X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৪১আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৫২

আদালত চত্বরে খালেদা জিয়া (ফাইল ফটো)

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলাটির বিচার কাজ চালাতে আইনগত কোনও বাধা নেই বলে আদেশ দিয়েছেন বিচারক আখতারুজ্জামান। আদালত বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে আসতে অনিচ্ছুক হওয়ায় এ মামলার অন্য আসামিদের ন্যায়বিচারের স্বার্থে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার বিচারকাজ চলবে।
তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, এ আদেশে তারা সংক্ষুব্ধ। এজন্য উচ্চ আদালতে যাবেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। সকালে বিচার কার্যক্রমের শুরুতেই আজ (বৃহস্পতিবার) কোনও আইনি ব্যাখ্যা শুনবেন না, আদেশ দেবেন বলে জানান মামলাটির বিচারক ড. আখতারুজ্জামান । একথা শুনে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতকে বলেন, আদালত যদি এভাবে আমাদের প্রত্যাখ্যান করেন তাহলে আমরা কার কাছে যাবো? এভাবে আদেশ দিলে তা হবে ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এভাবে আইনি ব্যাখ্যা না শুনে আপনি আদেশ দিতে পারেন না।

এরপরে আদালত আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনি ব্যাখ্যা শোনেন।

আমিনুল ইসলাম তার আইনি ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের কয়েকটি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত আদালতকে জানিয়ে বলেন, আমি একটা সিদ্ধান্তও পাইনি যে আসামি কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় আদালতে তার অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ চলতে পারে। আমরা আশা করি একটি আইনসম্মত আদেশ হবে। সাধারণ মানুষ মেসেজ পাবে যে এখানে একটি ন্যায়বিচার হচ্ছে।
আদালতে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, আমরা দুই আইনজীবী (অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ) ১৯ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছি। উনি আমাদের আদালতে আসতে অনিচ্ছুক এটা বলেননি। উনি বলেছেন, ‘আমি অসুস্থ, কীভাবে যাবো।’
সানা উল্লাহ মিয়া আদালতে আরও অভিযোগ করেন, কারা কর্তৃপক্ষ কাস্টডিতে কী লিখেছে সেটাও আমাকে জানানো হয়নি।
এরপর খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী আদালতের উদ্দেশে বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। আদালত যদি উনাকে (খালেদা জিয়া) বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার আদেশ দেন, তাহলে চিকিৎসা নিয়ে উনি আদালতে আসতে পারবেন। আর যেহেতু উনি আদালতের অধীনেই আছেন। তাই তাকে সুস্থ করে আদালতে আসার সুযোগ করে দিতে বিচারকের কাছে আবেদন করেন তিনি।
এরপর আদালত তার আদেশ দেন। এ আদেশে আদালত বলেছেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম চলবে। বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে এ রকম কোনও সিদ্ধান্ত নেই। ফলে তাকে পার্শ্ববর্তী দেশের উচ্চ আদালতগুলোর সিদ্ধান্তের দিকে তাকাতে হয়েছে।  এসময় তিনি রাজস্থান, উড়িষ্যা, অন্ধপ্রদেশ, এলাহাবাদ, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ এবং মহীশুর হাইকোর্টের বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন। এ আলোকে তিনি আদেশ দিয়েছেন বলেও জানান।
আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, খালেদা জিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে বিচারকে বিলম্বিত করার জন্য আদালতে আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আজও কাস্টডিতে লেখা আছে, তিনি আদালতে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তাই তার না আসার কারণে এ মামলার বিচার বিলম্ব হয়ে যাবে। তবে ন্যায় বিচারের স্বার্থে এ বিচার বিলম্বিত করার আর কোনও সুযোগ নেই। তাই খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ চলবে।
বিচারক তার আদেশের ব্যাপারে আরও জানান,  আদালত যদি সন্তুষ্ট হয় যে বিচার কাজ চালিয়ে যেতে কোনও অসুবিধা নেই বা এ মামলা এগিয়ে নিতে আইনগত কোনও বাধা নেই তাহলে আসামিপক্ষ কিংবা রাষ্ট্রপক্ষ দরখাস্ত দিলো কী দিলো না সে দিকে না তাকিয়ে আদালত সুয়োমোটোভাবে (নিজ উদ্যোগে) সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে বিশেষায়িত হাসপাতালের যে আবেদন সে ব্যাপারে  বিধি অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন তিনি।
দেড়টায় মুলতবির পর দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম আবারও শুরু হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, ‘আদালতের এ আদেশে  আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সংক্ষুব্ধ। আমরা এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে যাবো। যেহেতু বাংলাদেশে এ ধরনের কোনও নজির নেই এজন্য বাংলাদেশেও একটি সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।’
পরে আদালত আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করেন। ধার্য তারিখে মামলাটির অপর দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম  যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করবেন।
আদালতে দুদকের আইনজীবী ছিলেন মোশারফ হোসেন কাজল। খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার। অপর আসামিদের পক্ষে ছিলেন আমিনুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তখনকার একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। মামলার আগে থেকেই হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন।
পুরানো কারাগারে আদালত বসানোর আগে মামলাটির কার্যক্রম রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে চলে আসছিল। এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি অপর আরেকটি মামলা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ আদালতের কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় সাবেক এই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে। গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম সেখানে আদালত বসে। ওইদিন খালেদা জিয়া আদালতে গিয়ে বিচারককে বলেন, তিনি অসুস্থ। বারবার তিনি এ আদালতে আসতে পারবেন না। যতদিন ইচ্ছা সাজা দিয়ে দিন। বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) ধার্য তারিখে আবার সেখানে আদালত বসে। কিন্তু সেখানে আসতে অস্বীকৃতি জানান খালেদা জিয়া।
পরদিন ১৩ সেপ্টেম্বরও তিনি আদালতে না এলে বিচারক মামলাটির প্রধান আসামি খালেদা জিয়া আসবেন কিনা তা তার আইনজীবীদের কাছে জানতে চান। তখন তার আইনজীবীরা আদালতকে জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি ঠিক কী কারণে আদালতে আসতে চাইছেন না সেটি তার সঙ্গে কথা বললে জানা যাবে। এজন্য আদালতের কাছে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চান তার আইনজীবীরা। আদালত তখন তাদের দেখা করার ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষকে জেলবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন। এই আদেশ অনুযায়ী বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান তার আইনজীবীরা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি দীর্ঘদিন থেকেই বয়সজনিত বিভিন্ন রোগসহ আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। কারা কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বিএসএমএমইউ গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড গত ১৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে তাকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসকরা এজন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করলেও খালেদা জিয়ার নিজের পছন্দ ইউনাইটেড হাসপাতাল।

/জেইউ/ওআর/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া