X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

দরপত্র চূড়ান্ত না হতেই রাজধানীর হাটে কোরবানির পশু

শাহেদ শফিক
১৪ আগস্ট ২০১৮, ১১:০৬আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০১৮, ১৪:১৮




রাজধানীতে পশুর হাট রাজধানীর ২২টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের মধ্যে এখনও সাতটি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণের ১৩টি হাটের মধ্যে ৬টিতে কোনও দরপত্রই জমা পড়েনি। উত্তর সিটির ১০টি হাটের মধ্যে ৮টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আবাসিক এলাকা হওয়ায় একটি হাট বাতিল করা হয়েছে। দরপত্র না পড়া হাটগুলোর পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দুই সিটির এখনও সাতটি হাটের দরপত্র চূড়ান্ত না হলেও বাকি হাটগুলোতে কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে। ঈদের বাকি এখনও আট দিন। এরই মধ্যে ইজারাদাররা হাট এলাকায় বাঁশ-খুঁটি ও তাঁবু দিয়ে ছাউনি তৈরি করে সাজিয়ে রেখেছেন। কয়েকটি হাটে পশু আনা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ঈদের তিন দিন আগে থেকে কোরবানির হাটে পশু বেচাকেনা শুরু হয়। কিন্তু এবার আগেভাগেই পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজধানীতে মোট ২২টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই সিটি। এর মধ্যে দক্ষিণে ১৩টি, উত্তরে ৯টি। কিন্তু এ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে ১৪টি হাটের ইজারা। কোনও দরপত্র না পাওয়ায় ডিএসসিসি’র ৬টি হাটের ইজারা হয়নি। এ হাটগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর উত্তরের একটিতে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করেছে সংস্থাটি। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার আগেই এসব পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

গরু উঠতে শুরু করেছে  রাজধানীর হাটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএসসিসি’র ৬টি ও ডিএনসিসি’র একটি হাটের দরপত্র ক্রয় করেও টেন্ডারে কেউ অংশ নেয়নি। মূলত এটি একটি কৌশল, যাতে সিটি করপোরেশন এসব হাট থেকে হাসিল আদায়ে বাধ্য হয়। এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। জানা গেছে, দরপত্র জমা না পড়ায় গত বছরের মতো এ বছরও এসব হাট থেকে খাস আদায় করতে হবে সিটি করপোরেশনকে। স্থানীয় শক্তিশালী এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই তা করতে হবে। সেক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছে মতো কিছু টাকা করপোরেশনের তহবিলে জমা দিয়ে হাট থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করার পরিকল্পনা রয়েছে এই সিন্ডিকেটের। এ লক্ষ্যে ইজারা অনুমোদন না হওয়া হাটগুলোতেও পশু বিক্রির প্রস্তুতি চলছে।

দক্ষিণ সিটির ইজারা না হওয়া হাটগুলো হলো—ব্রাদার্স ইউনিয়নের পাশে বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকার আশপাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠসংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গা। এসব এলাকায় ইজারা ছাড়াই অস্থায়ী হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে।

 প্রস্তুত কোরবানির পশুর হাট এদিকে, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেরাদিয়া হাট ইজারা দেওয়া হলেও ইজারাদার হাজী মো. শাহ আলম পুরো এলাকা ছাড়িয়ে নন্দীপাড়া বালুর মাঠেও হাট বসানোর প্রস্তুতি শেষ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে নিজের লোকজনের মাধ্যমে তিনি পুরো মাঠে বাঁশ, খুঁটি ও তাঁবু দিয়ে ঘর তৈরি করছেন। বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খামারিরা পশু এনে এই হাটে রেখেছেন।

জানতে চাইলে হাজী শাহ আলম বলেন, ‘বালুর মাঠে প্রস্তুতি নেওয়ায় জনসাধারণের কোনও সমস্যা হবে না। এটা উন্মুক্ত জায়গা। সেজন্য সেখানে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা তো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন। তাদের সুবিধার্থে এটা করা হয়েছে।’ সিটি করপোরেশন থেকে এখনও তো হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তা ঠিক। কিন্তু ব্যবসায়ীদের জন্য তো আমার কিছু করতে হয়।’

সরেজমিন ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পশুর হাট বসানোর জোর প্রস্তুতি চলছে। হাটের প্রধান দুই প্রবেশ গেটে দুটি বড় তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। শ্রমিকরা সারি সারি করে বাঁশের খুঁটি ও তাঁবু স্থাপনের কাজ করছেন। বৃষ্টির কবল থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, ‘ছয়টি হাটে কোনও দরপত্র জমা পড়েনি। এগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চূড়ান্ত হওয়া হাটগুলোতে ঈদের দিনসহ চার দিনের জন্য হাট বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে ইজারা প্রাপ্তরা ৬-৭ দিন আগ থেকে হাটের প্রস্তুতি নিতে পারেন।’ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আগেভাগেই হাট বসানোর বিষয়ে কিছুই জানা নেই বলেও জানান তিনি।

দক্ষিণের ইজারা হওয়া সাতটি হাট হলো—মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, জিগাতলার হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর সংলগ্ন খালি জায়গা।

পশুর হাটের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আকষর্ণীয় তোরণ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) প্রথমে ১০টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরমধ্যে হজ যাত্রীদের সুবিধার্থে হাজিক্যাম্প সংলগ্ন আশিয়ান সিটি হাউজিং হাটটি বাতিল করা হয়েছে। এই হাটটিতে কোনও দরপত্রও পড়েনি। বাকি ৯টি হাটের মধ্যে ৮টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। উত্তর খানের ময়নারটেক হাটে কাঙ্ক্ষিত দরপত্র জমা না পড়ায় এটি এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। বাকি হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে—উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর ডিওএইচএস-এর উত্তর পাশের সেতু প্রোপার্টিসংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-২ (ইস্টার্ন হাউজিং)-এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কসংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, আশিয়ান সিটি হাউজিং, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) হাট, তেজগাঁও শিল্প এলাকার পলিটেকনিক্যাল কলেজ মাঠ এবং উত্তরখান হাট। এরমধ্যে উত্তরখান হাটটির ইজারা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। পুনরায় সেটির টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে বলে ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী ছাড়া কোনও হাটে এখনও কোরবানি পশু ওঠেনি। হাট প্রস্তুত করার জন্যও কাউকে এখনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে  ঈদ যেহেতু নিকটে চলে এসেছে, কেউ কেউ প্রস্তুত করতে পারেন। আমরা সাধারণত সাতদিন আগে এ অনুমতি দিয়ে থাকি। তবে হাটের কারণে যদি জনসাধারণের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’

সূত্রের দাবি, বরাবরের মতো এবারও ইজারা হওয়া হাটগুলো সিন্ডিকেটের দখলে রয়েছে। দফায় দফায় টেন্ডার আহ্বান করেও কাঙ্ক্ষিত দর মেলেনি। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় সবক’টি হাটেরই দরপত্র কম পড়েছে। সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে সিটি করপোরেশন অনেকটা বাধ্য হয়েই কম দরে হাট ইজারা দিচ্ছে।

দুই করপোরেশনের ৮টি হাটের জন্য তিন দফায় টেন্ডার আহ্বান করেও কাঙ্ক্ষিত কোনও ইজারা মূল্য পাওয়া যায়নি। ওই হাটগুলোর বিষয়ে এখনও সিটি করপোরেশন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও এসব হাট বসানোর প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। সিন্ডিকেট ধরেই নিয়েছে খাস আদায়ের জন্য তারাই হাটগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। ফলে দুই সিটি করপোরেশন গত বছরের তুলনায় কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩টি অস্থায়ী হাটের ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৫ টাকা। ডিএনসিসির সাতটি পশুর হাটের সরকারি ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৮৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৭ টাকা।

এদিকে, ঢাকার হাটগুলোতে পশু কেনাবেচার জন্য রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার খামারিরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু আনতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে কিছু কিছু গরু বিক্রিও হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছেন ইজারাদাররা।

 

/এপিএইচ/চেক/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
পানিতে ডুবে ভাইবোনসহ ৩ শিশুর মৃত্যু
পানিতে ডুবে ভাইবোনসহ ৩ শিশুর মৃত্যু
‘এমপি হতে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এটা তুলবো, এটুকু অন্যায় করবো-ই’
‘এমপি হতে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এটা তুলবো, এটুকু অন্যায় করবো-ই’
সর্বাধিক পঠিত
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা