X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরিচয়ই কাল হয়েছিল পুলিশ কর্মকর্তা মামুনের

নুরুজ্জামান লাবু
১৯ জুলাই ২০১৮, ০১:৩১আপডেট : ১৯ জুলাই ২০১৮, ১৪:৪০

মামুন ইমরান খান পুলিশের বিশেষ শাখা এসবির ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডে জড়িত এজাহারভুক্ত সব আসামিকেই আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এদের মধ্যে তিন জন কথিত নারী মডেল ও অভিনেত্রী এবং অপর তিন জন একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক সদস্য বলে জানা গেছে। ঘটনার দিন ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের চেষ্টার সময় মামুন তার পুলিশ পরিচয় দেওয়ার কারণে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ গুম করতে নিয়ে যাওয়া হয় গাজীপুরে। সেখানে পেট্রোল দিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়, যাতে তার পরিচয় শনাক্ত না করা যায়। এই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয় আতিক নামে এজাহারভুক্ত এক আসামি। তাকে সহযোগিতা করে স্বপন ও মিজান। আর লাশ গুমে সহায়তা করে বাকিরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বুধবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য প্রায় উন্মোচিত হয়ে গেছে। আসামিদের সবাইকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যেকোনও সময় তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে।’

গত ৮ জুলাই সবুজবাগ এলাকার বাসা থেকে বনানী গিয়ে নিখোঁজ হন পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান। পরদিন তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিম রহমত উল্ল্যাহ নামে মামুনের এক বন্ধুকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্য মতে ওই দিনই গাজীপুরের কালীগঞ্জের উলুখোলা রাইদিয়া এলাকার রাস্তার পাশে নির্জন একটি বাঁশঝাড় থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা হয় একটি হত্যা মামলা। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন রহমত উল্ল্যাহকে আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রহমত উল্যাহকে গ্রেফতারের পরই মামুনকে হত্যাকাণ্ডের পুরো চিত্র জানতে পারে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। এরপর ধারাবাহিক অভিযানে একে একে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া এবং লাশ গুমের সঙ্গে জড়িত সবাইকে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। ঘটনার পরপরই আসামিরা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।

সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই প্রথম গ্রেফতার হওয়া রহমত উল্ল্যাহর সূত্র ধরে প্রথমে যার জন্মদিনের কথা বলে মামুনকে বনানীর ২/৩ সড়কের ৫ নম্বর ভবনের এ-২ ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কথিত সেই নারী মডেল মেহেরুন্নেসা ওরফে শেখ আন্নাফি ওরফে আন্নাফি আফরিনকে গোয়েন্দা  নজরদারির আওতায় আনা হয়। পরে ওই বাসাটিতে যে দেহব্যবসা ও অশ্লীল ছবি তুলে প্রতারণার ফাঁদ বসিয়েছিল সেই শেখ হৃদয় এবং তার স্ত্রী কথিত মডেল ও অভিনেত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একে একে আটক করা হয় মিজান, আতিক, রবিউল, ফারিয়া বিনতে মীম ওরফে মাইশাকে।

আরও পড়ুন: যেভাবে এসবি ইন্সপেক্টর মামুনের লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বনানীর ওই বাসাটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ আদায় করার উদ্দেশ্যে। একারণে ওই বাসায় কোনও ফার্নিচার ছিল না। এই চক্রটি সাধারণত কয়েক মাস ব্যবহারের পর অন্য কোনও এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে একই অপরাধ করে বেড়ায়। শেখ হৃদয় হলো এই গ্রুপের প্রধান। নজরুল ইসলাম ওরফে নজরুল রাজ নামে এক ব্যক্তি নিজের নামে বাসা ভাড়া নিয়ে শেখ হৃদয়কে দিয়ে এসব কাজ করাতো। হৃদয় তার স্ত্রী কথিত মডেল ও অভিনেত্রী কেয়া, আন্নাফি আফরিন ও আফরিনের বোন মাইশা ওরফে মিমকে ব্যবহার করতো টোপ হিসেবে। বাসায় সার্বক্ষণিক দেখভাল করার জন্য নিয়োজিত ছিল দিদার। আর একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক তিন সদস্য আতিক, মিজান ও স্বপন নিয়মিত ওই বাসায় যাতায়াত করতো এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের কাজটি করতো। প্রতারণার অর্থ দুই ভাগ করে এক ভাগ শেখ হৃদয়কে আর অপর অংশ এই তিন জন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত। হৃদয়ের ভাগের অংশ থেকে দেওয়া হতো কথিত তিন নারী মডেল ও অভিনেত্রীকে। এর আগে ওই বাসাতে আরও কয়েক ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে অশ্লীল ছবি তুলে অর্থ আদায় করেছিল বলে আটকরা স্বীকার করেছে।

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে রহমত উল্লাহ্য দাবি করেছে, সংঘবদ্ধ এই চক্রটি তাকে টার্গেট করেছিল। কিন্তু তার সঙ্গে মামুন ওই বাসায় ঢোকায় তাদের দুজনের ওপরেই চড়াও হয়। এক পর্যায়ে মারধরের কারণে মামুন মারা গেলে সে নিজে বাঁচতে চক্রের সদস্যদের সঙ্গে মিলে লাশ গুমে অংশ নেয়। এমনকি বনানীর ওই ফ্ল্যাট থেকে বস্তায় ভরে নিজের গাড়িতে করে লাশ নিয়ে গাজীপুরে যায়। তার সঙ্গে লাশ গুমে আতিক, স্বপন ও মিজান অংশ নিয়েছিল। গাজীপুরের একটি পেট্রোল পাম্প থেকে ৭ লিটার তেল কেনে। লাশটি যখন নির্জন সেই বাঁশঝাড়ে ফেলা হয় তখন সে নিজের হাতে বস্তায় তেল ঢালার কথা স্বীকার করেছে। এসময় আতিক লাশের বস্তায় আগুন লাগিয়ে দেয়।

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশ ইন্সপেক্টর নিখোঁজ হওয়ার পরপরই তারা গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক টিম তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। যখন জানা যায়, মামুনকে হত্যা করা হয়েছে, তখন পুরো খুনি চক্রকে শনাক্ত ও আটকের জন্য ধারাবাহিক অভিযান চালানো হয়। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ