প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গণসংবর্ধনা দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশের জেরে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আগমণ নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে। আবার কিছু কিছু সড়কে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যান চলাচল। ফলে সমাবেশস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের সড়কগুলোতে যানজটের তীব্রতা বেশি দেখা গেছে। এর ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া সমাবেশকে কেন্দ্র করে বেলা ১২টার পর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের সড়কগুলোতে দলীয় নেতাকর্মী ও সমাবেশগামী পরিবহনের ভিড় বাড়তে থাকে। সড়কে ঢাকার উপকণ্ঠের বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে আসা নেতাকর্মীদের বহনকারী পরিবহনগুলোর চাপ বাড়তে থাকে। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসতে থাকে খণ্ড খণ্ড মিছিল। ফলে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। দীর্ঘক্ষণ ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে থাকার পরেও সিগ্যাল ছাড়া হচ্ছে না। যানজট ছড়িয়ে পড়ে পুরো নগরীতে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে শাহবাগ হতে মৎস্য ভবন, টিএসসি হতে দোয়েল চত্বর, বাংলামটর থেকে শাহবাগ মোড় হয়ে পল্টন মোড় এবং কাকরাইল থেকে মৎস্য ভবন মোড় হয়ে পল্টন পর্যন্ত যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বাংলামোটর, কাকরাইল চার্চ, ইউবিএল, জিরো পয়েন্ট, গোলাপশাহ মাজার, চাঁনখারপুল, বকশীবাজার, পলাশী, নীলক্ষেত, কাঁটাবন ক্রসিং দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়মুখী সাধারণ গাড়িগুলোকে ডাইভারশান করে দেওয়া হয়। এসব এলাকার সড়ক দিয়ে চলাচলরত পরিবহনগুলো বিকল্প সড়ক ব্যবহার করায় দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, পল্টন থেকে বিজয়নগর হয়ে কাকরাইল, মালিবাগ থেকে রামপুরা, বাংলামটর থেকে মালিবাগ, কাকরাইল থেকে মগবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় যানজটের। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশদের।
পরিবহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমাবেশ উপলক্ষে মিরপুর থেকে নেতাকর্মীবাহী যেসব বাসে এসেছেন সেগুলো মিরপুর রোড দিয়ে এসে নীলক্ষেত এলাকায় পার্ক করেছে। উত্তরা, মহাখালীর দিক থেকে যেসব গাড়ি এসেছে সেগুলো মগবাজার-কাকরাইল চার্চ-নাইটিঙ্গেল-ইউবিএল-জিরো পয়েন্ট-হাইকোর্ট হয়ে দোয়েল চত্বরে নামিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়ামে পার্ক করেছে।
ফার্মগেট-সোনারগাঁও-শাহবাগ হয়ে যেসব গাড়ি এসেছে সেগুলো টিএসসি রাইট টার্ন করে মল চত্বরে পার্ক করে। যাত্রাবাড়ী, ওয়ারী, বংশাল দিয়ে আসা গাড়িগুলো জিরো পয়েন্ট, হাইকোর্ট হয়ে দোয়েল চত্বরে নামিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়ামে পার্ক করেছে। লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর থেকে আগতদের গাড়ি পলাশী-নীলক্ষেত এলাকায় পার্ক করে। পার্কিংয়ের কারণে এই সড়কগুলোতে যানচলাচল অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুরের দিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কজুড়ে তীব্র যানজট। যানজটের কারণে অধিকাংশ সড়কে চালকরা গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে বসে আছেন। এর মধ্যেই দলীয় নেতাকর্মীরা মিছিলসহ সমাবেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
পান্থপথ সিগন্যালে আটকে থাকা দোলনচাঁপা বাসের চালক বাস থেকে নেমে ফুটপাতে বসে আছেন। বাসেও নেই কোনও যাত্রী। জানতে চাইলে চালক রায়হান বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশ। সে কারণে সব রাস্তায় তীব্র যানজট। এক ঘণ্টার উপরে এখানে বসে আছি। সিগন্যাল ছাড়ছে না। যাত্রীরাও সবাই নেমে গেছে।’
একই অবস্থা দেখা গেছে কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর ও ফকিরাপুল এলাকায়। এসব এলাকায় যানজটের কারণে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। যানজটে আটকা পড়া যানবাহগুলোকে উল্টোপথে চলাচল করতেও দেখা গেছে।
সড়কে যানজটের কারণে সেগুনবাগিচা থেকে পান্থপথের নিজ অফিসে হেঁটে এসেছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোরশেদ আলী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে অফিসের কাজে সেগুনবাগিচায় গিয়েছিলাম। দুপুর ২টার দিকে কাজে সেরে আবার অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। কিন্তু সেগুনবাগিচার সেগুন রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে রিকশা উঠে রাজস্ব ভবনের সামনে এসেই দেখি রাস্তায় তিল পরিমাণ ফাঁকা নেই। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর হাঁটা শুরু করি। পুরো পথেই তীব্র যানজট দেখেছি।’
এদিন সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যাও তুলনামূলক অনেক কম দেখা গেছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ পরিবহন রিজার্ভ ভাড়া হয়ে যাওয়ায় এই সংকট দেখা গেছে বলে পরিবহন সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর অধিকাংশ গণপরিবহন রিজার্ভ ভাড়া হয়ে গেছে। যে কারণে এই পরিবহনগুলো সাধারণ যাত্রী তুলছে না।’