X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

বিরোধ মেটাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপেক্ষায় তাবলিগ

চৌধুরী আকবর হোসেন
২৯ এপ্রিল ২০১৮, ০২:২১আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:১৫

কাকরাইল মসজিদ (ছবি- সংগৃহীত) তাবলিগ জামাত দিল্লির নেজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভিকে কেন্দ্র করে ফের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) রাত থেকে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে ফের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের উপস্থিতিতে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া দুই গ্রুপের শীর্ষ মুরব্বিরা শনিবার (২৮ এপ্রিল) সকালে কাকরাইল মসজিদ ছাড়তে বাধ্য হন। তাদের বিরোধ মেটাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আগেরবার ভূমিকা রেখেছিলেন। এবার তিনি দেশে না থাকায় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে দুই গ্রুপের সদস্যদের। তাবলিগ জামাত ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কাকরাইল মারকাজে শুরা সদস্য রয়েছেন ১১ জন। এরমধ্যে দিল্লির নেজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভির পক্ষে রয়েছেন মাওলানা মোজাম্মেল হক, সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, খান সাহাবুদ্দিন নাসিম, মাওলানা মোশাররফ, ইউনুস শিকদার, শেখ নুর মোহাম্মদ। অন্যদিকে, মাওলানা সা’দ কান্ধলভিবিরোধী অবস্থানে রয়েছেন মাওলানা যোবায়ের, মাওলানা রবিউল হক, মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন, মাওলানা ওমর ফারুক। তবে এই দুপক্ষের বিরোধে নিজেকে জড়াননি মাওলানা মোহাম্মদ ফারুক।

সূত্র জানায়, গত বছর নভেম্বর মাসে সংকট নিরসনে পাঁচজন কওমি আলেমকে তাবলিগ জামাতের পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করা হয়। তারা হলেন কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রকারী সংস্থা আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের কো-চেয়ারম্যান মাওলানা আশরাফ আলী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম ও গুলশান সেন্ট্রাল (আজাদ) মসজিদের খতিব মাহমুদুল হাসান, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুছ, শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ফরীদ উদ্দিন মাসউদের প্রতিনিধি মুফতি মুহাম্মদ আলী, মারকাজুদ দাওয়াহ বাংলাদেশের আমিনুত তালিম মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কওমি আলেমদের পাঁচ সদস্যের এই উপদেষ্টা কমিটিকে প্রথমে মেনে নিলেও পরবর্তীতে তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের অনুসারীরা। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে তাদের অনাস্থার কথা জানান। গত বছর ২৯ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় কওমি আলেমরা তাবলিগের সংকট নিরসে আলোচনা করেন। মন্ত্রী সংকট নিরসনে তাদের বৈঠক করার পরামর্শ দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে এই উপদেষ্টা কমিটি করা হয়।

তাবলীগ জামাতের কাকরাইল সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে মাওলানা যোবায়েরের অনুসারীরা কাকরাইল মসজিদ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে আসেন কাকরাইল মারকাজে। শুক্রবার সকালে কাকরাইল মারকাজে তাবলিগের শুরা সদস্যদের বৈঠককে কেন্দ্র করে অস্থিরতা দেখা হয়। কয়েক দফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মাওলানা যোবায়েরের অনুসারী ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ হান্নানের নেতৃত্বে মসজিদে দুটি মোবাইল জ্যামার বসানো হয়। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কাকরাইল মসজিদ। পরবর্তীতে পুলিশ এসব জ্যামার খুলে জব্দ করে নিয়ে যায়। শনিবার সকালে মাদ্রাসার ছাত্ররা ফের মারমুখী হয়ে ওঠে। কয়েক দফা হাতাহাতি, দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে দু’পক্ষকে নিয়ে শনিবার দুপুরে কাকরাইল মসজিদে বৈঠকে বসেন রমনা জোনের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়—আগামী ১ মে পর্যন্ত সৈয়দ ওয়াসিফুল ও মাওলানা জুবায়ের কাকরাইলের বাইরে থাকবেন। দুই গ্রুপের দুজন করে মোট চারজনকে সাময়িকভাবে কাকরাইলে আসা-যাওয়া করতে নিষেধ করা হয়। এদের মধ্যে দুজন হলেন সৈয়দ ওয়াসিফুলের অনুসারী আব্দুল্লাহ মনছুর, দৈনিক ভোরের পাতার প্রকাশক ড. এরতেজা হাসান। অন্য দুজন হলেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ হান্নান ও ড. আজগর। শনিবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে ফেরার পর বৈঠকে বসে সংকটের সমাধান করা হবে।

তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে নারাজ দুপক্ষের শীর্ষ মুরব্বিরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৈয়দ ওয়াসিফুলের অনুসারী এক মুরব্বি বলেন, ‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করলেও মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে হামলা করিয়েছে তারা। ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ হান্নান ও ড. আজগর বিভিন্ন মাদ্রাসারা ছাত্রদের দিয়ে কাকরাইল মসজিদ দখলের চেষ্টা করেছিলেন। এই মুহূর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে নেই, তিনি ফিরলে আমরা সমস্যা সমাধানে বৈঠক করবো।’

অন্যদিকে, মাওলানা যোবায়েরের অনুসারী এক মুরব্বি বলেন, ‘বিরোধিতার মুখে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারেননি দিল্লির মাওলানা সা’দ কান্ধলভি। তারপরও একটি পক্ষ তাকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আমরা পুলিশের আহ্বানে বৈঠকে বসেছি। আমরাও চাই একটি সমাধান আসুক।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাকরাইল মসজিদ থেকে দুই গ্রুপকেই বের করে দেওয়া হয়েছে। শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড ও মসজিদের পরিবেশ রক্ষায় তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। দুই গ্রুপকে নিয়ে সমঝোতার জন্য বসবে পুলিশ।’

প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিরোধ চলে আসছিল তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে। বিশ্ব ইজতেমার সময় তাবলিগ জামাতের দিল্লির মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সা’দকে ঘিরে দুপক্ষের মধ্যে সংকট আরও ঘনীভূত হয়। সা’দের বক্তব্য নিয়ে দু’পক্ষ অন্তত চারবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তার মন্ত্রণালয়ে কয়েকবার বৈঠকও করেছেন। এরপরও দু’পক্ষকে সমঝোতায় আনা সম্ভব হয়নি। এর আগেও তাবলিগ জামাতের বিরোধ নিয়ে এই দু’পক্ষের মধ্যে মামলা-পাল্টা মামলা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন:
কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের ৬ মুরব্বির প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

 

/এপিএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
 ‘হেরাফেরি’তে ফিরছেন পরেশ রাওয়াল
 ‘হেরাফেরি’তে ফিরছেন পরেশ রাওয়াল
জুলাই ব্যর্থ হয়েছে এ কথা বলার সময় এখনও আসেনি: আব্দুল্লাহ তাহের
জুলাই ব্যর্থ হয়েছে এ কথা বলার সময় এখনও আসেনি: আব্দুল্লাহ তাহের
ছেলের অনার্স-মাস্টার্স শেষ, এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মা
ছেলের অনার্স-মাস্টার্স শেষ, এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মা
৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ টন সার কেনার সিদ্ধান্ত
৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ টন সার কেনার সিদ্ধান্ত
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট