X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক ব্যবসায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তে ধীরগতি

রাফসান জানি
২৩ মে ২০১৮, ২৩:০০আপডেট : ২৪ মে ২০১৮, ১৭:১৪

 

মাদক ব্যবসায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তে ধীরগতি মাদকের মহামারী সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও ভেতরেও ছড়িয়ে পড়েছে।তাদের বিরুদ্ধেও মাদক সেবন, ব্যবসা ও সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। অতীতে মাদকসহ নিজ বাহিনীর হাতেই অনেক পুলিশ সদস্য আটক-গ্রেফতার হয়েছেন। গত একবছরে এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলার অধিকাংশেরও বেশি ঘটনায় তদন্ত চলছে। এখনও বিচার শুরু হয়নি।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত একবছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকসহ পুলিশ সদস্য গ্রেফতারের ঘটনা অন্তত দশটি। এরমধ্যে ছয়টির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেগুলোর তদন্ত এখনও চলছে। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। করেছে নিজস্ব তদন্তও। জড়িতদের আনা হয়েছে বিভাগীয় শাস্তির আওতায়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কারও নিশ্চিত না হলেও অভিযুক্তদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।  

পুলিশ সদর দফতর দাবি করেছে, পুলিশ বাহিনীর কোনও সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় বাংলাদেশ পুলিশ নেবে না। যাদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা ও তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে গত মার্চ মাসে মুগদা থানার ‍উপ-পরিদর্শক (এসআই)সহ সাত পুলিশ সদস্যকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে ডিএমপি। তারা হলেন—মুগদা থানার এসআই মিজানুর রহমান, এএসআই আবদুল ওয়াদুদ, এএসআই মো. সেলিম হোসেন, এএসআই জয়নুল আবেদীন, এএসআই নুরুল আমিন, এএসআই মো. আক্তারুজ্জামান ও এএসআই খালেদুর রহমান।

ঘটনা তদন্তে ডিএমপি সদর দফতর একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। মাদক ব্যবসায় প্রশ্রয় দেওয়া ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার সত্যতা পেয়েছে কমিটি।

কমিটির প্রধান ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি। মাদকের বিষয়ে আমরা কাউকে ছাড় দেই না। তদন্তে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি থানার ইনচার্জ হয়েও বিষয়টি কেন জানলেন না? এছাড়া অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছি।’

গত ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জে ৫০ হাজার ইয়াবাসহ সদর মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সোহরাওয়ার্দী রুবেলকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। আটকের সময় তার ব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার ও বন্দরের রূপালী আবাসিক এলাকায় তার ভাড়া বাসা থেকে ৪৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাকে ইয়াবাসহ আটক করেছিলাম। সেটার তদন্ত চলছে। সে আগে থেকেই মাদক গ্রহণ করতো।’

এদিকে, মাদক ব্যবসার সঙ্গে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে কখনও কখনও। এ বছরের ২৪ এপ্রিল কুমিল্লায় ইয়াবাসহ আটক হওয়ার পর জেলহাজতে আছেন রাঙ্গামাটি জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের এসআই নাসির উদ্দিন। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় চার হাজার পিস ইয়াবা। এ ঘটনায় কুমিল্লার চান্দিনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামসুল ইসলাম। এই মামলাটিরও তদন্ত চলছে।

চান্দিনার স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চান্দিনার দোতলা গ্রামের নূরু মিয়ার ছেলে নাছির উদ্দিন ২০০৬ সালে কনস্টেবল পদে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ২০১৪ সালে তিনি সহকারী উপ-পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। তারপর থেকেই তার অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটতে থাকে। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ২টি গাড়ি, নতুন বাড়ি ও অনেক জমি-জমা কেনেন।

ইয়াবাসহ দুইবার আটক হওয়ার পর সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল তৃতীয়বার আটক হয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বরখাস্তকৃত কনস্টেবল সুমন হালদার। ঘটনার দিন বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের হাজতি সজল গাজীর কাছে খারাবের ভেতর ২০ পিস ইয়াবা রেখে পাচারের সময় সাদিয়া আক্তার নামে এক নারীকে আটক করা হয়। এরপরে কোতোয়ালী থানায় জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী জানায়, বরখাস্তকৃত পুলিশ কনস্টেবল সুমন হালদার তাকে কারাগারে সরবরাহ করার জন্য ইয়াবা দিয়েছিল। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোতোয়ালী মডেল থানার পুলিশ নগরীর নিউ সার্কুলার রোডে কনস্টেবল সুমনের বাসায় অভিযান চালিয়ে বরখাস্তকৃত কনস্টেবল সুমনকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালী মডেল থানার সহকারী কমিশনার শাহনাজ পারভীন। তিনি বলেন, ‘সুমনের বিরুদ্ধে পুলিশের বিভাগীয় ও ফৌজদারি আইনে মামলা বিচারাধীন রয়েছে।’

নড়াইলের নড়াগাতি থানার বায়সোনা থেকে গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ৩৪০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানাকে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজে, তার ভগ্নিপতি বাবু ও স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে নড়াগাতি এলাকায় মাদকের ব্যবসা করে আসছিলেন।

নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলায়েত হোসেন জানান, ‘সোহেল রানা ঢাকায় রিজার্ভ পুলিশ (আরআরএফ) হিসেবে কর্মরত ছিল। বর্তমানে সে সাসপেন্ড আছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটিও তদন্ত চলছে।’

মাদকের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সহেলী ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত থাকে, তারাই যদি মাদক গ্রহণ করে বা মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, তাহলে জনগণ তার কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাবে না। এটা গুরুতর অপরাধ।’ তিনি বলেন,  ‘এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কোনও ব্যক্তির দায় পুরো পুলিশ বাহিনী নেবে না। মাদকের ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স অবস্থান রয়েছে। সেটা সবার জন্য।’

 

/এআরআর/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন