X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্ত্রীর নৃশংসতার নেপথ্যে স্বামীর পরকীয়া

শেখ জাহাঙ্গীর আলম
১৮ আগস্ট ২০১৮, ০৪:৪৭আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৮, ২৩:৪৯

জোসনা বেগম ও তার স্বামী স্বপন মিয়া

দীর্ঘ ১৮ বছরের দাম্পত্য জীবন স্বপন-জোসনার। পারিবারিকভাবেই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে রয়েছে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। তবে সংসারে স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন স্বপন। তখন থেকেই স্ত্রী-সন্তানদের খরচ বহন করলেও সংসারের প্রতি অনেকটা উদাসিন ছিলেন তিনি। আর এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ চলতে থাকতো। এসব কলহের কারণে জোসনার ওপর শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও নানা ধরনের মানসিক অত্যাচার করতো স্বপন। স্বামীর পরকীয়া ও নির্যারতন সইতে না পেরেই জোসনা এমন নৃশংসতার পথ বেছে নেন বলে দাবি করেছে তার স্বজনরা।

শুক্রবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগের একটি বাসায় দুই সন্তানকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে কুপিয়ে আহত করেন স্ত্রী জোসনা আক্তার (৩০)। এরপর পাশের ঘরে দিয়ে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। আহত আবু সাঈদ স্বপন (৪০) এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুই সন্তান সাজিদ হোসেন ইফতি (১৫) ও সানজিদা আক্তার জোহাকে (৭) প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দিয়েছে চিকিৎসক। আর ময়নাতদন্তের জন্য নিহত জোসনার লাশ ঢামেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। 

পুলিশ বলছে, স্বামীর পরকীয়া প্রেমের জেরেই জোসনা আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া চলছিল। শুক্রবার সকালে জোসনা কৌশলে তার দুই সন্তানকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দিয়ে অচেতন করে ফেলেন। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার স্বামী ঘাড়ে ও গলায় আঘাত করলে স্বপন রক্তাক্ত হয়ে যায়। জোসনা পাশের রুমে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস নেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বজনরা দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে যায়। 

স্বপনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী গ্রামে। তিনি রাজধানীর বেইলি রোডে চেইন স্টোর ইনফিনিটি’তে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। তাদের ছেলে সাজিদ হোসেন ইফতি মতিঝিল মডেল স্কুলের ৯ম শ্রেণিতে ও মেয়ে সানজিদা আক্তার জোহা মতিঝিল সরকারি আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পাঁচ বছর ধরে তারা যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগের ২৫ খ/১ মোসাম্মৎ ফিরোজা বেগমের বাড়ির ৫ম তলার দুই রুমের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। 

নিহত জোসনার পরিবারের অভিযোগ, স্বপন প্রতি সপ্তাহে দুইদিন বাড়িতে বাইরে থাকতেন। জানতে চাইলে ব্যবসার কাজে বাইরে থাকেন বলে পরিবারকে জানান তিনি। কিন্তু ওই সময় তিনি অন্য এক নারীর সঙ্গে গোপনে পরকীয়ায় সম্পর্ক চালাতেন। সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে স্বপন বাসায় থাকলেও স্ত্রী-সন্তানদের তেমন খোঁজ-খবর নিতেন না। এক পর্যায়ে তাদের এই সম্পর্ক জোসনার কাছে ধরা পড়ে যায়। এনিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ বেঁধে যেতো। ওই সময় স্বপন স্ত্রীকে মারধরসহ নানা ধরনের মানসিক অত্যাচার করতেন। এছাড়া সন্তানদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করতেন তিনি। এতকিছুর পরও তিনি জোসনা স্বামীকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ওই বিষয়ে কথা বলতে গেলেই জোসনাকে মারধর করতেন স্বপন।  বিষয়টি স্বপনের পরিবারকে জানানো হলেও তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। এদিকে স্বপনের পরকীয়ার প্রেমিকাও নানা সময় ফোন করে জোসনাকে গালমন্দ করতো।

নিহত জোসনার বোনের মেয়ে পান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আমার খালাতো ভাই ইফতি (জোসনার ছেলে) ফোন করে বলে, ‘আপু তোমরা কোথায়? তাড়াতাড়ি বাসায় আসো, আম্মু-আব্বু ঝগড়া করেছে। পরে আব্বুকে কুপাইছে আম্মু,  ঘরের দরজা আটকে রেখেছে।‘ এই খবর শুনে দুই মিনিটের মধ্যে দৌড়ে আসি। ঘরের দরজা খুলে দেখি  খালু রক্তাক্ত অবস্থায় খাটে পড়ে আছে। আর পাশের ঘরের দরজা লাগানো। পরে আশেপাশের মানুষদের খবর দিয়ে ওই ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে যেতেই দেখি খালামনি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে।’’

নিহত জোসনার বড় বোন আবেদা সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জোসনা বোনদের মধ্যে সবার ছোট। সংসারে স্বামীর সুখ পায়নি। নির্যাতন আর জ্বালাতনে তার দিন কাটতো। স্বপনের পরকীয়া বিষয়ে কেউ কিছু বলতে গেলেই সে ক্ষেপে যেতো। এমনকি জোসনাকে তালাক দেওয়ারও হুমকি দিতো সে। তালাকের ভয়ে জোসনা সব সহ্য করে সংসার করছিল।  তিনি বলেন, ‘স্বপন বিদেশে থকাতো। দেখতে সুন্দর ও ভালো ছিল। ২০০০ সালে পারিবারিকভাবেই স্বপনের সঙ্গে জোসনার বিয়ে হয়। পরে সে আবার বিদেশে যায়। ২০০৬ সালের দিকে সে দেশে ফিরে আসে। এরপর সে দেশেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে আসছে। বিয়ের পর বেশ কয়েক বছর ভালই চলছিল ওদের সংসার। কিন্তু স্বপন এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাদের এই সম্পর্ক জোসনার কাছে ধরা পড়ে যায়। পরে আমরা জানতে পারি। এই নিয়ে প্রায় ওদের মাধে কলহ হতো। স্বপন জোসনাকে ঘরে বুয়ার মত রাখতো, আর ওই নারীর সঙ্গে দেখা করতো।’

আবেদা সুলতানা আরও বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে চলার পর তিন বছর ধরে স্বপনের পরকীয়া প্রেম নিয়ে সমস্যা বাড়তে থাকে। আর গত এক বছর ধরে জোছনার ওপর অত্যাচারের মাত্রাও বাড়তে থাকে। আমরা স্বপনের পরিবারকে বিষয়গুলো জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

যাত্রাবাড়ীর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পারিবারিক কলোহের কারণ হিসেবে স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আমরা নিহতের পরিবারের স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে এই ঘটনায় আর অন্য কোনো কারণ আছে কিনা, তাও খুঁজে দেখা হচ্ছে।

স্বপনের ভাড়া বাসার মালিকের জামাতা শাহ আলম খান বলেন,  ৫ বছর ধরে তারা এই বাসায় ভাড়া থাকেন। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের খুব একটা দেখা সাক্ষাৎ হয় না।  তাদের পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারা জানান, তারা খুব বেশি মানুষের সঙ্গে মিশতো না। তবে যতটুকু দেখছি তারা ভালোই ছিল। কোনও পারিবারিক কোনো কলহ ছিল কিনা তা তাদের জানা নেই।

/আরএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী