X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানবপাচারের অভিযোগে তেজগাঁও কলেজের শিক্ষক গ্রেফতার

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ আগস্ট ২০১৮, ১২:২২আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৭:২৫

মানবপাচারের অভিযোগে আটক শিক্ষক মানবপাচারের অভিযোগে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি। ওই শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ আছেম (৩৫)। সোমবার (২০ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘আছেমের বাবা ও বড় ভাই দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া রয়েছেন। এই সুবাদে সে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। কক্সবাজার ও টেকনাফ দিয়ে সাগরপথে অবৈধভাবে শত শত মানুষকে তারা মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে। মালয়েশিয়া পাঠানোর পর বিভিন্ন ব্যক্তিকে তারা আটকে রেখে নির্যাতন এবং বাংলাদেশে থাকা তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করতো। আছেম মুক্তিপণের টাকা তার আত্মীয়-স্বজন, মা ও নিজের অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছে- এমন তথ্য আমরা পেয়েছি।’

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের গডফাদার মোহাম্মদ আছেম। আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারীরা কক্সবাজার সাগর চ্যানেল দিয়ে গত কয়েক বছরে হাজার হাজার মানুষকে মালয়েশিয়ায় পাচার করেছে। সাগরপথে মালয়েশিয়ার যাওয়ার সময় অনেক বাংলাদেশি মারাও গেছেন। এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ। তারা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার-থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ায় সাগরপথে মানবপাচার করে মুক্তিপণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই সংঘবদ্ধ চক্রটি কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করছে। তারা গ্রুপ হয়ে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। ২০১৪ সালে এই চক্রের সদস্যরা সিরাজগঞ্জের মাসুদকে মালয়েশিয়ায় পাচার করে। এরপর পাচারকারীরা ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা দারি করে। পরে মাসুদের বাবা আব্দুল ছালাম ইসলামী ব্যাংকের মহাখালী শাখার একটি অ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা পাঠায়। কিন্তু এরপরও তার ছেলে মুক্তি না পাওয়ায় এই ঘটনায় তিনি উল্লাপাড়ায় একটি মামলা করেন। সিআইডি এই মামলাটি তদন্ত করে জানতে পারে একটি আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ চক্র এই পাচারের সঙ্গে জড়িত। এভাবে মানুষ পাচার করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। এরপর সিআইডি অর্থ লেনদেনের প্রবাহ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লিংক চার্ট থেকে একে একে জড়িতদের খুঁজে পায়। এরপর গত বছরের ২ মে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক খান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এরপর তদন্ত করে পুলিশ মানবপাচারচক্রের সব সদস্যের পরিচয় জানতে পারে।’

মোল্লা নজরুল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারীচক্রের বাংলাদেশের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী মূলহোতা মোহাম্মদ আছেম। তাকে গত ১৯ আগস্ট কাওরানবাজার এলাকা থেকে সিআইডি গ্রেফতার করে। আছেমের বাবা আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় ছিলেন এবং তার বড় ভাই মোহাম্মদ খোবায়েদও মালয়েশিয়ায়। এই সুবাদে তারা আন্তর্জাতিক মানবপাচারচক্রের সঙ্গে যোগ দেয়। আছেম ২০১০ সালে তাদের সঙ্গে মানবপাচারের কাজ শুরু করে। আছেম ও তার ছোট ভাই জাভেদ মোস্তফা মানবপাচারের জন্য প্রথমেই বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় দালাল নিয়োগ করে। দালালরা লোক ঠিক করে নিয়ে আসে। এরপর তাদের কাছ থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার খরচ নিয়ে টেকনাফে নিয়ে যাওয়া হয়। টেকনাফ থেকে ট্রলারে করে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে রাখা হয়। সেখানে পাচারকৃত লোকদের আটকে রাখে। এরপর নির্যাতন করে বাংলাদেশে থাকা তাদের স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ চায়। এরপর আছেম ও তার সহযোগীরা মুক্তিপণ আদায় করে। আর যারা মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হয় তাদের থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মেরে ফেলা হয়। নেওয়ার পর তাদের হত্যা করা হয়।’

চক্রটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিতো। এছাড়াও নগদ ক্যাশ নিয়ে থাকে। আছেম, তার ছোট ভাই মোস্তফা, মা খাদিজা বেগম এবং তার সহযোগী আরিফ, একরাম, ওসমান সারোয়ারের নামে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফে বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তারা এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা সংগ্রহ করে বলেও জানিয়েছে সিআইডি।

আছেম মানবপাচারের টাকায় রাজধানীতে এসিএম করপোরেশন নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সি খুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টেও অনেক টাকা রেখেছে। সেগুলো এই প্রতিষ্ঠানের ফাইন্যান্স ম্যানেজার আরিফুজ্জামান আকন্দ ওরফে আরিফ তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছে বলেও সিআইডি অভিযোগ করেছে।

মোল্যা নজরুল বলেন, ‘আছেম পাচারের টাকা দিয়ে টেকনাফে বাড়ি ও জমি কিনেছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়ও জমি কিনেছে। এগুলো সব অবৈধ টাকা।’

আছেম বর্তমানে পূর্ব রাজাবাজারে বসবাস করেন। তিনি তেজগাঁও কলেজের বিবিএ ডিপার্টমেন্টের প্রভাষক। তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মৌলভীপাড়া এলাকায়। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং ও মানবপাচারের তিনটি মামলা আছে। একটি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানায়, একটি রাজধানীর বনানী এবং অপর মামলাটি বাজিতপুর থানায় মানবপাচার আইনে করা হয়েছে। পাঁচদিন আগে তাকে সিআইডি গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু তিনদিনের মাথায় তার জামিন হলে সে আবার বের হয়ে আসে।

/এআরআর/এসটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা