মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষাতেও উপকেন্দ্র থাকছে না। শুধু মূল কেন্দ্রেই পরীক্ষা নেওয়া হবে। রাজধানীতে গত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উপকেন্দ্রে অব্যবস্থা ও অনিয়মের কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আগামী নভেম্বরে শুরু হতে যাওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় উপকেন্দ্র না রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি এড়াতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় উপকেন্দ্র বাদ দেওয়া হয়েছে আগে থেকেই। আর সারাদেশের সব শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত ২০১৯ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মূল কেন্দ্রের বাইরে কোনও উপকেন্দ্র না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভাড়া করা ভবনে পরীক্ষা নীতিমালা না মেনেই রাজধানীর ট্রাস্ট কলেজে প্রশ্নফাঁসের ঝুঁকির মধ্যেই এবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই অভিযোগের পর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক নিজে ট্রাস্ট কলেজসহ উত্তরার আরও একটি কলেজ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনের পর অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, পরীক্ষার্থীদের অ্যাকোমোডেশন করতে না পারায় অব্যবস্থার মধ্য দিয়েই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে ট্রাস্ট কলেজ ও উত্তরার একটি কলেজে। উপায় না থাকায় ভাড়া করা ভবনে পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে ভবিষ্যতে এরকম অবস্থা যাতে সৃষ্টি না হয় সে ব্যবস্থা নেবো।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কঠোর এই অবস্থানের পরও রাজধানীর দু-একটি কলেজের অধ্যক্ষরা এইচএসসি পরীক্ষায় উপকেন্দ্র রাখার তদবির শুরু করেছেন। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এবার শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী নভেম্বরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে গত মঙ্গলবার (৮ মে) ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা শিক্ষাবোর্ডে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপ-কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় কোনও উপকেন্দ্র না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি ২০১৯ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উপকেন্দ্র না রাখার সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।
বৈঠকের পর আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মূল কেন্দ্রের বাইরে কোনও উপকেন্দ্র রাখবো না। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র থাকলে তা বাদ দেবো। প্রয়োজনে কেন্দ্র কমিয়ে আনার চেষ্টা করবো।’
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তারেক বিন আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী পরীক্ষায় আমরা কোনও ভেন্যু কেন্দ্র (উপকেন্দ্র) রাখবো না। যদি কোনও কেন্দ্রে বেশি পরীক্ষার্থী থাকে, সে ক্ষেত্রে ওই কেন্দ্র ভেঙে আরও কেন্দ্র করা হবে। কিন্তু উপকেন্দ্র রাখা যাবে না।’
দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু বকর সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কোনও উপকেন্দ্র থাকবে না। উপকেন্দ্র থাকলে প্যাকেট খুলে প্রশ্নপত্র ভেন্যু কেন্দ্রে পাঠাতে হয়। এতে প্রশ্নফাঁসের ঝুঁকি থাকে।’
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কোনও ভেন্যু কেন্দ্র থাকবে না। আগে সাতটি কেন্দ্র ছিল, তা বাতিল করেছি। জেএসসি-জেডিসি থেকে এইসএসসি কোনও পরীক্ষাতেই ভেন্যু কেন্দ্র (উপকেন্দ্র) থাকবে না।’
গত এসএসসি ও সমানের পরীক্ষা দেশের ৩ হাজার ৪১২টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২ হাজার ৪৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই দুই পরীক্ষাতেই রাজধানীতে মূল কেন্দ্রের বাইরে উপকেন্দ্র ব্যবহার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শিক্ষা বোর্ড মূল কেন্দ্র অনুমোদন দিলেও উপকেন্দ্র অনুমোদন দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে, ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য ঢাকা শিক্ষাবোর্ড কেন্দ্র সচিবদের কাছে মানসম্মত পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রের তথ্য জানতে চেয়েছে। কেন্দ্র-স্কুলের নিজস্ব ভবন ও বাউন্ডারি আছে কিনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আছে কিনা, কেন্দ্র-স্কুলের নিয়মিত শিক্ষকের সংখ্যা কত, কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা কত, মূল কেন্দ্রের পরীক্ষা কক্ষের সংখ্যা কত, বেঞ্চের সাইজ ৫ থেকে ৬ ফুট কিনা, বেঞ্চ সংখ্যা কত, মূল কেন্দ্রের অধীনে উপ-কেন্দ্র কত, তা জানতে চেয়েছে শিক্ষা বোর্ড। অন্যান্য শিক্ষাবোর্ড একইভাবে কেন্দ্র সচিবদের কাছে প্রতিটি কেন্দ্রের তথ্য জানতে চেয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে কিনা, ফটোকপি মেশিন আছে কিনা, কেন্দ্র থেকে জেলা ও উপজেলা সদরের দূরত্ব, ইন্টারনেট সংযোগ ও জেনারেটর আছে কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৮টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড ছাড়াও কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এসএসসি সমমান ও এইচএসসি সমমানের পরীক্ষা হয়।