X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৪ আসামি গ্রেফতার

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৯ জুলাই ২০১৮, ১০:৫৩আপডেট : ১৯ জুলাই ২০১৮, ১৩:৫৪

গ্রেফতার আসামিরা পুলিশের বিশেষ শাখা এসবির ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডে জড়িত এজাহারভুক্ত চার আসামিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।বুধবার (১৮ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর বাড্ডা ও হাজারিবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।


গ্রেফতার আসামিরা হলো, মিজান শেখ, মেহেরুন্নেসা স্বর্ণা ওরফে আফরিন, সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া এবং ফারিয়া বিনতে মীম।


সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৮ জুলাই সবুজবাগ এলাকার বাসা থেকে বনানী গিয়ে নিখোঁজ হন পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান। পরদিন তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিম রহমত উল্ল্যাহ নামে মামুনের এক বন্ধুকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্য মতে ওই দিনই গাজীপুরের কালীগঞ্জের উলুখোলা রাইদিয়া এলাকার রাস্তার পাশে নির্জন একটি বাঁশঝাড় থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা হয় একটি হত্যা মামলা। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন রহমত উল্ল্যাহকে আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রহমত উল্যাহকে গ্রেফতারের পরই মামুনকে হত্যাকাণ্ডের পুরো চিত্র জানতে পারে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। এরপর ধারাবাহিক অভিযানে একে একে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া এবং লাশ গুমের সঙ্গে জড়িত সবাইকে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। ঘটনার পরপরই আসামিরা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই প্রথম গ্রেফতার হওয়া রহমত উল্ল্যাহর সূত্র ধরে প্রথমে যার জন্মদিনের কথা বলে মামুনকে বনানীর ২/৩ সড়কের ৫ নম্বর ভবনের এ-২ ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কথিত সেই নারী মডেল মেহেরুন্নেসা ওরফে শেখ আন্নাফি ওরফে আন্নাফি আফরিনকে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়। পরে ওই বাসাটিতে যে দেহব্যবসা ও অশ্লীল ছবি তুলে প্রতারণার ফাঁদ বসিয়েছিল সেই শেখ হৃদয় এবং তার স্ত্রী কথিত মডেল ও অভিনেত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একে একে আটক করা হয় মিজান, আতিক, রবিউল, ফারিয়া বিনতে মীম ওরফে মাইশাকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বনানীর ওই বাসাটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ আদায় করার উদ্দেশ্যে। একারণে ওই বাসায় কোনও ফার্নিচার ছিল না। এই চক্রটি সাধারণত কয়েক মাস ব্যবহারের পর অন্য কোনও এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে একই অপরাধ করে বেড়ায়। শেখ হৃদয় হলো এই গ্রুপের প্রধান। নজরুল ইসলাম ওরফে নজরুল রাজ নামে এক ব্যক্তি নিজের নামে বাসা ভাড়া নিয়ে শেখ হৃদয়কে দিয়ে এসব কাজ করাতো। হৃদয় তার স্ত্রী কথিত মডেল ও অভিনেত্রী কেয়া, আন্নাফি আফরিন ও আফরিনের বোন মাইশা ওরফে মিমকে ব্যবহার করতো টোপ হিসেবে। বাসায় সার্বক্ষণিক দেখভাল করার জন্য নিয়োজিত ছিল দিদার। আর একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক তিন সদস্য আতিক, মিজান ও স্বপন নিয়মিত ওই বাসায় যাতায়াত করতো এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের কাজটি করতো। প্রতারণার অর্থ দুই ভাগ করে এক ভাগ শেখ হৃদয়কে আর অপর অংশ এই তিন জন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত। হৃদয়ের ভাগের অংশ থেকে দেওয়া হতো কথিত তিন নারী মডেল ও অভিনেত্রীকে। এর আগে ওই বাসাতে আরও কয়েক ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে অশ্লীল ছবি তুলে অর্থ আদায় করেছিল বলে আটকরা স্বীকার করেছে।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে রহমত উল্লাহ্ দাবি করেছে, সংঘবদ্ধ এই চক্রটি তাকে টার্গেট করেছিল। কিন্তু তার সঙ্গে মামুন ওই বাসায় ঢোকায় তাদের দুজনের ওপরেই চড়াও হয়। এক পর্যায়ে মারধরের কারণে মামুন মারা গেলে সে নিজে বাঁচতে চক্রের সদস্যদের সঙ্গে মিলে লাশ গুমে অংশ নেয়। এমনকি বনানীর ওই ফ্ল্যাট থেকে বস্তায় ভরে নিজের গাড়িতে করে লাশ নিয়ে গাজীপুরে যায়। তার সঙ্গে লাশ গুমে আতিক, স্বপন ও মিজান অংশ নিয়েছিল। গাজীপুরের একটি পেট্রোল পাম্প থেকে ৭ লিটার তেল কেনে। লাশটি যখন নির্জন সেই বাঁশঝাড়ে ফেলা হয় তখন সে নিজের হাতে বস্তায় তেল ঢালার কথা স্বীকার করেছে। এসময় আতিক লাশের বস্তায় আগুন লাগিয়ে দেয়।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশ ইন্সপেক্টর নিখোঁজ হওয়ার পরপরই তারা গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক টিম তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। যখন জানা যায়, মামুনকে হত্যা করা হয়েছে, তখন পুরো খুনি চক্রকে শনাক্ত ও আটকের জন্য ধারাবাহিক অভিযান চালানো হয়। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন- যেভাবে এসবি ইন্সপেক্টর মামুনের লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়

পরিচয়ই কাল হয়েছিল পুলিশ কর্মকর্তা মামুনের

/এসজেএ/এনএল/এসএসএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
এনার্জি মাস্টার প্ল্যান সংশোধনের দাবিব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান