পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতার মানেই যেন চকবাজারের লোভনীয় খাবারের আয়োজন। দিনদিন বেড়েই চলছে এর কদর। এই বাজারের ইফতারের বাহারি নাম আর লোভনীয় স্বাদের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না। তাই রমজানের প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত জমজমাট থাকে এখানকার ইফতারি আয়োজন।
মূলত চকবাজারের শাহি মসজিদকে কেন্দ্র করে এর আশপাশেই বসে ইফতারির দোকানগুলো। ফুটপাত থেকে শুরু করে সড়কের মাঝপথেও রয়েছে সারি সারি দোকান। সব মিলে এখানে পাঁচ শতাধিকের বেশি ইফতারের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে রমজানের প্রথম দিন শুক্রবার (১৮ মে) দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় জমজমাট বেচাকেনা। বৃষ্টিভেজা ও কাদামাটির সড়ক উপেক্ষা করে রোজাদাররা ইফতারি সংগ্রহ করতে আসেন এখানে। বিক্রেতারাও বাহারি ইফতারের পসরা সাজিয়েছেন। হাঁক-ডাক দিয়েই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তারা।
চকবাজারের নামকরা ইফতারের আইটেম হলো- ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। বুট, মুরগি, ডিম, গিলা, কলিজা, কিমা, মগজ, ঘি, চিড়াসহ প্রায় ২০ রকমের আইটেম দিয়ে এই ইফতার দোকানটি সাজানো হয়েছে। এই দোকানে প্রতিকেজি ইফতারি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা দামে।
এখানকার বাহারি ইফতারের মধ্যে রয়েছে—শিকের সঙ্গে জড়ানো সুতি কাবাব, জালি কাবাব, শাকপুলি, টিকা কাবাব, আস্ত মুরগির কাবাব, মোরগ মসল্লম, বটি কাবাব, কোফতা, চিকেন কাঠি, শামি কাবাব, শিকের ভারী কাবাব, ডিম চপ, কাচ্চি, তেহারি, মোরগ পোলাও, কবুতর ও কোয়েলের রোস্ট, খাসির রানের রোস্ট, দই-বড়া, মোল্লার হালিম, নুরানি লাচ্ছি, পনির, বিভিন্ন ধরনের কাটলেট, পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং, ছানামাঠা, কিমা পরোটা, ছোলা, মুড়ি, ঘুগনি, বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, আধা কেজি থেকে পাঁচ কেজি ওজনের জাম্বো সাইজ শাহি জিলাপিসহ নানা পদের খাবার।
হরেক রকমের ইফতারি নিয়ে ‘চকবাজার শাহী ইফতারি’ দোকান সাজিয়েছেন মো. সেলিম বাবুর্চি। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চকবাজার ইফতারিরর জন্য ঐতিহ্যবাহী। এখানে ইফতারির সব আইটেম রয়েছে। প্যাকেজগুলোও অতো বেশি না। ক্রেতাদের নাগালে রয়েছেন।’
তিনি আরও জানান, ‘ক্রেতাদের দিয়েও শেষ করতে পারছি না। লোকজন দাঁড়িয়ে থাকে। মানুষের চাহিদাও অনেক।’
দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- চক বাজারের ঐতিহ্যবাহী এই আইটেমগুলোর মধ্যে সুতি কাবাব প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা। কোয়েলের রোস্ট ৬০ থেকে ৭০ টাকা প্রতি পিস। আস্ত মুরগির রোস্ট ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পিস ও খাসির রানের রোস্ট ৬০০ টাকা। আরও অন্যান্য আইটেমের মধ্যে মুঠি কাবাবের পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ডিম চপ ১৫ থেকে ২০ টাকা, সমুচা পাঁচ থেকে আট টাকা, আলুর চপ পাঁচ থেকে আট টাকা, সাসলিক পিস ৩০ থেকে হয়েছে ৫০ টাকা, গরুর সুতি কাবাব ৬০০ টাকা, বটি কাবাব ফুল ১৪০ টাকা, কাশ্মীরি শরবত ২০০ টাকা, দুধের শরবতের লিটার ২৪০ টাকা, বোরহানির লিটার ১২০-১৩০ টাকা, চিকেন স্টিক পিস ৭০ টাকা, রেশমি জিলাপি ৩০০ টাকা, শাহি হালিম বড় হাঁড়ি ৩৫০-৩৬০ টাকা, ছোট হাঁড়ি ১৫০-১৬০ টাকা, শাহি জিলাপি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। দইবড়া কেজিপ্রতি ১৬০ টাকা, চিকেন নাগেট ৫০ টাকা, কিমা পরোটা ৩০ টাকা, টানা পরোটা ২০ টাকা।
এদিকে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চকবাজারের ইফতারির দোকানগুলো পরিদর্শনে করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এসময়, ইফতারিতে ভেজাল থাকলে জেল জরিমানার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।