X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

হাজতিকে ঈদের খাবার দিতে ৫০ টাকা ঘুষ!

আমানুর রহমান রনি
১৭ জুন ২০১৮, ০০:২০আপডেট : ১৭ জুন ২০১৮, ১৮:০১

শিল্পী বেগম রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় এক হাজতিকে ঈদের বিশেষ খাবার দিতে ৫০ টাকা ঘুষ দিলেন তার স্ত্রী। নিজেকে শিল্পী বেগম (২৮) পরিচয় দিয়েছেন তিনি। ওই সময় তার সঙ্গে সাত বছরের ছেলে সোলায়মান মিয়াও ছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিল্পী বেগম মোহাম্মদপুর থানার ডিউটি অফিসারের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্ট করছিলেন। এ সময় একজন পুলিশ কনস্টেবল তাকে কাপড়ের পোটলায় মোড়ানো থালাবাটি দিয়ে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে দেন।  এ নিয়ে মনমরা হয়ে যান তিনি।

সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, দরজার ওপাশে ডিউটি অফিসারের কক্ষের বাঁ-পাশেই থানার হাজতখানা। সেখানে কয়েকজন হাজতি আছেন। তবে ডিউটি অফিসারের সামনের দরজা দিয়ে হাজতখানার সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায় না। হাজতের গ্রিলের সামনে এসে কেউ দাঁড়ালে একটু চোখে পড়ে তাকে।

হাজতে একজন পুলিশ কনস্টেবলকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। সেখানে ছয় হাজতি আছেন। তাদের মধ্যে শিল্পী বেগমের স্বামী ইমরান মিয়াও (৩৫) আছেন। স্বামীকে ঈদের বিশেষ খাবার দিতেই শনিবার (১৬ জুন) ঈদের দিন দুপুর ১২টার দিকে মোহাম্মদপুর থানায় আসা তার। থানার মূল ফটকে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক।

শিল্পী বেগমকে দেখে খুব বিমর্ষ লাগছিল। থানার সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তিনি ব্যাখা করেন কেন ঈদের দিন থানায় এসেছেন। তিনি বলেন ‘আমার স্বামী ইমরান মিয়া সিএনজি অটোরিকশা চালক। গত ১২ জুন রাতে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন সাদেক খান কাঁচাবাজার এলাকা থেকে র‌্যাব-২ সদস্যরা তাকে আটক করে। তিনি তখন বাসায় ফিরছিলেন। অটোরিকশাসহ আমার স্বামীকে বসিলা র‌্যাব-২ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে খবর পেলেও টাকা না থাকায় র‌্যাব ক্যাম্পে যেতে পারিনি। পরদিন (১৩ জুন) ইমরানসহ ১১ জনকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করে র‌্যাব। তাদের বিরুদ্ধে চুরির মামলা দেওয়া হয়।’

তবে মোহাম্মদপুর থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে— ১১ জন নয়, র‌্যাব ২-এর নায়েক সুবেদার আবু আক্কাস বাদী হয়ে ইমরানসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর ৭৮। তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগ আনা হয়। আটক ব্যক্তিদের র‌্যাব ১৩ জুন থানায় সোপর্দ করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় ১৪ জুন। বর্তমানে অভিযুক্তরা একদিন করে রিমান্ডে আছেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম। ১৫ জুন আসামিদের একদিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়।

শিল্পী বেগমের বলেন, ‘আমরা খুবই গরিব। আমার স্বামী অটোরিকশা চালিয়ে যা আয় করে তা দিয়ে সংসার চলে। ওইদিন রাতে সে বাসায় ফেরার সময় র‌্যাব তাকে আটক করে। বলেছিল ছেড়ে দেবে। কিন্তু ছাড়েনি। তার কাছে কিছুই পায়নি। আমি বাসায় থাকি। টাকা পয়সা নাই। মামলা চালানোর জন্য কোনও উকিলও ধরতে পারিনি।’

গত ১৫ জুন মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের এক সদস্যকে ৫০ টাকা দিয়ে স্বামীর কাছে খাবার পৌঁছানোর সুযোগ পেয়েছেন শিল্পী বেগম। শুক্রবার (১৬ জুন) ঈদের দিন সকালে সেমাই, মুরগি ও পোলাও রান্না করে নিয়ে আসেন তিনি। তবে  খাবার দিতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তার অভিযোগ, হাজতখানার নিরাপত্তায় দায়িত্বরত কনস্টেবল (সেন্ট্রি) তার কাছে টাকা চেয়েছেন। শিল্পী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৫০ টাকা সেন্ট্রিকে দিয়ে তারপর খাবার দিয়েছি। টাকা ছাড়া খাবার দেওয়া যায় না।’

ইমরানের সঙ্গে ১২ বছর আগে বিয়ে হয় শিল্পী বেগমের। তাদের দুই ছেলে। বড় ছেলে রাকিব মিয়া (১১) ও ছোট ছেলে সোলায়মান মিয়া (৭)। রাকিব নানাবাড়িতে থাকে। ছোট ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ইমরান মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে ভাড়াবাসায় থাকেন। স্বামীকে খাবার দিয়ে থানা থেকে হেঁটেই বাসায় যাচ্ছিলেন শিল্পী। কারণ রিকশা বা অন্য কোনও যানবাহনে চড়ার মতো টাকা তার কাছে নেই। স্বজনরা ঈদে যে সাহায্য করেছেন তা দিয়ে চাল-ডাল কিনে ছোট ছেলেকে নিয়ে কোনোরকমে চলছেন তিনি।

আইনিভাবে থানা হেফাজতে থাকা আসামিদের বাইরের খাবার দেওয়া নিষেধ। তবুও কেউ এমন কাজ করে থাকলে সেই দায়িত্ব ওই পুলিশ সদস্যকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জামাল উদ্দীন। ঘুষের বিনিময়ে হাজতিদের খাবার দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও হাজতিকে বাইরে থেকে খাবার দেওয়ার অনুমতি নেই। থানাই তাদের খাবারের ব্যবস্থা করবে। প্রতি হাজতির জন্য তিন বেলায় ৭৫ টাকা করে সরকারি বরাদ্দ রয়েছে। ঈদেও এই বরাদ্দ থাকে।’

ঈদের দিনে কি হাজতিদের জন্য থানায় বিশেষ খাবার বরাদ্দ থাকে? জানতে চাইলে ওসি মীর জামাল উদ্দীন বলেন, ‘না। বিশেষ বা বাড়তি কিছু বরাদ্দ থাকে না। তবে আমরা থানায় যা খেয়েছি, তাদেরও তাই খেতে দিয়েছি।’

তবে ইমরানের স্ত্রী শিল্পী বেগমের অভিযোগ, ঈদের দিন থানা থেকে হাজতিদেরকে কোনও খাবার দেওয়া হয়নি। এর আগেও দেওয়া হয়নি। প্রতিদিন বাসার খাবার পেয়েই খেতে পেরেছেন তার স্বামী।

এদিকে ঈদের দিন সকালে আদাবর থানায় গিয়ে দেখা যায়, হাজতে কোনও আসামি নেই। থানার প্রবেশপথে একজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করছেন। ডিউটি অফিসারের কক্ষে বৈদ্যুতিক সংযোগে গোলযোগ থাকায় সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা কেউ বসছেন না। তারা বসেছিলেন তৃতীয় তলায়। ডিউটি অফিসারের কক্ষে একজন ফোন অপারেটর দাঁড়িয়ে ছিলেন। আদাবর থানায় এই প্রতিবেদক ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করলেও কাউকে আইনি সেবা নিতে দেখা যায়নি।
* শিল্পী বেগমের বয়ানে হাজতিকে খাবার দিতে ঘুষ দেওয়ার বর্ণনা:

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক