X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

টাকা থাকলেই চিকিৎসা মেলে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে

তাসকিনা ইয়াসমিন
১৪ জুলাই ২০১৮, ১৩:১৫আপডেট : ১৪ জুলাই ২০১৮, ১৫:১৮

হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে রোগীরা সন্তুষ্ট। তবে সেই চিকিৎসা সেবা পেতেও অনেক সময় গুনতে হয় বাড়তি টাকা। সেই টাকা না থাকলে ঠিকমতো সেবা পান না রোগীরা। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রয়েছে রোগীদের নানা অভিযোগ। অনিয়মগুলো দূর করতে পারলে হাসপাতাল থেকে আরও বেশি সেবা পাওয়া সম্ভব বলেই মনে করছেন রোগী ও তার স্বজনরা।

রাজধানীর মগবাজার থেকে মা সুফিয়া বেগমকে নিয়ে হৃদরোগ হাসপাতালে এসেছেন সোহেল মিয়া (৩২)। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল হলেও এখানে চিকিৎসক থাকে। হাসপাতাল ভালো, কিন্তু বোঝেনই তো সরকারি হাসপাতাল। ভালোর মধ্যে অনেক খারাপ দিক আছে। এখানে রোগী ভর্তি করলে প্রতি পদে পদে টাকা দিতে হয়। এটা হার্টের রোগীর হাসপাতাল তারপরও ময়লা আবর্জনায় ভর্তি। কখনও পরিষ্কার  করে কিনা কে জানে।’

তবে চিকিৎসাসেবা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মিরপুর থেকে আসা সুজন মল্লিক (৩৬)। ভিড় কমই থাকায় ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখিয়েছেন এবং ৯০ টাকা দিয়ে ইসিজি করিয়ে রিপোর্টও তাৎক্ষণিক হাতে পেয়েছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে খুব সহজেই চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে। সবার ব্যবহারও ভালো। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো এমনই হওয়া উচিত।’

হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে তেমন ময়লা আবর্জনা না থাকলেও  ঠিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বলা যাবে না। ট্রলিতে করে রোগীকে নিতে হলেও এখানে টাকা দিতে হয়।

রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে ট্রলি প্রতি ন্যূনতম ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। আর টাকা না দিলে ট্রলির চাকা নড়ে না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন এখানে প্রায় ১ হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এবং এখানে চিকিৎসক ও অন্য স্টাফরা থাকেন।

হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা ঠিক আমাদের এখানে মাত্র ৯০ টাকায় একজন রোগী ইসিজি করাতে পারছেন। কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার থেকেই যাচ্ছে। যে রোগীর পকেটে টাকা আছে তিনি চিকিৎসা পাচ্ছেন। আর যার হাতে টাকা নেই তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন।’

হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে সুলভ মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব। উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য আমাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র বা ফ্রান্সের মত রাষ্ট্রায়ত্ত হেলথ ইন্স্যুরেন্সের আওতায় ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার চালু করতে হবে। উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় টাকা থাকবে অদৃশ্য, রোগীকে কাউন্টারে কাউন্টারে দৌড়াতে হবে না। এই ব্যবস্থায় অবস্থাপন্ন রোগীরা প্রিমিয়াম দেবেন এবং একদম হতদরিদ্র রোগীরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবেন।’

হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের ইমার্জেন্সি কেয়ারের মান খুবই ভালো। আমাদের এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশেষ ইন্সটিটিউট। এখানে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার বলে কোনও পদ  নেই। একই মেডিক্যাল অফিসাররা ইনডোর, আউটডোর এবং ইমার্জেন্সিতে বাই-রোটেশন কাজ করেন। এতে ডাক্তারদের ওপর চাপ বাড়ে এবং বিশেষায়িত ইমার্জেন্সি কেয়ার এই অবকাঠামোয় পুরোপুরি সম্ভব নয়। এখানে যারা মেডিক্যাল অফিসার তাদের প্রতি বছর ইমার্জেন্সি কেয়ার, বেসিক অ্যান্ড অ্যাডভান্সড ট্রমা লাইফ সাপোর্টের রিফ্রেশমেন্ট ট্রেনিং দরকার। তবে, আমি মনে করি, এখানে চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদগুলো বাড়াতে হবে। এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগটিও পূর্ণাঙ্গ হতে হবে। এখানেও বেসিক লাইফ সাপোর্ট, অ্যাডভান্স ট্রমা লাইফ সাপোর্ট দিতে হবে। চিকিৎসকদের রিফ্রেশমেন্ট ট্রেনিং দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টা অন কল একজন কার্ডিয়াক সার্জন, একজন কার্ডিওলজিস্ট, একজন অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট এবং একজন ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ থাকতে হবে। এছাড়া অন ডিউটি ট্রেইন্ড মেডিক্যাল অফিসার থাকতে হবে একটা শিফটে কমপক্ষে ৩/৪ জন।’

টাকা থাকলেই চিকিৎসা মেলে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের এখানেও আমরা পুরোপুরি গাইডলাইন মেনে দায়িত্ব পালন করতে পারি না। কারণ, হার্ট অ্যাটাকের রোগীর ক্ষেত্রে বলা আছে সিরিয়াল এনজাইম করতে হবে। সিরিয়াল ইসিজি করতে হবে। আমাদের রোগীদের জন্য একটি ইসিজি করতেই কষ্ট হয়। তাহলে তাকে সিরিয়াল ইসিজি করানো কী করে সম্ভব? হাসপাতালে অধিকাংশ বিভাগ ও ইউনিটেই জুনিয়র চিকিৎসকদের বসার কোনও স্বাস্থ্যকর স্থান নেই। ফলে প্রায়ই দাঁড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট ও রিকুইজিশন দেওয়া ও নিরীক্ষার কাজ করতে হয় জুনিয়র ডাক্তারদের। একমাত্র ক্যান্টিনটি খুবই অস্বাস্থ্যকর। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা অত্যন্ত আশাপ্রদ।’

রোগীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. আফজালুর রহমানের যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী