X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

১০ দিনের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে গেলো প্রশ্নফাঁস চক্রের হোতারা

নুরুজ্জামান লাবু
২০ আগস্ট ২০১৮, ২২:০২আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৮, ০৯:৫৯

আলিপ, মোস্তফা, ইব্রাহীম ও বাঁধন

গ্রেফতার হওয়ার ১০ দিনের মাথায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেলো প্রশ্নফাঁস চক্রের মূল হোতাসহ ছয়জন। তারা হলো চক্রের মূল হোতা আলিপ কুমার বিশ্বাস, ইব্রাহীম মোল্লা, আইয়ুব আলী বাঁধন, মোস্তফা কামাল ও হাসমত। গত ৯ আগস্ট রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। রবিবার (১৯ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পায় তারা।
সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, এই চক্রটিকে খুঁজে বের করতে প্রায় একবছর সময় লেগেছে। কিন্তু গ্রেফতারের পর আসামিরা দ্রুত আদালত থেকে জামিন পেয়ে গেলো। এভাবে জামিন পেয়ে গেলে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো অসম্ভব হয়ে যাবে।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, ‘কোর্টের জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আছে। তবু এসব স্পর্শকাতর মামলায় এত তাড়াতাড়ি আসামিরা জামিন পেয়ে গেলে অন্য অপরাধীরা অপরাধ করতে উৎসাহিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক জামিন পেলেই কিন্তু মামলা শেষ হয়ে যায় না। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দেবে। চার্জশিটের পরে মামলার ট্রায়াল শুরু হবে। ট্রায়াল শেষে বিচারে তাদের শাস্তি হবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।’

তাপস কুমার পাল বলেন, ‘এসব মামলার ক্ষেত্রে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার কর্মকর্তারা আমাদের আগে থেকেই জানালে আমরা কোর্টে আর্গুমেন্ট করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের জানানো হয়নি।’

মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষাসহ চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলে আসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যদের ধরতে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। গত বছরের ২০ অক্টোবর প্রশ্নফাঁস চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতারের পর শাহবাগ থানায় একটি মামলা (নং ২৬) দায়ের করে পুলিশ। সেই মামলার তদন্তের সূত্র ধরেই গত ৯ আগস্ট রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নয়জনকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। এই মামলায় সিআইডি মোট ৩৭ জনকে গ্রেফতার করেছিল।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রেফতার নয়জনের মধ্যে আলিপ কুমার বিশ্বাস ছিল চক্রের মূল হোতা। আলিপ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিল। বিকেএসপিতে চাকরিরত অবস্থাতেই গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল। তার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিল। এছাড়া ইব্রাহীম ৩৬তম বিসিএসে নন-ক্যাডার হিসেবে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত এবং আইয়ুব আলী বাঁধন ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
এরা সবাই নিজেদের চাকরির পরীক্ষায় অসুদপায় অবলম্বন করে প্রশ্ন নেওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নফাঁস চক্র গড়ে তুলেছিল। জামিন পাওয়া হাসমত ধানমন্ডি গর্ভনমেন্ট বয়েজ স্কুলের পিওন। সে-ও এই চক্রের হয়ে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে চক্রের সদস্যদের কাছে সরবরাহ করতো।
প্রশ্নফাঁস চক্রের মূল হোতাদের গ্রেফতারের পর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এই চক্রটি গত কয়েক বছরে প্রশ্ন ফাঁস করে কোটি টাকা আয় করেছে। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে চারজনের প্রায় ১০ কোটি টাকার নগদ অর্থ ও সম্পদের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি।

গ্রেফতার হওয়া ইব্রাহীম আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছিল, ‘২০১৪ সালের শেষের দিকে মোস্তফা কামালের সাথে আমার পরিচয় হয়। সে আমাকে বলে, একটা কাজ করে দিবেন ১০/১৫ মিনিট সময় লাগবে। বিনিময়ে ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকা পাবেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, বিভিন্ন ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষার দিন সকালে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে প্রশ্ন সমাধান করে দিবেন। প্রথমে না করলেও পরর্বীতে লোভে পরে তার কথায় আমি রাজি হই।’

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ইব্রাহীম বলে, ‘২০১৫ থেকে ২০১৮ সালে আমি বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রুপালী, সোনালি ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের অফিসার পদে, পরিসংখ্যান ব্যুরোর কম্পিউটার অপারেটর ও এমএলএসএস পদে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএলএসএস পদে, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের কর্মকর্তা ও ক্যাশিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ব্লক সুপার ভাইজার পদে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৃতীয় শ্রেণির নিয়োগের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বহু লোককে চাকরি পাইয়ে দিয়েছি।’

আদালতে দেওয়া ইব্রাহীমের ভাষ্য, ‘জালিয়াতের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ আমার নিজের নামে, বউ তাবাস্সুম মুস্তারি, বোন রহিমা খানম রিপাসহ বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে লেনদেন করি। এছাড়াও বিকাশ অ্যাকাউন্টেও টাকা লেনদেন করি। এই টাকা দিয়ে আমি গ্রামের বাড়িতে পাঁচ বিঘা জমি, ১০ কাঠা জমির ওপর একটি দোতলা বাড়ি, খুলনায় সাড়ে ছয় শতাংশ জমির ওপর চারতলা একটি ভবন (ওমেগা রিয়েল এস্টেট), একটি হোন্ডা ভেজেল গাড়িসহ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫২৬৮৫) নানা বৈষয়িক বিষয়াদি ক্রয়ে ব্যয় করেছি।’

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)