তিন মামলায় যেসব যুক্তিতে জামিন চাইলেন খালেদা জিয়া

কুমিল্লা ও নড়াইলের তিনটি মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পৃথক ওই তিন মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি দেখানো হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ রানা।
এর মধ্যে হত্যা ও অগ্নি সংযোগের অভিযোগে কুমিল্লায় দুইটি ও মানহানির অভিযোগে নড়াইলের একটি মামলা রয়েছে।  

অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে কুমিল্লায় এক মামলা: ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হায়দার পুলের চৌদ্দগ্রামে একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। খালেদা জিয়াসহ ৩২জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়।
মামলাটি বর্তমানে কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলমান। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেয় আদালত। পরে গত ২৩ এপ্রিল এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত আবেদনটির পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৭ জুন দিন ধার্য রাখেন। কিন্তু এ অবস্থায় শুনানি না করে এই মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করা হয়েছে।

গ্রাউন্ড: এ মামলায় হাইকোর্টে আবেদন করে সেখানে প্রায় ১৩টি গ্রাউন্ড দেখিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এসব গ্রাউন্ডে বলা হয়েছে, মামলার এফআইআর-এ খালেদা জিয়ার নাম নেই, ঘটনাস্থলেও তিনি ছিলেন না, তিনি অসুস্থ, অন্য মামলায় জামিনে আছেন, তিনি বয়স্ক, এ মামলায় তার বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, হয়রানি করার করার উদ্দেশ্যে এই মামলা করা হয়েছে, এ মামলার অন্য আসামিরা জামিনে আছেন প্রভৃতি।

হত্যার অভিযোগে কুমিল্লায় আরেক মামলা: ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই ঘটনায় ৭ জন যাত্রী মারা যান এবং আরও ২৫/২৬ জন গুরুতর অসুস্থ হয়। এ ঘটনায় পরদিন (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩ টায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান ৫৬ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বিচারকালে দায়রা আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। সেই জামিন আবেদনের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৭ জুন দিন ধার্য রাখা হয়েছে। কিন্তু  গত ৫ এপ্রিল এ মামলায় খালেদা জিয়াকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। তাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

গ্রাউন্ড: এই মামলার ৩ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু তাদের কেউ জবানবন্দিতে খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করেননি। এছাড়াও খালেদা জিয়া অসুস্থ, বয়স্ক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় হাইকোর্টে তার জামিন চেয়ে যুক্ত দেখিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

মানহানির অভিযোগে নড়াইলে পৃথক মামলা:
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগ এনে ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নড়াইলে মানহানির মামলা করা হয়। স্থানীয় এক  মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রায়হান ফারুকি ইমাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। নড়াইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলায় এ বছরের ১৬ এপ্রিল খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে তার আইনজীবীরা আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক বাদীর উপস্থিতিতে জামিন শুনানির জন্য গত ৮ এপ্রিল শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছিলেন। এরপর নির্ধারিত দিনে শুনানি নিয়ে পুনরায় জামিন শুনানির জন্য আগামী ২৫ মে দিন ধার্য রেখেছেন আদালত। এ অবস্থায় চলমান মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।

গ্রাউন্ড: পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) ৫০০, ৫০১ ও ৫০২ এর অধীনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। কিন্তু এই তিন ধারার মামলা জামিনযোগ্য। তাছাড়াও খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বয়স্ক। তাই এসব যুক্তিতে এ মামলায় জামিন চেয়েছেন তার আইনজীবীরা।