X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুরনো কারাগারে স্থাপিত আদালতকে যে কারণে উন্মুক্ত বলছেন না খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা

জামাল উদ্দিন
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:৩৯আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:২০

পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (ফাইল ছবি) সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ছাড়া পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনে আদালত স্থাপন করা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী বলে আদালতে দেওয়া আবেদনে উল্লেখ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। আদালতকে তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই এখানে আদালতের কার্যক্রম চলতে পারে না।’ অন্যদিকে বেশ কিছু কারণ তুলে ধরে এ আদালতে বিচারিক কার্যক্রম না চালাতে আদালতের কাছে আবেদন করেছেন এ মামলার আরেক আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। তিনি আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া তার আবেদনে বলেন, ‘পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সরকারের গেজেট করায় এবং সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ছাড়া এ আদালত গঠন আইনবিরোধী ও সংবিধান পরিপন্থী। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।’

জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের সময় বাড়ানো প্রয়োজন উল্লেখ করে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে বলেন, ‘খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত তিনি। স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। অসুস্থতার কারণে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান, পরে দেশে ফিরে আসেন। তার বয়স ৭৪ বছর। হাতে-পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। চোখের রোগেও আক্রান্ত। হার্টেও সমস্যা রয়েছে।বাম পা ঠিকমতো রাখতে পারেন না। প্যারালাইজড হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। বাম হাতে অনেক ব্যথা। ফলে তার জামিন বাড়ানো উচিত। তার চাহিদা অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসা হওয়াও জরুরি।’

পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে আদালত স্থাপন করায় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত আদালত আইনসম্মত নয় দাবি করে এ আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিচালনা না করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান এ মামলার দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। এজন্য তিনি বেশ কিছু কারণও তুলে ধরেন আদালতের কাছে। লিখিত আবেদনে তিনি বলেন, ‘এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত আধাপাকা টিনশেড ভবনকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয়। ওইস্থানে মামলা পরিচালনার জন্য ড. মো. আখতারুজ্জামানকে স্পেশাল জজ নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই প্রজ্ঞাপন জারি থাকা অবস্থায় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষটিকে বর্তমানে আদালত ঘোষণা করে বিচার কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ জারি করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ আদালতে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটক পার হয়ে আসতে হয়। ফটকটি সার্বক্ষণিক তালাবদ্ধ থাকে। কারা-কর্তৃপক্ষ কিংবা কারারক্ষীদের অনুমতি ছাড়া এ আদালতে কারও প্রবেশের কোনও সুযোগ নেই। মামলায় নিয়োজিত আইনজীবীদেরও কারারক্ষীদের অনুমতি নিয়ে আদালতে প্রবেশ করতে হয়। সেক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের এ আদালতে প্রবেশ কিংবা বিচার কার্যক্রম দেখা বা শোনার কোনও সুযোগ নেই। এ আদালতে প্রবেশের চার থেকে পাঁচশ’ গজ দুরে আইনজীবীদের গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। এ কারণে মামলার ভারী ফাইলপত্র ও বই-পুস্তক বহন করে এ আদালতে আসা আইনজীবীদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ 

আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতকে আরও বলেন, ‘এ আদালতের কক্ষটি পাশে আনুমানিক ১২ ফুট ও দৈর্ঘ্যে ২৪ ফুট হবে। এই ছোট কক্ষে বিচারকের আসন, আইনজীবীদের বসার স্থান, পিপি, সাক্ষী ও বিচার প্রার্থীদের বসার স্থানসহ আদালতের স্টাফ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান বা বিচার কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ মোটেও সম্ভব নয়। এমন একটি কক্ষকে উন্মুক্ত আদালত বলার কোনও অবকাশ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানের ৩৫(৩) এবং ফৌজধারি কার্যবিধির ৩৫২ ধারা মোতাবেক আদালত বলতে একটি উন্মুক্ত আদালতের কথা বলা হয়েছে। যেখানে যেকোনও মানুষের সাধারণভাবে প্রবেশাধিকার থাকে। কিন্তু এ কক্ষটি সংবিধানের এ ধারা মোতাবেক উন্মুক্ত আদালত হতে পারে না। এখানে স্বাভাবিক শ্বাস-নিশ্বাস নেওয়ার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই। এ মামলায় নিয়োজিত আইনজীবীরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আদালত কক্ষে কিছুক্ষণ অবস্থান করলে দমবন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘বেআইনিভাবে গঠিত এ আদালত ও বিচারিক কার্যক্রম স্থানান্তর প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতির বরাবরে একটি আবেদন করা হয়েছে।’ এ অবস্থায় আইনসম্মত আদালত প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত ন্যায় বিচারের স্বার্থে এ মামলার কার্যক্রম কমপক্ষে একমাস স্থগিত রাখার আবেদন করেন এই আইনজীবী।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল অবশ্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের এসব বক্তব্যকে আষাঢ় মাসের গল্প বলে অভিহিত করেন। আদালতকে তিনি বলেন, ‘আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য আমার কাছে মনে হয়েছে আষাঢ়ে গল্প। এটা এখন আর কারাগার নেই। সাবেক কারাগার।’ জবাবে তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লা মিয়া বলেন, ‘ঢাকা কোর্টে ৩৭ জন জেলা জজ রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকেকে এ ধরনের ৩৭টি আদালত করে দেওয়া হোক। প্রধান ফটকের বাইরে এখনও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার লেখা রয়েছে।’ 

উল্লেখ্য, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তখনকার একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। মামলার আগে থেকেই হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন।

পুরানো কারাগারে আদালত বসানোর আগে মামলাটির কার্যক্রম রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে চলে আসছিল। এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি অপর আরেকটি মামলা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর এ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ আদালতের কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় সাবেক এই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারপাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে। গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম সেখানে আদালত বসে। ওইদিন খালেদা জিয়া আদালতে গিয়ে বিচারককে বলেন, তিনি অসুস্থ। বার বার তিনি এ আদালতে আসতে পারবেন না। যতদিন ইচ্ছা সাজা দিয়ে দিন। বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) ধার্য তারিখে আবার সেখানে আদালত বসে। কিন্তু সেখানে আসতে অস্বীকৃতি জানান খালেদা জিয়া।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী