X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রদল নেতা ইসহাক সরকারের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা নিয়ে পুলিশ যা বলছে

নুরুজ্জামান লাবু ও আদিত্য রিমন
১১ জুলাই ২০১৮, ০৩:১৩আপডেট : ১১ জুলাই ২০১৮, ০৩:১৬






ইসহাক আলী সরকার শতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। মামলা আছে প্রায় ১৭০টির মতো। তার নাম ইসহাক আলী সরকার। বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি। ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি। পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ছিলেন তিনি। ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী সময়গুলোতে আগুন সন্ত্রাস ও বোমাবাজি এবং গাড়ি ভাঙচুরের নেপথ্য মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত। তাকে ধরতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অন্তত ছয়টি দল বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু তাকে ধরা যায়নি। শেষ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পল্লবী জোনাল টিম মঙ্গলবার (১০ জুলাই) সকালে তাকে বনানী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। শাহবাগ থানার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গোয়েন্দা পুলিশের পল্লবী জোনাল টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইসহাক আলী সরকারের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। তাকে ধরতে আমরা অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিলাম। অবশেষে মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে আনা হয়েছে। বিভিন্ন নাশকতা মামলার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইসহাক আলী সরকার পুরান ঢাকার বাসিন্দা। বংশালের হাজি আবদুল্লাহ সরকার লেনে তার বাসা। বাবার নাম আবদুর রউফ ওরফে মন্টু। পারিবারিকভাবেই তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পুরান ঢাকার মরহুম বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর হাত ধরে রাজনীতিতে আসা ইসহাক একসময় কোতয়ালী থানা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। ২০১৩ সালে বিএনপির সহিংস আন্দোলনের সময় আলোচনায় আসেন তিনি। ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের যত আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে, সেসব কর্মসূচিতে তিনি বিস্ফোরকসহ হাত বোমা ও ককটেল সরবরাহ করতেন। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বোমাবাজি থেকে শুরু করে গাড়িতে আগুন এবং পুলিশের ওপর হামলাসহ সবকিছুতেই নাম আসে ইসহাকের।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালে শাহবাগে গাড়িতে আগুন দিয়ে ১৯ জনকে হত্যা মামলায় নাম আসে ইসহাকের। এরপর একে একে লালবাগ, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, গুলিস্তান, পল্টন ও মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন নাশকতাতেও তার নাম আসে। ঢাকার দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় সব থানাতেই ইসহাকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। বেশিরভাগ মামলার বাদী হলো পুলিশ। এছাড়া গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতগ্রিস্ত লোকজন বাদী হয়েও যেসব মামলা দায়েল করেছে তাতে ইসহাককে আসামি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর শাহবাগ থানায় ইসহাকের বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা রয়েছে। এছাড়া বংশাল থানায় রয়েছে ২৯টি, কোতয়ালী থানায় ১২টি, পল্টন থানায় ২৭টি মামলাসহ লালবাগ, মতিঝিল, শাজাহানপুর, বনানী, গুলশান, মোহাম্মদপুর থানাতেও এক বা একাধিক মামলা রয়েছে ইসহাকের বিরুদ্ধে।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ইসহাকের স্থায়ী ঠিকানা বংশাল থানা এলাকায় হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৯৬টি গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে বংশাল থানায়। থানা পুলিশ পরোয়ানা তামিল করতে বিভিন্ন সময় তার বাসায় অভিযান চালালেও গ্রেফতার করতে পারেনি।
এদিকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি খালেদা জিয়া এবং মঙ্গলবার গ্রেফতার হওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক আলী সরকারের মুক্তির দাবিতে এক দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারির সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার খালেদা জিয়া এবং ইসহাক সরকারসহ সারাদেশে গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে দেশের সব জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, ইসহাক সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা হলো রাজনৈতিক। প্রায় প্রতিটি মামলাতে সিনিয়র নেতাদের নাম ঢোকানো হয়। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর ছাত্রদল নেতাকর্মীরা যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তখন অন্যায়ভাবে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের উসকানি দেওয়ার জন্য তাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। অবৈধ সরকার একদলীয় নির্বাচন করার অভিলাষে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ভয়ে ভীত হয়ে তাদের পর্যুদস্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে।’
এদিকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসহাক সরকার তৃণমুল থেকে বেড়ে ওঠা ছাত্রদলের একজন সাহসী নেতা। তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইসহাক সরকার শিগগির কারাগার থেকে বের হয়ে আসবেন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রাজপথে থেকে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেবেন।

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা