X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ডিবি

নুরুজ্জামান লাবু
১৫ অক্টোবর ২০১৮, ২২:০০আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ২২:০০





ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (ছবি: ফোকাস বাংলা)

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘সময়’-এর টকশোতে সেনাপ্রধানকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিরুদ্ধে দায়ের করা জিডির তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। গতকাল রবিবার (১৪ অক্টোবর) এই তদন্তের ভার ডিবির কাছে হস্তান্তর করার পরপরই ডিবির কর্মকর্তারা মাঠে নামেন।


ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিডির তদন্তভার ডিবির কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিবি দক্ষিণের একটি চৌকস টিম তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।’
গত শুক্রবার (১২ অক্টোবর) সেনা সদরের মেজর (বিএ ৮০০৬) মেজর এম রকিবুল আলম বাদী হয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি জিডি (নম্বর ৪৯৮) দায়ের করেন।
জিডিতে গত ৯ অক্টোবর রাত ১০টা ২০ মিনিটে সময় টিভির সম্পাদকীয় অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দেওয়া বক্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বিদ্বেষপ্রসূত ও ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যায়িত করে কেন, কী উদ্দেশ্যে এবং কাদের প্ররোচনায় তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন, তা তদন্তের দাবি করা হয়েছে। একইসঙ্গে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর প্রধান সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির এমন বানোয়াট ও অসত্য বক্তব্য সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা সেনাবাহিনী প্রধানসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে হেয় করার হীন অপচেষ্টা বলে অভিহিত করা হযেছে।
বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এই বক্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় সেনা সদর। সেনা সদরের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানোর পর গত শনিবার (১৩ অক্টোবর) জাফরুল্লাহ চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। জাফরুল্লাহ তার বক্তব্যে ‘ভুল শব্দচয়ন ও শব্দবিভ্রাট’ হয়েছিল বলে দাবি করেন। একইসঙ্গে তিনি এসবের জন্য তার শারীরিক অসুস্থতা, ডায়ালাইসিস এবং ডায়ালাইসিসের পর শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক স্থিতি কমে যাওয়া বক্তব্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
অবশ্য এরপরও জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে একটি বেরসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে উপস্থিত হতে দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ক্যান্টনমেন্ট থানায় দায়ের হওয়া জিডির সঙ্গে বাদী ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্যের যে সিডি সংযুক্ত করে দিয়েছেন তা তারা পর্যালোচনা করছেন। একইসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহর ভুল স্বীকার করে দেওয়া বক্তব্য এবং উল্লেখ করা কারণগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি এসব বক্তব্য ইচ্ছে করেই দিয়েছেন নাকি মানসিক স্থিতি কমে যাওয়ায় ভুল করে বলেছেন, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা জানতে পেরেছেন, ডা. জাফরুল্লাহ সপ্তাহে তিন দিন কিডনি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ডায়ালাইসিস নিয়ে থাকেন। কিন্তু এ অবস্থাতেও তিনি নিয়মিত রাজনৈতিক বক্তব্য, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং টেলিভিশনের টকশোতে উপস্থিত হন। যদি তার শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক স্থিতি কমে যেতো, তাহলে এত কিছু তার করার কথা নয়। বিষয়টি ডিবি কর্মকর্তারা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছেন।
সেনা সদরের মেজর এম রাকিবুল আলমের জিডিতে বলা হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অসত্য বক্তব্য লাইভ টকশোতে উপস্থাপন করে ডা. জাফরুল্লাহ কেবল সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সামরিক সুনাম ও সামাজিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করেননি, বরং তা সেনাবাহিনী প্রধানের সম্মানজনক পদকেও চরমভাবে হেয় করেছে। এ ধরনের বক্তব্য প্রকারান্তরে কর্মরত সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিভ্রান্ত করেছে এবং তাদের মনোবলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
জিডিতে বলা হয়, এমন অপপ্রচার সেনাবাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল বাহিনীর সংহতি ও একতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার নিমিত্তে এ ধরনের বক্তব্য প্রকারান্তরে কর্মরত সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিভ্রান্ত করেছে এবং তাদের মনোবলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
জিডিতে বলা হয়েছে, ডা. জাফরুল্লাহ তার বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ঐক্যকে বিনষ্ট করাসহ সাধারণ জনগণের মধ্যেও বিভ্রান্তিকর তথ্য ও উদ্দেশ্যমূলক গুজব ছড়িয়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিরূপ ও নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়। একইসঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ের আগের রাতে হঠাৎ করে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সেনাপ্রধান সম্পর্কে দেওয়া বক্তব্যটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বিদ্বেষপ্রসূত ও ষড়যন্ত্রমূলক, যা সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি তথা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি কেন, কী উদ্দেশ্যে এবং কাদের প্ররোচনায় এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক, বানোয়াট ও অসত্য বক্তব্য টকশোতে বলেছেন তা তদন্তের দাবি রাখে বলে জিডিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডা. জাফরুল্লাহর এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য এবং এর নেপথ্যে কারো প্ররোচনা রয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার এ বক্তব্য খতিয়ে দেখার পাশাপাশি তিনি অন্যান্য সময় টেলিভিশন টকশো’তে কী ধরনের বক্তব্য দিতেন, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন:

সেনাপ্রধানকে নিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদ সেনা সদরের

সেনাপ্রধানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন ডা. জাফরুল্লাহ

ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় জিডি সেনা সদরের

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
রামরুর কর্মশালায় বক্তারাঅভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা