সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীতে নির্বাচনের বিধান না রেখে মনোনয়নের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন আরও ২৫ বছর বহাল রাখার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পাশাপাশি এই বিল নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়াকে আরও দুর্বল করবে বলে মনে করে সংগঠনটি। সোমবার (১৬ জুলাই) দুপুরে মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান মহিলা পরিষদের নেত্রীরা।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী বলেন, সমাজের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, নারীর মানবাধিকার সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি সবাইকে নিয়ে নারীর পথচলা মসৃণ করার জন্যই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে জন্মলগ্ন থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় সংসদে নারীর আসন সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আন্দোলন করেছি। এই আন্দোলনের ফসল হিসেবে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ এবং ১৫ থেকে ৫০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাজোটের লিখিত ইশতেহারে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি এবং সরাসরি নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ছিল, কিন্তু তার কোনও বাস্তব প্রয়োগ আমরা দেখি নাই। তাদের ঘোষিত লিখিত বিষয়ের বিপরীতে তারা একটি সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত নিলেন। নারীর রাজনৈতিক আন্দোলন একদিনের কাজ নয়। একদিনে নারীর ভোটের অধিকার ও শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সেই দিক থেকে নারীর রাজনৈতিক অধিকার যতক্ষণ প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত মহিলা পরিষদ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি সংবিধানের এই সপ্তদশ সংশোধনী বিল পাস হওয়ার ফলে ভবিষ্যতে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়া আরও অনেক দুর্বল হবে। সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের বিধান রেখে ২৫ বছরের সময়সীমা বাড়িয়ে এই বিল পাস হওয়ায় তা বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সঙ্গে শুধু সাংঘর্ষিকই নয়, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এই সরকার কর্তৃক দেয়া বিভিন্ন বক্তব্য, গৃহীত নীতি (জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি) এবং জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ (সিডও) সনদ ও এসডিজির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এই বিল পাস হওয়ায় নারীরা রাজনৈতিক দল ও শক্তির কাছে একটি নির্ভরশীল গোষ্ঠী হিসেবে দাঁড়াবে, যা নারীর জন্য অসম্মানজনক। প্রকৃত অর্থে সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্যদের মূলধারার রাজনৈতিক দলে নেতা, কর্মী, সংগঠক ও নীতিনির্ধারক হিসেবে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘নারীর এই রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য শুধুমাত্র সরকারি দলই নয় অন্য সব রাজনৈতিক দলকেও সক্রিয় থাকতে হবে। বাংলাদেশে যে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে তা শুধু সরকারের একক প্রচেষ্টায় হয়নি। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের এই পথ যতদিন পর্যন্ত মসৃণ না হবে ততদিন এই দুটি দাবি পূরণের জন্য আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, লক্ষ্মি চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ এবং সীমা মোসলেম, অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক বুলা ওসমান, স্বাস্থ্য সম্পাদক, নূরুল ওয়ারা বেগম লিগ্যাল এইড সম্পাদক সাহানা কবির ও সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।