X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুরিয়ারে পণ্যের আড়ালে মাদক পার্সেল

আমানুর রহমান রনি ও রাফসান জানি
২২ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:৫৮আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৪৪

কুরিয়ার সার্ভিসে মাদকের পার্সেল

মাদকের বিরুদ্ধে টানা অভিযানের মধ্যেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় পৌঁছে যাচ্ছে মাদকদ্রব্য। সন্দেহের তীর দেশের কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর দিকে, বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক পার্সেল করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। কখনও কখনও এসব চালান ধরাও পড়ছে। তবে মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি— যখনই তাদের কোনও এজেন্ট বা কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাচ্ছে, দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। 

কুরিয়ার সার্ভিসে কোনও পণ্য পাঠানোর আগে ভালো করে যাচাই করার কথা থাকলেও কুরিয়ার কোম্পানিগুলোর কিছু অসাধু কর্মচারী ও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে মাদকপাচার বন্ধ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কুরিয়ার সংশ্লিষ্ট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গত এক বছরে চট্টগ্রাম, ফেনী, কক্সবাজার, ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে অন্তত অর্ধশত কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ইয়াবা চালান আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব ঘটনায় প্রাপক গ্রেফতার হলেও প্রেরক সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। প্রেরকদের ঠিকানাগুলো সবসময় ভুয়া থাকে।এমনকি মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে খুঁজেও প্রেরককে পাওয়া যায় না।

গত ২৭ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিলে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা রিসিভ করার সময় র‌্যাব-১০ এর অভিযানে ধরা পড়ে চার ইয়াবা চোরাকারবারি। আটক চারজন হলো— আরিফ, ফোরকান, রুবেল ও আবু নাইম। তারা কক্সবাজার থেকে পাঠানো ইয়াবা মতিঝিলে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে রিসিভ করতে এসে গ্রেফতার হয়। ক্রিমের কৌটায় করে ইয়াবাগুলো ঢাকায় আনা হয়েছিল।

র‌্যাব-১০ সূত্রে জানা গেছে, ইয়াবাগুলো পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে। প্যারাশুট ও ভাটিকা কসমেটিক্সের কৌটার মধ্যে কৌশলে ইয়াবার প্যাকেট রেখে পাচার করা হয়েছিল। প্রতিটি কৌটায় রাখা হয়েছিল একহাজার পিস ইয়াবা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদস্যরা আগে থেকেই কুরিয়ার অফিসের সামনে অবস্থান নেন এবং ইয়াবার ওই চালান গ্রহণ করার সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করেন তারা।

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করি, যাতে এ ধরনের সুযোগ কেউ না পায়। তারপরও মাদক চোরাকারবারিরা এমনভাবে কাজ করে, যা সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকে। তারা পণ্যের আড়ালে এসব মাদকের চালান পাঠিয়ে থাকে। টেলিভিশন, ল্যাপটপসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের মধ্যে মাদক ভরে তারপর পাচার করে। এসব পণ্য কখনও আমাদের এজেন্টরা খুলে দেখতে পারে না। কেউ এগুলো সন্দেহও করে না।’

কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ইয়াবা সাধারণত কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ল্যাপটপ, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্য, কসমেটিক্স ও কাপড়ের আড়ালে নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য এন্ট্রি করা হয়। ভুয়া প্রেরকের নাম দিয়ে এন্ট্রি করে এসব চালান পাঠানো হয়। সেই পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার জন্য কখনও কখনও গন্তব্যে নির্ধারিত লোক আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। আবার কখনও কখনও যে বা যারা কুরিয়ারে পাঠায় তারাই বাস, ট্রেন বা বিমানযোগে রাজধানীতে এসে সেগুলো গ্রহণ করে চোরাকারবারিদের কাছে পৌঁছে দেয়। মাদক বিক্রির টাকা নিয়ে আবার তারা ফিরেও যান।

র‌্যাব-১০ এর অপারেশন কমান্ডার এডিশনাল এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে রাকিব ও শাওন নামে দু’জন ছদ্মনামে কুরিয়ারে ইয়াবাগুলো পার্সেল করেন। তাদের আসল পরিচয় জানা গেছে। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।’

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মাদক প্রতিরোধে যথেষ্ট সচেতন রয়েছি। আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করছি।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, কুরিয়ারের কর্মী বা তাদের এজেন্টরা মাদক পাচারে জড়িত। এ অভিযোগের বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের পাঁচশ’র বেশি এজেন্ট ও ব্রাঞ্চ রয়েছে। যখনই যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের আমরা এজেন্ট থেকে সরিয়ে দিয়েছি। এমনকি আমাদের একজন জিএম-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তাকেও চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের শতভাগ সত্যতা মেলেনি। তারপরও আমরা তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সোনাইমুড়ি ও ফেনীতে অনেক এজেন্টকে বাদ দিয়েছি। আমরা মাদকের বিষয়ে কোনও ছাড় দেবো না।’

পার্সেল স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই কঠিন। আমরা এমন চিন্তা করেছিলাম, কিন্তু তা সম্ভব না। কারণ, সব পার্সেল আমাদের সেন্ট্রালে আসে না। দিনের মধ্যে যেসব পার্সেল প্রাপকের কাছে পাঠানো হয়, সেগুলো কখনও সেন্ট্রালে আসে না। তাই সব পণ্য স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনা সম্ভব না।’

কুরিয়ারে মাদকপাচারের বিষয়ে র‌্যাব-১০ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) এডিশনাল ডিআইজি কাইয়ুমুজ্জামান বলেন, ‘এটাকে (কুরিয়ার সার্ভিস) মাদকপাচারের একটা সুবিধাজন পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে চোরাকারবারিরা। তবে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি কুরিয়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে কুরিয়ারে মাদকপাচার বন্ধ করা সম্ভব।’ 

/ওআর/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রাণ জুড়াবে কাঁচা আমের শরবত
প্রাণ জুড়াবে কাঁচা আমের শরবত
কামালের ২৯ বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারলেন না সবুজ!
কামালের ২৯ বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারলেন না সবুজ!
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!