X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টিশক্তি হারানোর একবছর হয়ে গেলো: সিদ্দিকুর

তাসকিনা ইয়াসমিন
২০ জুলাই ২০১৮, ২২:২৮আপডেট : ২১ জুলাই ২০১৮, ১৩:৩৫

মায়ের সঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান (ছবি: নাসির হোসেন) পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসে রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের দৃষ্টিশক্তি হারানোর এক বছর হলো আজ শুক্রবার। গত বছরের ২০ জুলাই তিনি সহপাঠীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে চোখের দৃষ্টি হারান।
সিদ্দিকুর এখন এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে টেলিফোন অপারেটর পদে কর্মরত। তার ‘আলোহীন’ জীবনে চাকরিই যেন বড় প্রাপ্তি! সব ভুলে থাকার চেষ্টা এই চাকরিকে ঘিরে।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “এখন আমি ভালো আছি। গত মাসের তিন তারিখে চাকরির কনফার্মেশন লেটার দিয়েছে। চাকরির শুরুতে আমার ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ ছিল। এখন আমার চাকরি স্থায়ী হওয়ার কারণে বেতন অনেক বেড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০ জুলাই আমার দৃষ্টিশক্তি হারানোর এক বছর পূর্ণ হয়ে গেল।’
মায়ের সঙ্গে ঢাকায় আছেন সিদ্দিকুর। তিনি বলেন, ‘এখন মায়ের সঙ্গেই ঢাকায় থাকছি। মা সকালে আমাকে অফিসে দিয়ে যান আবার বিকেলে অফিস থেকে বাসায় নিয়ে যান। বাসায় যাবার পর আমি আর মা বসে বসে গল্প করি।’
সিদ্দিকুর বলেন, ‘আমি এখন কম্পিউটার শিখছি। এখন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড পারি, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট— এগুলো পারি। আস্তে আস্তে কম্পিউটারের আরও কাজ শিখবো।’
লেখাপড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা থার্ড ইয়ার পরীক্ষার তারিখের দাবিতেই মানববন্ধনে গেছিলাম। তারপরই তো এই ঘটনা ঘটে। সেই পরীক্ষাটা দিয়েছি, কিন্তু এখনও রেজাল্ট হয়নি। এখন আমি ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি। ৫-১০ ভাগ আমাদের সমস্যার সমাধান হয়েছে। বাকি সব সমস্যাই আছে। সেকেন্ড ইয়ারে যারা ছিল তারা গত ১৮ মাস ধরে পরীক্ষা দিতে পারছে না। যারা ২০১৬-১৭ সালে ভর্তি হয়েছিল তাদের অবস্থা এখনও খারাপ; সবাই তাই বলে।’
সিদ্দিকুর নিজের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ‘দুপুরে অফিসের ক্যান্টিনে খাওয়া-দাওয়া করি। এখন আমি অফিসের ৯০ ভাগ করতে পারি। আশা করি, আমার সহকর্মী সজল খান ও সাখাওয়াত হোসেন ভাই আমার ওপর সন্তুষ্ট।’
বন্ধুদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথাবার্তা হয়। মাঝে মাঝে ওরা আসে। আমাদের দেখা হয়, কথা হয়।’ সিদ্দিকুর বলেন, ‘মাঝে মাঝেই মায়ের সঙ্গে গল্প করতে বসলে যাদের কারণে আমি এখন এই অবস্থায় আছি তাদের কথা বলি।’
প্রসঙ্গত, পরীক্ষার রুটিন ও তারিখ ঘোষণাসহ কয়েকটি দাবিতে গত বছরের ২০ জুলাই শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নতুন সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে গুরুতর আহত হন সিদ্দিকুর। তাকে প্রথমে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো হয়। কিন্তু চোখের আলো ফিরে পাননি সিদ্দিকুর।
দৃষ্টিশক্তি হারানোর অপূরণীয় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাকে একটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর সিদ্দিকুরের হাতে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানির নিয়োগপত্র তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সিদ্দিকুর তার আলোহীন জীবনে পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের প্রত্যেক চিকিৎসক,এসেনশিয়াল ড্রাগস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সহকর্মী ও গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

(মায়ের সঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান। ছবি: নাসির হোসেন।)

/টিওয়াই/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন