জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন কেন বাতিল করা হবে না সে বিষয়ে তার আইনজীবীদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার মামলা স্থগিতে তার আইনজীবীরা যে আবেদন দিয়েছেন সেই বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ ৭ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ কাজ করতে তারা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রায়ের দিন ধার্যের যে আবেদন করেছেন সে বিষয়ে আদেশ দেবেন বলেন জানিয়েছেন পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
মামলার অপর আসামি মনিরুল ইসলাম খানের জামিন আবেদন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। চার আসামির মধ্যে খালেদা জিয়া, জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান বর্তমানে কারাগারে আছেন। আরেক আসামি আরিফ চৌধুরী পলাতক।
রবিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে ১২টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শেষ হয় দুপুর ১টায়। আদালতের কার্যক্রমের শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে অনুপস্থিত রেখে বিচার করার যে আদেশ আদালত দিয়েছেন সেই বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে গিয়েছি। সেজন্য একটি যুক্তিসঙ্গত সময়ের আবেদন করেছি।’
আরেক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, “আপনার দেওয়া আদেশ আইনসম্মত হয়নি মনে করেই আমরা উচ্চ আদালতে গিয়েছি। তাছাড়া খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত থাকতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে যে তথ্য জানিয়েছে সেটা সঠিক নয়। তিনি বলেছেন, ‘আমি অসুস্থ, আমি কীভাবে আদালতে যাবো?’ তার বক্তেব্যের সঙ্গে কার কর্তৃপক্ষ একটি পরিভাষা যোগ করে দিয়েছেন।”
আসামি মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘২০ সেপ্টেম্বর আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তা যথার্থ হয়েছে কিনা সেজন্য আমরা উচ্চ আদালতে গিয়েছি। আদালতের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত কোনও বিরোধ নেই। আবেদন-নিবেদন করা একটি আইনি বিষয়। ওই আবেদনের সঙ্গে জামিন বাতিলের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না।’ তিনি তার মক্কেলের জামিন আবেদন মঞ্জুর করার আবেদন করেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, “খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করে জামিনের আবেদন করেননি। সেজন্য খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিত করার সুযোগ নেই। তার জামিন বাতিল করতে হবে। তিনি ৫ সেপ্টেম্বর আদালতে এসে বলেছেন, ‘আমি বারবার আদালতে আসবো না।’ সেজন্য তার সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমরা তার অনুপস্থিতিতে বিচার কার্য চালানোর জন্য সরল উদ্দেশ্যে আদালতে আবেদন করেছে।”
এর জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা সঠিকভাবেই আদালতে আবেদন করেছি। খালেদা জিয়া কেন আদালতে আসছেন না সেটি আমরা আদালতের কাছে জানতে চাইবো। কারণ, তিনি আদালতের কাস্টডিতে আছেন। মামলার বিচারে এত তাড়াহুড়ো কেন? আমার উচ্চ আদালতে গিয়েছি, আপনি যুক্তিসঙ্গত সময় দেন।’
এ সময় আদালত মাসুদ আহমেদ তালুকদারের কাছে ব্যাখ্যা চান সমর্থন ও প্রতিনিধিত্ব (ডিফেন্ড ও রিপ্রেজেন্ট) করার বিষয়ে। তিনি ধারা-উপধারা উল্লেখ করে আইনি ব্যাখ্যা দেন।
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাজল বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়ার আইনজীবী) আইনের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, একজন সম্মানিত ব্যক্তি, আমরা তাকে জোর করে আদালতে আনতে পারি না। খালেদা জিয়া যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেন তাহলে তিনি আদালতে আসতেন। তবেই তার জামিনের আবেদন বর্ধিত করার সুযোগ থাকতো।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, তারা খালেদা জিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন না। তার মামলা পরিচালনার জন্য সমর্থন করেন শুধু। সেজন্য তারা খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদন করেন আদালতে।
এরপর আদালত বলেন, ‘প্রতিনিধিত্ব যদি না-ই করেন তাহলে তারা জামিন আবেদন করতে পারেন কিনা?’ এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আগামী ধার্য তারিখে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন।