X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোমায় রওশন আরা, আইনি লড়াইয়ে যাবেন সন্তান

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ অক্টোবর ২০১৮, ২৩:১৪আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ০২:২৭

রওশন আরা চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরা (৫৫) এখন কোমায় আছেন। রফিক শিকদার নিজেই এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘মায়ের হওয়া ক্ষতির বিষয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।’ তার মায়ের অবস্থা গণমাধ্যমকে জানাতে রবিবার (২৮ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনও করবেন তিনি।

রফিক শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার মা ভালো নেই। অলরেডি মা কোমায়। উনারা (চিকিৎসকরা) বলছেন, কোমায়। কিন্তু আমার ধারণা, মা হয়তো মারা গেছেন। উনারা হয়তো ঘোষণা করছেন না। কয়েকদিন রেখে আমাদেরকে হাল্কা করার চেষ্টা করবেন। গতরাতে (শুক্রবার) আমি আমার মাকে দেখেছি। নিউজে ডাক্তারের বিবৃতি পড়লাম। উনি একেক সময় একেক রকম কথা বলছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমার মায়ের ডানপাশের কিডনিটা কোথায় গেলো? মায়ের ডানপাশের কিডনিটা ভালো ছিল। একশ ভাগ ভালো ছিল। এই ধরনের কমপক্ষে ১৫টি রিপোর্ট আছে। সুন্দর স্বাভাবিক, তার রেনোগ্রাম পরীক্ষা করা আছে। তার শতভাগ ভালো একটা কিডনি ছিল। আমার মায়ের পয়েন্ট সিক্সটি ওয়ান, এত ভালো ক্রিয়েটেনিন কীভাবে ছিল? কিডনির জোরেই সে সুস্থ, সুন্দর জীবনযাপন করছিল। বামেরটা নষ্ট হলে সুস্থ ছিল কী করে?’

রফিক শিকদার বলেন, ‘আমার মায়ের মৃত্যুটা হতো না, যদি প্রথমেই চিকিৎসক স্বীকার করতেন। আমার কাছে তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে একটা লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন তিনি। উনি লিখেছেন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এই ঘটনা ঘটেছে। তিনি স্বীকার করেছেন, একটা কাটতে গিয়ে দুটোই কাটা হয়ে গেছে। আমার কাছে তার বক্তব্যের স্ট্যাম্প ও ভিডিও রেকর্ড আছে। আমরা আইনি লড়াইয়ে যাবো।’

বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উনার অবস্থা ভালো না। ম্যাসিভ স্ট্রোক করেছে তো! ওদের সঙ্গে আমি নিচু হয়ে একটা সমঝোতা করেছি, যেন ওদের মা বেঁচে যায়। ওদের যে প্রি অপারেটিভ সিটি স্ক্যান সেখানে উল্লেখ নেই, এটা জোড়া লাগানো কিডনি ছিল। ইতোমধ্যে রোগীর রিপোর্ট আমাদের হাতে চলে এসেছে। এটাতে কনফার্ম করা হয়েছে, রোগীর কিডনি জোড়া লাগানো ছিল। যেটা নাকি প্রি সিটিস্ক্যান মিস করেছে। তার তিনবার অস্ত্রোপচার করা ছিল। অস্ত্রোপচার টেবিলে এটা বোঝার উপায় ছিল না। সুতরাং তারা মনগড়া কথা বললে তো হবে না। সমঝোতা করার পর এই পর্যন্ত আমার তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমি দুইটা লোক আলাদা নিয়োগ দিয়েছি। চারজন চিকিৎসক দিয়েছি। পাঁচবার মেডিক্যাল বোর্ড হয়েছে। চিকিৎসক, অধ্যাপক যা আছে ভিভিআইপি ম্যানেজমেন্ট দিচ্ছি। তারা খালাকে বাড়িতে যাওয়ার সময় আমি ২/৩ হাজার টাকা দিয়েছি যে, আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসেন। দুজনেইর পরীক্ষা-নীরীক্ষা সব কমপ্লিট। এখন সে উল্টা পাল্টা কথা বললে হবে না তো। জোরাজুরি করলেই হবে নাকি!’

চুক্তি ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, ‘আমাকে আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান দিয়েছে, যতটুকু সামর্থ্য দিয়েছে; আমি লেভেল বেস্ট সার্ভিস দিয়েছি। বাইরে থেকে ত্রিশ হাজার টাকা এনে, বারডেম থেকে এক্সপার্ট এনে তার ক্যানুলা করেছি; যেন একবারে হয়ে যায়। টাকা পয়সার দিকে তাকাইনি আমি। আমাদের হাসপাতালে এই ভদ্রমহিলার লস হয়েছে। যেই কারণেই হোক না কেন। আমাদের ভুলে হোক। সিটি স্ক্যানের ভুলে হোক। আমার মায়ের জন্য যত দরদ, সেই দরদ নিয়ে কাজ করছি। সমঝোতার টেবিলে তারা অভিযোগ তুলেছে, আমি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে এই কিডনি বিক্রি করে দিয়েছি। ওরা মায়ের ব্যাপারে ইমোশনাল। বাম দিকের কিডনি অপারেশন করে ডান দিকের কিডনি কী নিতে পারবে? যেহেতু এসে পড়েছে, এটা আমরা বুঝতে পেরেছি পাঁচদিন পরে। আমি যদি ওর মায়ের ট্রিটমেন্ট না করতাম, অস্ত্রোপচার কক্ষে ওর মা মারা যেত। হায়াত মউত কি আমার হাতে?’

ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, ‘পরিচালক সমিতি আমার কাছে অ্যাপ্রোচ করে বলে স্যার যেহেতু ওর মায়ের একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আপনি ওর মায়ের চিকিৎসাটা চালিয়ে যান। আমি বলেছি, আমার কোনও ধরনের আপত্তি নেই। তখন সে রিকুয়েস্ট করে, আমার খালা দরিদ্র। ছেলেরা খেতে দেয় না। উনাকে কিছু আর্থিক সহায়তা করলে ভালো হয়। তখন পরে আমিই আট লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলি। গরিব মানুষ ছেলেরা দেখে না। তার কিছু অর্থ হোক। এখন কি আমার অন্যায় হয়ে গেছে?

উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর রওশন আরার বাম কিডনিতে অস্ত্রোপচার করেন বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসকরা। এরপর তার শরীরের অবস্থা খারাপ হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তখন সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে তার শরীরে কোনও কিডনিই নেই। সেই অবস্থা থেকে কিছুটা শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও পরে তার অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ দুটি কমিটি (মেডিক্যাল বোর্ড ও তদন্ত কমিটি) করে।

আরও পড়ুন: রওশন আরার ডানের কিডনিটি গেলো কোথায়?

 

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!