X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালে কষ্টে আছেন তারা

তাসকিনা ইয়াসমিন
০৪ মে ২০১৮, ২০:০১আপডেট : ০৫ মে ২০১৮, ১৩:১৯

 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাসেল, হৃদয়, রুবিনা ও আয়েশা সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক সড়ক দুর্ঘট্নায় হাত-পা হারানোসহ মারাত্মক আহতদের প্রত্যেকের হাসপাতালের বেডে কাটছে কষ্টকর সময়। সুচিকিৎসা হলেও তাদের কারোর সুযোগ নেই আবার পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাদের এই অঙ্গহানিকে কষ্টকর ও দুঃখজনক বলছেন খোদ চিকিৎসকেরাও।



গত ২৮ জানুয়ারি দুপুরে কমলাপুর রেলস্টেশনে রেল ইঞ্জিনে দুই পা হারারো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার (২২) এবং বাস দুর্ঘটনায় এক হাত হারানো খালিদ হাসান হৃদয় (২০) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বান ইউনিটে ভর্তি আছেন। তাদের দুজনের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আর বিকাশ পরিবহনের দুই বাসের মধ্যে চাপা পড়ে মারাত্মকভাবে আহত আয়েশা খাতুনের (২৫) চিকিৎসা চলছে সিআরপিতে। আরেক দুঘর্টনায় পা হারানো রাসেল ভর্তি আছেন অ্যাপোলে হাসপাতালে।

এ ছাড়া দুই বাসের চাপায় হাত হারানো তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন (২২) গত ১৭ এপ্রিল মারা গেছেন। আর ২৯ এপ্রিল সকালে মারা গেছেন রোজিনা আক্তার (১৮)।

রোজিনার বাবা রসুল মিয়া কাঁদতে কাঁদতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি চাই। আমার এই মেয়ে ছিল আমার সংসারের শক্তি। সে চলে যাওয়ায় আমার সব শেষ হয়ে গেলো। আমি আমার মেয়েকে হারিয়ে কী করে সংসার চালাবো?’

দুর্ঘটনায় পড়ার পর আয়শাকে প্রথমে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি ভর্তি আছেন চলাচলের ক্ষমতা হারিয়ে সাভারের সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) হাসপাতালে।

এ প্রসঙ্গে ল্যাবএইড হাসপাতালের করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার সাইফুর রহমান লেলিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আয়েশার রিহ্যাবিলিটেশন দরকার ছিল, তাই তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছে।’
সিআরপির মেডিক্যাল অফিসার ডা. জান্নাতুল শাপলা মোবাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আয়েশা এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভালো আছেন।’ তিনি বলেন, ‘আয়েশা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন কিনা, এটা সম্পূর্ণ উপরওয়ালার হাতে। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি যেন তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।’

আয়েশার স্বামী তানভীর আহমেদ তাহের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আয়েশার মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ড সম্পূর্ণ ড্যামেজ হয়ে গেছে। তার অবস্থা এখনও ভালো নয়। আমরা ওর জন্য ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগিয়ে নেবো।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তারের কৃত্রিম পা সংযোজনের জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক।
রুবিনা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ভালো আছি। আমার পা লাগিয়ে দেবে বলেছে। আমার এখন ব্যায়াম চলছে, কিন্তু কতদিন পর্যন্ত এই ব্যায়াম করা লাগবে তা বলেনি। এখন নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছি। সামনে আমার পরীক্ষা, তাই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
হৃদয়ের মা-বাবা সন্তানকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে চান। হৃদয়ের মা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দুই মেয়ে, এক ছেলে। আল্লাহ ছেলেটাকে পঙ্গু করে দিলেন! সে যেন কারো উপর নির্ভর না করে থাকতে হয় সেটার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া চাই।’
অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাসেলের সম্পর্কে এপিআর এনার্জি কোম্পানির সিকিউরিটি বিভাগের ক্লোজ প্রোটেকশন অফিসার মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘রাসেলকে এখন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তার পাটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসকেরা লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকরা এটির আশা বাদ দিয়েছেন।’
রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শরিফ আহমেদ। দুর্ঘটনায় পড়ার তিনদিন পর তার জ্ঞান ফিরলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। এসইএল চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের সদস্য ইবনুল সৈয়দ রানা বলেন, ‘এই ছেলেটির অর্থাভাবে চিকিৎসা থেমে যাচ্ছে। তার আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল।’
সড়ক দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি এবং এরপর মর্মান্তিক মৃত্যু প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘রোজিনার সমস্ত শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে গিয়েছিল রক্তের মধ্যে, এটাকে সেপটিসেমিয়া বলে। এই কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। ঠিক একই কারণে নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় আহত শাহীন ব্যাপারীও মারা গেছেন। এ ধরনের ইনজুরিতে এরকম হয় আর কি! কিছু করার থাকে না!’

তিনি বলেন, ‘রোড ট্রাফিক ইনজুরিতে ক্রাশ ইনজুরি হয় তখন হাত বা পা কেটে গেলেই যে রোগী বেঁচে থাকবে, এমনটি হয় না। হাত-পা কেটে গেলেও রোগী বাঁচে সেই ক্ষেত্রে, যখন হাত বার্ন হয়, হাত নষ্ট হয়ে যায়, তখন আমরা অস্ত্রোপচার করে হাতটা কেটে ফেলি। তখন হাতটা কেটে ফেললে রোগী বেঁচে থাকে। এই ধরনের রোগীদের বাঁচানো যায়। কিন্তু যখন রাস্তাঘাটে ক্রাশ ইনজুরি হয়ে যায় তখন রোগীকে বাঁচানো যায় না।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘রাজীব তো মারা গেছে হেড ইনজুরির কারণে। রোজিনাও মারা গেছে। আমাদের অধীনে এখন হৃদয় আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ভর্তি আছে। আয়েশার মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। সে ল্যাবএইডে ভর্তি ছিল। ওকে সিআরপিতে পাঠানো হয়েছে। হৃদয় আর রাজীবের হাতের অবস্থা প্রায় কাছাকাছি।’

তিনি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে রাজীবের মাথায় বড় আঘাত ছিল। তার ব্রেনের সামনের ডানদিকের মেজর পার্ট এবং বামদিকের পার্টে আঘাত ছিল। সেটাই শেষের দিকের তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে ব্রেনটা এমনভাবে ড্যামেজ হয়ে গেল যে ওকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া লাগলো। হাত-পায়ের জন্য রাজীবের মৃত্যু হয়নি।’

অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘হাত-পায়ের জন্য মারা যায় যখন তাৎক্ষণিকভাবে ব্লিডিং হতে থাকে। অথবা বড় ধরনের ইনজুরি থাই ভেঙে গেলে বা কোমড় ভেঙে গেলে। তখন রক্তপাত হতে হতে মারা যায়। রাজীবের যেটা হলো তার হেড ইনজুরির কারণে মৃত্যু হলো। ’ তিনি বলেন, ‘হাত-পা চলে গেলেই মারা যাবে এটা ঠিক নয়। যদি স্পটেই অনেক রক্তপাত হয় এবং এটা পূরণ করা না যায় তাহলে মৃত্যু হয়।’

/টিওয়াই/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা