X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানিতে ১২০০ পশুর মাংস প্রক্রিয়াজাত করে বেঙ্গল মিট

সাদ্দিফ অভি
২২ আগস্ট ২০১৮, ০৪:০৭আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৮, ০৫:৫২

ঈদুল আজহা সামনে রেখে গেল বছর অনলাইনে ২১২টি গরু বিক্রি করে বেঙ্গল মিট। এবারে সেই সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া প্রতিবছর কর্পোরেট ক্লায়েন্টসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির সময়ে ১হাজার থেকে ১২শ গরুর মাংস প্রক্রিয়াজাত করতে হয় প্রতিষ্ঠানটির। শুধু অনলাইন অর্ডারে ঈদের দিনই ৮০টি কোরবানির পশুর মাংস প্রক্রিয়াজাত করতে হবে তাদের। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং এইচ ইউ এম মেহেদী সাজ্জাদ বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

বেঙ্গল মিটের কারখানায় মাংস প্রক্রিয়াজাতের কাজ চলছে

বেঙ্গল মিটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতবছরের তুলনায় এবছর বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ। অনলাইনে পশু বিক্রির ক্ষেত্রেও এবার প্রচুর সাড়া পেয়েছে তারা। গত ২৫ জুলাই থেকে ১৬ আগষ্ট পর্যন্ত বিক্রয়ের সময়সীমা থাকলেও ১৪ আগষ্টের মধ্যে সব গরু বিক্রি হয়ে যায়।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, অনলাইনে বিক্রি হওয়া এসব গরু ঈদের পাঁচ দিন আগে থেকে শুরু হওয়া সরবরাহ শেষ হয়েছে ১৯ আগষ্ট। পশু সরবরাহের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে মেহেদী সাজ্জাদ বলেন, অনলাইনে কিংবা আমাদের যেকোনো আউটলেটে জীবিত পশুর  বুকিং দেওয়ার পর ঈদের পাঁচ দিন আগে আমরা সরবরাহ শুরু করি। কেবলমাত্র ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে নির্দিষ্ট চার্জের বিনিময়ে গ্রাহকের বাসায় পশু পৌঁছে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম এবং সিলেটে চার্জ ৬ হাজার টাকা এবং ঢাকায় ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোরবানির প্রতিটি পশু সরবরাহের আগে বেঙ্গল মিটের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় জানিয়ে  তিনি বলেন, তখন সমস্যা চিহ্নিত হলে ক্রেতাকে জানানো সাপেক্ষে তার অর্ডার পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। মেহেদী সাজ্জাদ জানান, ঈদের দিন এবং তার আগের দিন কোনও ডেলিভারি করা হয় না। বেঙ্গল মিটে ছাল ছাড়ানো মাংস

জীবিত পশু বিক্রি ছাড়াও বেঙ্গল মিট কোরবানির গরুর মাংস হালাল উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয় বলে জানান মেহেদী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তবে এই সেবা শুধু ঢাকাতেই দেওয়া হয়। তিনি জানান, ঈদের দিনে পাবনার কাশিনাথপুরে আমাদের কারখানায় কোরবানির কাজ করা হয়। ঈদের দুই দিন আগ পর্যন্ত মাংস প্রক্রিয়াজাতের অর্ডার নেওয়ার পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই কাজের সার্ভিস চার্জ গরুর দামের উপর নির্ভর করে। এছাড়া ডেলিভারি চার্জও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে।

প্রক্রিয়াজাত করা মাংস কিভাবে ক্রেতার কাছৈ পৌঁছানো হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি পশু কোরবানির পর প্রতি কেজি মাংস ১৭ থেকে ১৮ টুকরো করে ৫ কেজি করে এক একটি প্যাকেট তৈরি করা হয়। আর তিনটি প্যাকেট মিলে একটি কার্টনে তোলা হয়। মাংসের পাশাপাশি লিভার, হার্ট, ফুসফুস, কিডনিসহ অন্য আনুসঙ্গিকগুলো আলাদা প্যাকেট করা হয়। মাথার মাংস, নলি এবং মগজ আলাদা করে প্যাকেট করা হয়। তবে গরুর ভুঁড়ি এবং চর্বি আমরা ফেলে দেই, কিন্তু গ্রাহকের আগে থেকে চাহিদা থাকলে ঈদের পাঁচ দিন পর গ্রাহকের ঠিকানার নিকটস্থ আউটলেটে তা পৌঁছে দেওয়া হয়। চলছে প্যাকেটজাত করার কাজ

বেঙ্গল মিটের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয় কোরবানির মাংস প্রক্রিয়াজাতের চাহিদা বেশি থাকার কারণে সবগুলো স্লট পূর্ণ হয়ে গেছে। নতুন করে ঈদের দ্বিতীয় দিনের স্লট খোলা হয়েছে। এগুলোর ডেলিভারি দেওয়া হবে ঈদের তৃতীয় দিন। এছাড়া ঈদের দিন ৮০টি গরুর মাংস প্রক্রিয়াজাতের কাজ হবে। এসব কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রায় কাশিনাথপুরের কারখানায় ১৫০ জন নিযুক্ত থাকবে।

মাংস প্রক্রিয়াজাতকরনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায়, নির্দিষ্ট কিছু গরু সরবরাহকারী আছেন যাদেরকে বেঙ্গল মিটের পক্ষ থেকে গরু পালনের স্বাস্থ্যগত ও নিরাপদ পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে গরু সংগ্রহ করে কয়েক সপ্তাহ নিবিড় পরিচর্যা করে বেঙ্গল মিট। তারপর পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে জবাইয়ের জন্য পাঠানো হয়ে থাকে। জবাই করার পর স্বাস্থ্যগত কারণে ভালোমতো রক্ত ঝরানো ও পশুর শরীর থেকে সকল বর্জ্য সরিয়ে ফেলা হয়। ঠাণ্ডা এবং গরম পানিতে পশুটি ধুয়ে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে চামড়া এবং অতিরিক্ত মেদ আলাদা করা হয়। এরপর গরুর মাংস নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় হিমঘরে। পরে এই হিমঘর থেকে বের করে নিয়ে এসে মাংস টুকরা করা ও প্যাকেটজাত করা হয়। দক্ষ শ্রমিকের হাতে টুকরো হয় মাংস

এসব প্রক্রিয়ায় প্রশিক্ষণ এবং তদারকির কাজ করে থাকেন অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা বেঙ্গল মিটের একজন পরিচালক ওয়েইন গ্যাস্কেল। বেঙ্গল মিটের কসাইখানার ডিজাইন তিনি নিজে করেছেন। এর পাশাপাশি কর্মচারীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে তারই তত্ত্ববাধায়নে। সারাদেশে বেঙ্গল মিটের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র আছে ৩৭টি আর নিজেদের আউটলেট আছে ১০টি।  মহিষ ছাড়া বাকি সব হালাল মাংসই বেঙ্গল মিট প্রক্রিয়াজাত করে থাকে। সাদা মাংসের পাশাপাশি বেঙ্গল মিটের প্রসেস করা মাংস বিভিন্ন রেসিপির সমন্বয়েও বাজারজাত করা হয়ে থাকে। দেশের বাজারের সঙ্গে রেসিপি সমন্বয় করার জন্য একজন এক্সিকিউটিভ শেফের আলাদা একটি টিম আছে বেঙ্গল মিটের।  

বেঙ্গল মিটের প্রক্রিয়াজাত মাংসের ৪২ শতাংশ যায় কর্পোরেট ক্লায়েন্টদের কাছে। দেশের বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেল যেমন সোনারগাঁও হোটেল, রেডিসন, ওয়েস্টিন, লে মেরিডিয়ান, দ্য গ্র্যান্ড সুলতানসহ অনেক রেস্টুরেন্টেও বেঙ্গল মিট সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এর পাশপাশি বেঙ্গল মিট রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশেও। দুবাই এবং মালদ্বীপে বেঙ্গল মিটের মাংস রফতানি করা হয়ে থাকে। গ্রাহকের বাসায় পৌঁছে প্যাকেটজাত মাংস

বেঙ্গল মিটের বিক্রি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে মেহেদী আরও বলেন, আগে আমরা যেখানে ১৫০ থেকে ২০০ টনের মতো মাংস প্রক্রিয়াজাত করতাম এখন ৩০০-৩৫০ টন মাংস প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা এই পরিমাণ আরও বাড়াতে নতুন এলাকায় বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে নিরাপদ মাংস নিয়ে আসাই আমাদের লক্ষ্য।

মেহেদী বলেন, ১২ বছর আগে কারখানা চালুর সময়ে রফতানির চেয়ে দেশের বাজার ধরতে চেয়েছিলাম। এখন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ব্যবসা দাঁড়িয়ে যাওয়ায় এখন ব্রাজিল ও ভারতের মাংস রফতানির বাজারে আমরা প্রতিযোগিতা করতে চাই।

/জেজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা