X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫০০ টাকার ফোনের জন্য বাকপ্রতিবন্ধী ভিক্ষুককে খুন

আমানুর রহমান রনি
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:১৩আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:১৬

মাত্র ৫০০ টাকা দামের একটি মোবাইল ফোনের জন্যই খুন করা হয় ঢাকার তুরাগের বাকপ্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আকবর হোসেনকে (২৮)। ২০১৭ সালের বিশ্ব এজতেমা চলাকালে সারাদিন ভিক্ষা করে বাড়ি ফেরার পথে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় গ্রেফতার তিন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা জানিয়েছে। ওই জবানবন্দির পর তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রও জমা দিয়েছে পুলিশ। মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

৫০০ টাকার ফোনের জন্য বাকপ্রতিবন্ধী ভিক্ষুককে খুন

জানা যায়, গত বছরের ২১ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমায় ভিক্ষা করার জন্য বাড়ি থেকে বের হন তুরাগের বাকপ্রতিবন্ধী আকবর হোসেন। এরপর তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। ২২ জানুয়ারি পুলিশ তুরাগের পাকুরিয়া গ্রামের একটি মৎস্য খামারের ড্রেন থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। এই ঘটনায় নিহতের বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তুরাগ থানার উপপরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নিহত আকবর হোসেন বাকপ্রতিবন্ধী ছিলেন। শুনতে পেলেও কথা বলতে পারতেন না আকবর। শুধু মা বলে ডাকতে পারতেন। তুরাগের উত্তরপাড়া উলুদাহ এলাকায় তিনি পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন। কোনও কাজ করতে না পারায় ভিক্ষা করতেন তিনি। ২০১৭ সালের বিশ্ব ইজতেমা চলাকালীন প্রতিদিন তিনি ওই এলাকায় ভিক্ষা করতেন। ওই বছরের ২১ জানুয়ারি সকালে তিনি বাড়ি থেকে ভিক্ষা করার জন্য বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় তার হাতে পুরানো একটি  মোবাইল ফোন ছিল। মোবাইলটিতে কোনও সিম ছিল না। মেমোরি কার্ড দিয়ে গান শোনার জন্যই মোবাইলটি সঙ্গে রাখতেন আকবর।

শহীদুল ইসলাম আরও জানান, বাড়ি না ফেরায় আকবরের বাবা মোহাম্মদ আলী তাকে খুঁজতে থাকেন। পরের দিন ২২ জানুয়ারি দুপুরে ইজতেমার মুসল্লিরা তুরাগ থানার পাকুরিয়া গ্রামের ১৫ নম্বর সেক্টরের এ/১ ব্লকের দক্ষিণ পাশে সামসুল হকের মৎস্য খামারের পশ্চিমে রাজউকের পানির ড্রেনের নিচে একটা হাত দেখতে পান। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সেখানে যান মোহাম্মদ আলী। তিনি লাশের হাত দেখেই বুঝতে পারেন এটা আকবরের লাশ। পরে সেখানে উপস্থিত হওয়া পুলিশের সামনেই বালুর নিচ থেকে তিনি লাশ উদ্ধার করেন। ওই ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ওই দিনই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে মামলা করেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ধারণা করেছিল, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। নিহত আকবরের গলার দুই পাশে ছোলা জখম ছিল। এছাড়া তার ঘাড়ও মটকানো ছিল।

পুলিশ কর্মকর্তা শহীদু্ল ইসলাম বলেন, মামলাটির তদন্ত শুরুর পর ওই মৎস্য খামারে যারা আড্ডা দিতো তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। ওই তালিকার কয়েকজনকে ঘটনার পর থেকে সেখানে যেতে দেখা যায় না। কয়েকজনকে এলাকাও দেখা যায়নি। তাদের মধ্যে বিল্লাল হোসেন (২১) নামের একজনের খোঁজ নেওয়ার জন্য তার পরিবারকে চাপ দেয় পুলিশ। তবে তার পরিবারের কাছ থেকে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিল্লালকে গ্রেফতার করা হয়।

এসআই শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতারের পর বিল্লাল পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে হত্যার কথা স্বীকার করে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আরও দুজনের নামও জানায় সে। অন্য দুইজন হলো হাসু ওরফে হাসমত (৪৫) ও সুজন (২৬)। তাদেরও গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের সামনা-সামনি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার বিষয় বিস্তারিত বর্ণনা করে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী নিহত আকবরের মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়। মামলায় অভিযুক্ত তিন আসামির বাড়িই তুরাগ থানার পাকুরিয়া গ্রামে।

জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনাও দেয় এই তিন আসামি। বিল্লাল হোসেন আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, ‘আকবর মৎস্য খামারের কাছে আসার পর তার মোবাইলটি ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করি আমি, হাসু ওরফে হাসমত ও সুজন। আকবরের কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি সুজন জোর করে নিয়ে নেয়। আকবর বাধা দেওয়ায় তিনজন মিলে তাকে গলা টিপে হত্যা করি। হত্যার পর তার লাশ গুম করতে ঘটনাস্থলের পাশেই ড্রেনের সাইডে ফেলে বালুর বস্তা দিয়ে লাশ ঢেকে রাখি। এরপর আকবরের টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যাই।’ হাসু তার স্বীকারোক্তিতে বলেন, ‘মোবাইলটি ওই রাতেই ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তবে তাৎক্ষণিক নগদ ৪০০ টাকা পাই। রাতে তিনজন মিলে মাদক সেবন করি। এরপর যে যার মত করে বাড়িতে চলে যাই।’

মামলার বাদি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার ছেলে কানে শুনলেও কোনও কথা বলতে পারতো না। শুধু মা ডাকতে পারতো। ইজতেমায় ভিক্ষা করে বাড়ি ফেরার সময় তাকে হত্যা করেছে বিল্লাল, সুজন ও হাসু। এতো দিন জানতাম, বোবার কোনও শত্রু হয় না, কিন্তু আমার বোবা ছেলেরে তারা মেরে ফেলল। আমি এর বিচার চাই। আমি আদালতে একবার গিয়ে বলে আসছি, তারা হত্যা করছে।’ মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

/আরএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী