্ট্যাটাস ও তথ্য আপলোড করারও অভিযোগ করা হয় ওই মামলায়। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আটক করা হয় তাকে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়ার প্রস্তুতিও চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বদলে যায় দৃশ্যপট। বিকালে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফাহিম মাশরুর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নানা অনিয়ম নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব রয়েছেন। এছাড়া, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে সরকারের অবস্থান নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি। এ কারণে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন তাকে আকাশ থেকে টেনে নামিয়ে আনার হুমকিও দিয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আইসিটি খাতে অনিয়ম নিয়ে সমালোচনা করায় সরকারের প্রভাবশালী কেউ কেউ ফাহিম মাশরুরের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। ওই মামলার পেছনে এটিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হচ্ছে।

একাধিক সূত্রের মতে, এসব কারণেই ফাহিম মাশরুরকে শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যেই কাওরানবাজারের তার নিজ কার্যালয় থেকে আটক করা হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই সাইবার ক্রাইম ইউনিট তাকে আটক করে। প্রথমে তাকে রাখা হয় মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে। কিন্তু বিতর্কিত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় ফাহিম মাশরুরকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এতে বিষয়টি নিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে মনে হওয়ায় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ফাহিম মাশরুরকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

সূত্র বলছে, সরকারের নির্দেশনা পেয়ে ফাহিম মাশরুরকে আদালতের পথ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আবারও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যালয়ে ফেরত আনা হয়। পরে তার সঙ্গে আরও অন্তত ঘণ্টাখানেক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ফাহিম মাশরুরের প্রতিষ্ঠান বিডি জবস’র পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় পুরো বিষয়টি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলে জানানো হয়।

বিডি জবস’র প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা প্রকাশ রায় চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ফেসবুকে দেওয়া কিছু পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হওয়ায় বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, কোনও অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যাপারটির সুষ্ঠু মীমাংসা হয়েছে এবং তিনি কাজে যোগদান করেছেন।’

বিকালে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। তার ফেসবুক ঘেঁটে দেখা হয়েছে। সত্যিই তিনি নিজের ফেসবুক থেকে সরকারবিরোধী কোনও স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।

সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফাহিম মাশরুরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু তার ফেসবুক ঘেঁটে আমরা এখনও তেমন কিছু পাইনি। এজন্য মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে।’

ফাহিম মাশরুর বিডিজবস ডটকম ছাড়াও ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ‘আজকের ডিল’র প্রধান নির্বাহী। এসএমই ফাউন্ডেশন আয়োজিত ২০১৮ সালের বর্ষসেরা উদ্যোক্তা (মাঝারি প্রতিষ্ঠান, সার্ভিস ক্যাটাগরি) হিসেবেও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। গত ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তিনি এই পুরস্কার নেন। এছাড়া, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস- বেসিসের নতুন কমিটিতে তিনি পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে তিনি বেসিসের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

/এনএল/এএম/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া