বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলেও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন। দিনব্যাপী ভোটগণনা শেষে শনিবার (২৬ মে) রাতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নিজস্ব কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পদাধিকার বলে বার কাউন্সিল নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার ও চেয়ারম্যান মাহবুবে আলম আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফল অনুসারে সারাদেশের আইনজীবীদের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনের ভরাডুবি হয়েছে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের নীল প্যানেলের। সংখ্যাগরিষ্ঠতা রেখে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বার কাউন্সিলের কর্তৃক থাকছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের আইনজীবীদের হাতে।
গত ১৪ মে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনে ভোট নেওয়া হয়। সারাদেশের ৭৮টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ শেষে রাতেই আলাদা করে কেন্দ্রগুলোতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সেই তথ্য অনুসারে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, নির্বাচিত ১৪টি পদের মধ্যে ১২টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি মাত্র ২টি পদে জয়লাভ করেছে।
তবে বার কাউন্সিলের নিয়ম অনুসারে অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধীকার বলে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার সকাল ১০টা ৩০মিনিট থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নির্বাচনের প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা শুরু করেন। এরপর নামাজ ও ইফতারের জন্য কয়েক দফা বিরতি দিয়ে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে এ গণনা শেষ হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাটর্নি জেনারেল প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট উল্লেখসহ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন।
সাধারণ আসনের ৭টি পদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থীত সাদা প্যানেলের আইনজীবীরা ৬টি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার পেয়েছেন সর্বোচ্চ ভোট। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১৬ হাজার ৩০৬। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৬৪টি। ১৪ হাজার ৪৯৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছেন মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট এইচএএম জহিরুল ইসলাম খান (জেড আই খান পান্না)।
১৪ হাজার ১৮৪টি ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান। ১৪ হাজার ৯৮টি ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং ১৩ হাজার ২৮৮ ভোট পেয়ে সপ্তম হয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বাদল।
বিএনপি সমর্থীত নীল প্যানেল থেকে ১৩ হাজার ৭১২ ভোট পেয়ে ষষ্ঠ হয়েছেন আবদুল জামিল মোহাম্মদ আলী (এজে মোহাম্মদ আলী)।
এ ছাড়া ৭টি আঞ্চলিক আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের গ্রুপ 'এ' (বৃহত্তর ঢাকা জেলার সব আইনজীবী সমিতি) থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু (৫,১৭৫), গ্রুপ ‘বি'তে (ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতি) কবির উদ্দিন ভুইয়া (১,৫৬৫), গ্রুপ ‘ডি'তে (কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি) এএফএম রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু (১,৬১৬), গ্রুপ ‘ই'তে (খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি) পারভেজ আলম খান (১,৮৫৮), গ্রুপ ‘এফ’-এ (রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি) মো. ইয়াহিয়া (১,৪৬৭) এবং গ্রুপ ‘জি'তে (দিনাজপুর, রংপুর,বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতি) রেজাউল করিম মন্টু (১,৪৬৩) নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে, গ্রুপ ‘সি'তে (চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতি) নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থীত নীল প্যানেলের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী (১,৯৩০)।
বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ অনুসারে প্রতি তিন বছরে একবার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন হয়। বার কাউন্সিল মূলত ১৫ সদস্যের কমিটির দিয়ে পরিচালিত হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ১৪ জন সদস্য নির্বাচিত হয়ে বার কাউন্সিল পরিচালনার দায়িত্ব পান। ১৪টি পদের মধ্যে আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে ৭ জন এবং আঞ্চলিকভাবে (গ্রুপ আসনে) ৭ জন আইনজীবী বার কাউন্সিল পরিচালনার জন্য সদস্য নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সরকার সমর্থকরা জয় পান ১১টি পদে। বাকি ৩ পদে জয় পেয়েছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থক প্রার্থীরা।
