X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াবার তথ্য পুলিশকে দেওয়ায় সেলিমকে হত্যা করে বন্ধুরা

নুরুজ্জামান লাবু
২৩ জুলাই ২০১৮, ০১:০১আপডেট : ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৪:৫৮

নিহত সেলিম

অনেকটা বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল ছয়জনের মধ্যে। সেলিম, কামাল, ফরহাদ, পাগলা বাবুল, কালা মিয়া ও হানিফ নামের এ ছয়জন একসঙ্গে ইয়াবা সেবন করতো; ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিল। সম্প্রতি পাঁচজনের মনে সেলিমকে ঘিরে সন্দেহ হয়। সেলিম পুলিশকে ইয়াবা সেবন ও বিক্রির তথ্য দিচ্ছে, এ সন্দেহ করে বাকিরা। আর এই সন্দেহ থেকেই সেলিমকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। একসঙ্গে ইয়াবা সেবনের আসরের আয়োজন করে সেখানেই ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে সেলিমকে হত্যা করে বাকি পাঁচজন। তারপর লাশ বস্তায় ভরে ফেলে দেয় পাশের ঝিলে। ছয়দিন পর সেই লাশ ভেসে উঠলে সেলিমের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন পরিবারের সদস্যরা।

চলতি বছরের ৬ মার্চ হওয়া এই হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি পশ্চিমের একটি দল। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া দুই আসামি ইতোমধ্যে আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মামলার তদন্ত তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, ‘ইয়াবা খাওয়া এবং বিক্রি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বন্ধুরা খুন করে সেলিমকে। এ ঘটনায় কামাল ও ফরহাদ নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা দুজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গাড়িচালক হিসেবে কাজ করা সেলিম তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতো রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনের মিরপুর ডিওএইচএস সরকারবাড়ির ভাড়া বাসায়। গত ৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে সে বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ যাওয়ার কথা বলে বের হয়। কিন্তু মধ্যরাত থেকে তার মোবাইল ফোন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ১০ মার্চ একই এলাকার একটি ঝিল থেকে একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দু’দিন পর খবর পেয়ে মর্গে গিয়ে সেই লাশ শনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা। ১৩ মার্চ নিহত সেলিমের স্ত্রী জেসমিন বেগম বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। থানা থেকে সেই মামলার তদন্তভার ডিবি পশ্চিম বিভাগের পল্লবী জোনাল টিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আসামি কামাল

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পশ্চিম) তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে তারা প্রযুক্তির সহায়তায় কামাল নামে এক আসামিকে শনাক্ত করে। পরে গত ২৩ জুন তাকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে কামাল হত্যকাণ্ডের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। জবানবন্দিতে কামাল বলেছে, ‘আমি পাগলা বাবুলের কাছ থেকে ইয়াবা নিয়ে বিক্রয় করতাম। সেলিমও বাবুলের কাছ থেকে ইয়াবা নিয়ে বিক্রি করতো। মাঝে মাঝে আমার কাছ থেকেও ইয়াবা নিয়ে বিক্রি করতো। ফরহাদ ও হানিফ বাবুলের সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসা করতো। সেলিম ঠিকমতো বাবুলকে টাকা-পয়সা দিতো না। এছাড়া, সে আমাদের ইয়াবা ব্যবসার কথা পুলিশকে বলে দিয়েছিল। এজন্য আমরা সবাই সেলিমকে মারার পরিকল্পনা করি।’

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে কামাল বলে, ‘পরিকল্পনা মতো গত ৬ মার্চ রাত ১১টার দিকে আমরা হানিফকে দিয়ে ইয়াবা খাওয়ার কথা বলে সেলিমকে ডেকে আনি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পল্লবীর বৃন্দাবন বস্তির ঢালে ছোট্ট একটি ছাপড়া ঘরে ইয়াবা খেতে বসি। ইয়াবা খাওয়া শেষে আমি সেলিমের দুই হাত ধরি। বাবুল একটা ন্যাকড়া দিয়ে সেলিমের মুখ বেঁধে ফেলে। হানিফ সেলিমের দুই পা ধরে রাখে। ফরহাদ একটি ইট দিয়ে সেলিমের মাথায় পর পর দুটি আঘাত করে। সেলিমের মাথা ফেটে রক্ত বের হয়। পরে আমরা সবাই মিলে সেলিমের লাশ বস্তায় ভরে পাশের ঝিলের পানিতে ফেলে দেই।’

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, কামালের স্বীকারোক্তিতে আরও যে কয়জনের নাম এসেছে, তাদের গ্রেফতারের জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় ২১ জুলাই রাতে ফরহাদ নামে আরও এক সন্দেহভাজন খুনিকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ নামের সেই আসামিও হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে সোমবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

আসামি ফরহাদ

পল্লবীর ডিওএইচএসে ফরহাদ টেলিকম নামে একটি মোবাইল মেরামতের দোকান মালিক ফরহাদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে, ‘আমি গাঁজা ও ইয়াবা খাই। সেলিম নামের একজন ড্রাইভার কামালের কাছ থেকে ইয়াবা কিনে আনতো। অনেক সময় আমি, সেলিম, কামাল, পাগলা বাবুল, কালা মিয়া ও হানিফ মিলে বৃন্দাবন বাজারে ছাপড়া ঘরে একসঙ্গে বসে ইয়াবা ও গাঁজা খাইতাম। আমরা জানতে পারি সেলিম আমাদের ইয়াবা খাওয়া ও ব্যবসার কথা পুলিশকে বলে দিয়েছে। তখন আমরা সবাই মিলে সেলিমকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার পরিকল্পনা করি।’

জবানবন্দিতে ফরহাদ বলে, ‘৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেলিমকে নিয়ে আমি, পাগলা বাবুল, কামাল, হানিফ ও কালা মিয়া সবাই মিলে বৃন্দাবন বস্তির ঢালে ছাপড়া ঘরে বসে প্রথমে ইয়াবা খাই। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী কামাল ডান হাত দিয়ে সেলিমের গলা টিপে ধরে। কালা মিয়া সেলিমের দুই হাত ধরে, কামাল তখন বাম হাত দিয়ে সেলিমের মুখের ভেতর কাপড় গুঁজে দেয়। বাবুল সেলিমের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে ও হানিফ সেলিমের পা ধরে রাখে। সেলিম অচেতন হয়ে গেলে মারা গেছে মনে করে আমরা তার লাশ বস্তায় ভরে কামালের বাসার স্টিলের খাটের নিচে রাখি। পরের দিন বাবুল ইয়াবা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পাশের ঝিলে লাশ ফেলানোর ব্যবস্থা করে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে দুজন একে অপরকে দোষারোপ করেছে। তবে তারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল বলে স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় আরও যে চারজনের নাম এসেছে, তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

/এমএ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!