X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতি প্রতিরোধে দৃশ্যমান তৎপরতা নেই বিমানে

চৌধুরী আকবর হোসেন
১৫ অক্টোবর ২০১৮, ২৩:৫০আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:০৮





বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (ছবি: সংগৃহীত)

রক্ষণাবেক্ষণ, যন্ত্রাংশ কেনাসহ বিমান লিজের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয় রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে। অনিয়ম হয় বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের কেনাকাটায়ও। এমনকি বিমানের বোর্ড পরিচালক ও কর্মকর্তারা পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ করেন বলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে দাবি করেছে। এসব অনিময় ও দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক বেশ কিছু সুপারিশ করলেও বিমান কর্তৃপক্ষ কোনও উদ্যোগ নিয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি।
গত এপ্রিলে প্রকাশিত দুদকের ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের ৮ অধ্যায়ের ৯৬ পৃষ্ঠায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুর্নীতি ও তা প্রতিরোধের সুপারিশ তুলে ধরা হয়। প্রকাশিত দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুসারে এ প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের সব চেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় রক্ষণাবেক্ষণ খাতে। এ খাতে বিমানের যন্ত্রাংশসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনাকাটা হয়। তাছাড়া মেরামতের জন্য বিমান বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। এসব কেনাকাটার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্রে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। সাধারণত বিমানের বোর্ডের পরিচালকরা ও কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য তাদের পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেন। বিমানের যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম কেনায় শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ অতি উচ্চমূল্য দেখিয়ে ঠিকাদারও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ হয়।
এছাড়া, বিমান মেরামতের জন্য তাদের পছন্দসই বিদেশি প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে করে বেশি অঙ্কের বিল দেখিয়ে ভাগাভাগির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করা হয়। বিমানের প্রকিউরমেন্ট শাখার মাধ্যমে যাবতীয় কেনাকাটা হয়ে থাকে। ওই শাখা থেকে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়াও কর্মকর্তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে মালামাল কেনা হয়।
দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশও দেয় দুদক। সুপারিশে বলা হয়, বিমানের যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম কেনার তালিকা, কখন কেনা হয়েছে, কী দামে কেনা হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়েছে, কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে— এসব রেকর্ড পর্যালোচনা করে দুর্নীতির চিত্র বোর্ডসভায় উপস্থাপন করা যেতে পারে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
মেইন্টেন্যান্স ও ওভারহোলিং খাতে কেনাকাটার সময় আন্তর্জাতিক দরপত্রের নিয়ম সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা, তা পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞ টিম করার কথাও বলা হয়েছে দুদকের সুপারিশে। টেন্ডার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে ই-জিপি বাধ্যতামূলক করা এবং ক্রয় কমিটিতে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশও করেছে দুদক।
শুধু বিমানের যন্ত্রাংশ কেনাকাটা ও মেরামত নয়, লিজে বিমান নেওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিমানের স্বার্থ না দেখে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ায় বিপত্তিতে পড়তে হয় বিমানকে। অভিযোগ রয়েছে, ইজিপ্ট এয়ার থেকে পাঁচ বছরের লিজে আনা দুটি বিমান নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, ইজিপ্ট এয়ার থেকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ড্রাই লিজে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ সংগ্রহ করে বিমান। ২০১৪ সালের মার্চে একটি বিমান (রেজিস্ট্রেশন নম্বর এস২-এএইচএল) বিমান বহরে যুক্ত হয়। অন্যটি (রেজিস্ট্রেশন নম্বর এস২-এএইচকে) যুক্ত হয় একই বছরের মে মাসে। চুক্তি অনুসারে উড়োজাহাজ দুটি যাত্রীপরিবহন করুক আর না করুক মাসে বিমানপ্রতি পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ডলার (৪ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার টাকা) ভাড়া দিতে হবে। সব ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বহন করতে হবে। পাঁচ বছরের আগে চুক্তি বাতিল করতে পারবে না বিমান। লিজের মেয়াদ শেষে উড়োজাহাজ দুটি আগের অবস্থায় (ভাড়া নেওয়ার সময় যে অবস্থায় ছিল) ফেরত দিতে হবে।
তবে একাধিকবার বিমান দুটির ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ফেরত দিতে পরামর্শকও নিয়োগ দিতে হয়েছিল বিমানকে।
জানা গেছে, এ বছর হজের মৌসুমে ভাড়া করে আনা বিমান নিয়ে বিপত্তিতে পড়তে হয় বিমানকে। মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান ফ্লাই গ্লোবাল থেকে ভাড়া করা চারটি বিমান নিয়ে আপত্তি ছিল সৌদি আরবের। ফ্লাই গ্লোবালের কোনও বিমান সেদেশে নামতে না দেওয়ার ঘোষণায় বিপত্তিতে পড়ে বিমান কর্তৃপক্ষ। বিগত হজ মৌসুমেরও ফ্লাই গ্লোবাল থেকে বিমান লিজ নেওয়া হয়েছিল। লিজের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলেও বিমানের সদ্য সাবেক এক পরিচালকের পছন্দে ফ্লাই গ্লোবাল থেকে চারটি বিমান ভাড়া নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি ঠিকমতো ফ্লাইট পরিচালনা না করায় বিপত্তিতে পড়তে হয় বিমানকে। পরে হজ ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখতে ট্যাগ অ্যাঙ্গেলা থেকে একটি বিমান লিজ নেওয়া হয়। ব্যক্তিগত কমিশনের জন্য বিমানের স্বার্থ বিবেচনা না করে চুক্তি করে লিজে বিমান আনায় বিমানকে লোকসান গুনতে হয় বলে অভিযোগ আছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলেও বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এম মোসাদ্দিক আহমেদের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে বিমান এখন আরও বেশি আন্তরিক বলে জানান সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ। তিনি বলেন, বিমান দুর্নীতি প্রতিরোধ ও স্বচ্ছতার জন্য ডিজিটালাইজড হচ্ছে। সরকারের ক্রয় নীতিমালা অনুসরণ করে বিমানে টেন্ডার বা কেনাকেটা হয়। ই-জিপির প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে টেন্ডার হচ্ছে। এছাড়াও হিসাবপত্র স্বচ্ছ রাখার জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে আয়ের বিষয়গুলো নজরদারি করা হয়। এছাড়া, বিমানের কর্মীদের জন্য নিয়মিত শুদ্ধাচার কৌশলের আওতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ জানতে গণশুনানিও অনুষ্ঠিত হয়।

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!