X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াবার মহামারির আড়ালে চাপা পড়েছে গাঁজার ভয়াবহতা

আমানুর রহমান রনি
০৫ মে ২০১৮, ০৭:৫৮আপডেট : ০৫ মে ২০১৮, ১৪:২৩

ইয়াবার মহামারির আড়ালে চাপা পড়েছে গাঁজার ভয়াবহতা

ইয়াবার মহামারি প্রতিরোধ করতে গিয়ে দেশে অন্যান্য মাদক প্রতিরোধে গুরুত্ব কম পাচ্ছে। কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে আসা গাঁজা স্থলপথে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। এই দুই জেলাকে গাঁজা পাচারের প্রধান রুট হিসেবে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকায় বসে একটি গ্রুপ এই মাদক চোরাচালানের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। তারা সীমান্তে বাসাভাড়া করে মজুতের পর সুবিধাজনক সময়ে গাঁজা ঢাকা ও চট্টগ্রাম হয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাঠায়।

বর্তমানে ইয়াবা মহামারি আকার ধারণ করায় গাঁজার ক্ষতিকারক দিক চাপা পড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এমনকি ইয়াবা প্রতিরোধ করতে গিয়ে গাঁজার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও মনযোগ কম। বাহিনীগুলোর নিজস্ব গোয়েন্দারা ইয়াবার পেছনে ছুটছেন। ইয়াবা ধরতেই তারা বেশি ‘সোর্স মানি’ ব্যয় করছে।

গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে গাঁজা সেবনের সংখ্যা বাড়ছে। মাদকসেবীদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গাঁজা। দেশের পাহাড়ি এলাকা থেকে আসা গাঁজার তুলনায় ভারত থেকে আসা গাঁজার চাহিদা বেশি বলে জানা গেছে। তাই ভারত থেকে গাঁজা আনছে ব্যবসায়ীরা। চোরাই পথে কেবল গাঁজা এনে এরই মধ্যে বেশকিছু মাদক ব্যবসায়ী কোটিপতিও হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে গাঁজা পাচারের কয়েকটি গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে। ওই গ্রুপের অনেকেই গাঁজা পাচার করে কোটিপতি হয়েছে।

এছাড়া ঢাকায়ও একাধিক গ্রুপের সদস্যরা শুধু গাঁজা বেচে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছে। সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় আনা ১০০ কেজি গাজার একটি বড় চালান রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের বিমানবন্দর টিম।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মহররম আলীর নেতৃত্বে এ চালান উদ্ধারের পর গাজার রুট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।

মহরম আলী জানান, গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় একটি বাড়িতে চালানো ওই অভিযানের সময় গ্রেফতার করা হয় মো. আজিজুল হক ওরফে বাবু নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে। এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজিজুলের দেওয়া তথ্যে গাজা আমদানির রুট এবং এর সঙ্গে জড়িত একাধিক গ্রুপ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

গত ৪ মাসে ৩টি চালানের মোট ১২০ কেজি গাজা উদ্ধার করেছেন ডিবি বিমানবন্দর জোনাল টিমের সদস্যরা। এর মধ্যে গত ২৪ এপ্রিল উদ্ধার করা গাঁজার চালানটি সবচেয়ে বড়। মূলত এ চালান এনেছে ডেমরা এলাকার গাঁজা ব্যবসায়ী হুমায়ন। সে এই মুহূর্তে ঢাকার সবচেয়ে বড় গাঁজা ব্যবসায়ী। তার নেতৃত্বে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কয়েকটি সীমান্ত রুট দিয়ে গাঁজা আমদানি হয়। হুমায়নের সঙ্গে কাজ করে ওই দুই জেলার সীমান্তকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসায়ীরা। হুমায়নের সঙ্গে জাকির হোসেন ও ডালিম নামে আরও দুজন রয়েছে। এদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কৌশলে গাঁজা আমদানি করে। পরে থার্ড পার্টির (তৃতীয় গ্রুপ) মাধ্যমে আমদানি করা গাঁজা মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল অঞ্চল এবং সাভার এলাকায় পাচার করা হয়।

ডিবির অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্ত দিয়ে গাঁজা আমদানিতে সহযোগিতা করে কসবার বকুল, কুমিল্লার মোনস ও ফারুক। প্রাথমিকভাবে এ তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। এ তিনজন ছাড়াও কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় একাধিক গ্রুপ রয়েছে, যারা সীমান্ত দিয়ে গাঁজা আমদানি করে ঢাকার সিন্ডিকেটের কাছে সরবরাহ করে। ঢাকার সিন্ডিকেটই মূলত সীমান্তকেন্দ্রীক সিন্ডিকেটের সঙ্গে চুক্তি করে। একেক সময় একেক পরিমাপের চালান এনে তা আবার দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা হয় খুচরা পর্যায়ে গাঁজা বিক্রেতাদের কাছে।

গত ৩০ এপ্রিল ১২৫ কোজি গাজাসহ রুবেল ও কবির হোসেন নামে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে ডিবির পশ্চিম বিভাগ। ওই দুই মাদক ব্যবসায়ী তাদের গাজার চালানও কুমিল্লা থেকে নিয়ে এসেছিল অ্যাম্বুলেন্সে করে। অ্যাম্বুলেন্সে করে আনা এ চালানটি ঢাকা হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে কয়েকজনের হাত-পা বিচ্ছিন্ন করার নেপথ্যে আছে গাঁজায় নেশার আসক্তি। গাড়ি চালকেরা গাঁজার নেশা করা অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা, আখাউড়া, বিজয়নগর, কুমিল্লার দেবিদ্বার, কুমিল্লা সদর অন্যতম রুট গাজা আমাদানির। ভারতীয় সীমান্ত পার করে রাতের অন্ধকারে অধিকাংশ চালান বাংলাদেশে ঢোকে। বাংলাদেশে ঢোকার পর সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন ভাড়া করা বাসায় চালান রাখা হয়। ঢাকার পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্রেন, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস চালকদের সঙ্গে চুক্তি করে গাঁজা ঢাকায় আনা হয়।

জানা গেছে, কুমিল্লা বা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে একটি চালান আনতে ড্রাইভাররা ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নেন। কুমিল্লা থেকে চালান আনার সময় দুই ভাগে বিভক্ত থাকে গাঁজা ব্যবসায়ীরা। মূল ব্যবসায়ীরা যে গাড়িতে থাকে সে গাড়িতে কোনও চালান থাকে না। মূল চালান থাকে পেছনের গাড়িতে। সামনে থাকা গাড়ি যদি রাস্তায় পুলিশের চেকপোস্ট দেখে তাহলে পেছনে চালনভর্তি গাড়িকে সতর্ক করে দেয়।

ডিবির সদস্যরা জানিয়েছেন, গত এক বছরে যতগুলো গাঁজার চালান ধরা পড়েছে সবগুলো কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলার সীমানা দিয়ে ভারত থেকে এসেছে। এসব চালানের সঙ্গে যারা ধরা পড়েছে তাদের অধিকাংশই ডেমরার হুমায়নের গ্রুপের সদস্য। হুমায়নকে গ্রেফতার করার জন্য এরই মধ্যে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু ধূর্ত হুমায়ন প্রতিবারই পালিয়ে গেছে।

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ