X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়ার ৩৬ মামলার বিচারিক কার্যক্রম যে পর্যায়ে আছে

বাহাউদ্দিন ইমরান
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:২৭আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:২৯

খালেদা জিয়া

হত্যা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, রাষ্ট্রদ্রোহসহ দুর্নীতি ও মানহানিকর বক্তব্যের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলো দায়ের হয়। এরপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা,নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাকি মামলাগুলো দায়ের করা হয়। বিচারিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে মামলাগুলো বিচারের কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন কথা বলে খালেদা জিয়ার একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে। তার আইনজীবীদের দেওয়া তথ্য অনুসারে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৩৬টি মামলার সর্বশেষ যে বিচারিক অবস্থায় রয়েছে তা হলো-

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাভোগ করছেন খালেদা জিয়া। বর্তমানে মামলাটির আপিল শুনানি হাইকোর্টে মুলতবি অবস্থায় রয়েছে। তবে এ মামলায় খালেদা জিয়াকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু আরও কয়েকটি মামলায় গ্রেফতারি আদেশ থাকার কারণে জামিনে বের হতে পারেননি তিনি।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক। পুরনো ঢাকার বকশিবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ঢাকা ৫ম বিশেষ জজ আদালত বসিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চালানো হলেও কারান্তরীণ খালেদা জিয়া মামলাটির শুনানির সময় উপস্থিত হতে না পারায় সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মামলাটির এজলাস নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের নিচতলার একটি কক্ষে পুনঃস্থাপন করে। গত ৫ সেপ্টেম্বর এখানে প্রথম আদালত বসে। সেদিন খালেদা জিয়া উপস্থিত হয়ে বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি অসুস্থ। বার বার আসতে পারবো না। যতদিন ইচ্ছা সাজা দিয়ে দিন।’ এরপর এখানে আরও তিনদিন মামলাটির শুনানি হলেও খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এজলাসে উপস্থিত হননি। গত ২০ সেপ্টেম্বর আদালত আদেশ দেন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে।

নাইকো দুর্নীতি মামলা

ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগ ওঠে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এ অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য চলমান রয়েছে।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা

ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে (প্রয়াত) আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। মামলায় গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকা ক্ষতির অভিযোগ করা হয়। বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের নেতৃত্বধীন ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মামলাটি বর্তমানে অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। অভিযোগ গঠন হলেই মামলাটিতে আনুষ্ঠাকিভাবে বিচারকাজ শুরু হবে।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন,ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় এ মামলা করা হয়। ওই বছর ৫ অক্টোবর ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ তে চার্জ শুনানি অবস্থায় রয়েছে।

নাশকতার বিভিন্ন অভিযোগে দারুস সালাম থানায় ১১ মামলা

রাজধানীর গাবতলী,বালুর মাঠ ও মিরপুর মাজার রোড সংলগ্ন এলাকায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যানবাহন ভাঙচুর,পুলিশের কাজে বাধা দানসহ বেশ কিছু নাশকতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় মোট ১১টি মামলা দায়ের করা হয়। ঢাকার বকশিবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে মামলাগুলো বিচারের জন্য উঠলেও হাইকোর্টের আদেশের ফলে এর কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।

হত্যা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানায় ৪ মামলা

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পেট্রোল বোমা দিয়ে চারজনের গায়ে অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও হতাহতের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৪টি মামলা দায়ের করা হয়। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে ঢাকার বকশিবাজারস্থ বিশেষ জজ আদালতে মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ মামলা

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। ঢাকার বকশিবাজারস্থ বিশেষ জজ আদালতে চলমান এ মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশের কারণে স্থগিত রয়েছে।    

গুলশানে বোমা হামলার অভিযোগে মামলা

২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনের জন্য গুলশানে সমবেত হয়। পরে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঘেরাও করার জন্য রওনা হলে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।

পরে ওই ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া,ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান,খন্দকার মাহবুবুর রহমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা ইসমাইল হোসেন। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের অপেক্ষায় রয়েছে।

খুলনায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা

খুলনার ফুলতলা উপজেলায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফুলতলা থানার সাব ইন্সপেক্টর খায়রুল বাশার বাদী হয়ে খালেদা জিয়াসহ মোট ৫৪জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও ৬০-৭০জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি খুলনার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিলের পর্যায়ে রয়েছে।

 হত্যা,অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার অভিযোগে কুমিল্লায় ৩ মামলা

২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হায়দার পুলের চৌদ্দগ্রামে একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে এই মামলায় কুমিল্লার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। খালেদা জিয়া সহ ৩২ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়।  

২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এই ঘটনায় ৭ জন যাত্রী মারা যায় এবং আরও ২৫/২৬ জন গুরুতর অসুস্থ হয়। এ ঘটনায় পরদিন (৩ ফেব্রুয়ারি) চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান ৫৬ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে এ মামলায় আদালতে অভিযোগ পত্র দেওয়া হলেও এর আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ এখনও শুরু হয়নি।

‘মিথ্যা’ জন্মদিন পালনের অভিযোগে মামলা

১৫ আগস্টে ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটিতে পুলিশ প্রতিবেদন আমলে নিয়েছেন আদালত।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ,স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগে মামলা

২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। পরদিন খালেদা জিয়ার ওই বক্তব্য বিভিন্ন জাতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন জজ কোর্টে মামলা করা হয়। বর্তমানে হাইকোর্ট থেকে এ মামলায় জামিনে আছেন খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশের মানচিত্র,জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতির অভিযোগের মামলা

বাংলাদেশের মানচিত্র,জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। এ মামলায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি রয়েছে।

সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে ‘মিথ্যা’ মন্তব্য করায় ঢাকায় মানহানির দুই মামলা

শ্রমিক দিবসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে ‘মিথ্যা’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার বিচারিক আদালতে বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী মানহানির মামলা করেন। যা বর্তমানে পুলিশ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এছাড়াও সজীব ওয়াজেদ জয়ের অ্যাকাউন্টে ৩০ কোটি ডলার রয়েছে বলে  ‘মিথ্যা’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ মে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’র মুরাদনগর উপজেলা কমিটির সভাপতি শরিফুল আলম চৌধুরী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন। কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগে মামলা

২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার এক বক্তব্যের জের ধরে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন ধর্মবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগটির ভিত্তিতে মামলা হয়। মামলাটিতে পুলিশ প্রতিবেদন জমা পড়েছে। তবে এ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে কিনা এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২৩ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ রয়েছে।

নড়াইলে মানহানির এক মামলা

২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বির্তক আছে বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া একই সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ না করে তাকে ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন,‘তিনি স্বাধীনতা চাননি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন,স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি।’ তার ওই বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়। পরে তার ওই বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে প্রচার হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে নড়াইলের কালিয়ার চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম বাদী হয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর নড়াইলের জেলা জজ আদালতে তিনি এ মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটিতেও পুলিশ প্রতিবেদন জমা পড়েছে।

৪২জনকে হত্যার অভিযোগে মামলা

২০ দলীয় জোটের আন্দোলনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মারা যাওয়া ৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে এনে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ দলটির বেশ কিছু জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে পঞ্চগড়ে মামলা

২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৫ সালের গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। এরপর থেকে খালেদা জিয়া,মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবীর রিজভীকে হুকুমের আসামি করে পঞ্চগড়ের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ মামলাটি করা হয়। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে তাদের নির্দেশে দলীয় নেতাকর্মীসহ সন্ত্রাসীরা পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা,নানাভাবে জানমালের ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধ করছেন মর্মে অভিযোগ আনা হয়। এ মামলাটিও পুলিশ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের সমালোচনা ও মানহানির অভিযোগে মামলা

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, জেনারেল জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ায় এ দেশের জনগণ যুদ্ধে নেমেছিল।

অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে কোনও উন্নতি হয়নি। সারাদেশে উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ দলীয় লোকদের জঙ্গি বানিয়ে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করছে বলেও তিনি অভিযোগ তোলেন।

পরে ওই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানহানির অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলাটি বর্তমানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।

মামলাগুলো সম্পর্কে খালেদা জিয়ার প্যানেল আইনজীবীদের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি,কুমিল্লার দুইটি মামলা ছাড়া সরকার যদি অন্য কোনও মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর কূটকৌশল অবলম্বন না করে,তাহলে অতি শীঘ্রই তিনি জামিনে কারামুক্ত হবেন।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলছেন,সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোর করে পদত্যাগ করার পরেই খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের মানুষের মাঝে বিশ্বাস জন্মেছে যে,এই রায়টিও বিচার বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তার বিচারের জন্য কারা অভ্যন্তরে আদালত বসানো হয়েছে এবং বিচারক কারা অভ্যন্তরে তার অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আমরা মনে করি,এই সবকিছুই বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের নগ্ন হস্তক্ষেপ। এতে আমরা উদ্বিগ্ন।

 

/এফএস/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা