X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সেই ১৪ হাসপাতালের দুটি এখনও খোলা

তাসকিনা ইয়াসমিন
৩১ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:০২আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:০৪

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সেই ১৪ হাসপাতালের দুটি এখনও খোলা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে হাইকোর্টের রায়ে বন্ধের নির্দেশ পাওয়া ১৪টি হাসপাতালের বেশিরভাগই এখন বন্ধ থাকলেও বিডিএম হাসপাতাল ও সেবিকা জেনারেল হাসপাতাল নামের দুটি হাসপাতাল এখনও খোলা। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিষেধাজ্ঞা পাওয়া হাসপাতালগুলোর কয়েকটিকে সিলগালা করে দিলেও দিব্যি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এই দুটি হাসপাতাল। সম্প্রতি এসব হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। তবে হাসপাতাল দুটির কর্তৃপক্ষের দাবি, ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিদর্শনের সময় তারা যথাযথ কাগজপত্র দেখিয়েই হাসপাতাল পরিচালনার অনুমতি পেয়েছেন।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বিপরীতে বাবর রোড ও খিলজি রোডে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লাইসেন্স না থাকার অভিযোগ উঠে এই হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে। এরপর হাইকোর্ট থেকে গত ১১ সেপ্টেম্বর এক রায়ে এই হাসপাতালগুলো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম হাইকোর্টের নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় অভিযানে চারটি হাসপাতাল সিলগালাসহ ছয়টি হাসপাতালকে ১৭ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
র্যা বের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিডিএম হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারকে পাঁচ লাখ টাকা, নবাব সিরাজ উদ-দৌলা মানসিক ও মাদকাসক্ত হাসপাতালকে চার লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও সিলগালা, ফেয়ার ল্যাব লিমিটেডকে তিন লাখ টাকা জরিমানা ও সিলগালা, জনসেবা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারকে দুই লাখ টাকা জরিমানা, লাইফ কেয়ার নার্সিং হোস একলাখ টাকা জরিমানা ও সিলগালা, শেফা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারকে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও সিলগালা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার হাসপাতালগুলো সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ হাসপাতালই বন্ধ রয়েছে। সদর দরজায় ঝুলছে তালা। গেটের সামনে নেই কোন রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা রোগীর ভিড়। তবে, সেবিকা জেনারেল হাসপাতাল ও বিডিএম হাসপাতাল এই দুটি হাসপাতাল খোলা রয়েছে। অনেকে বাড়ি ভাড়া দেয়ার বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।
হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সেই ১৪ হাসপাতালের দুটি এখনও খোলা হাইকোর্ট থেকে যে ১৪টি হাসপাতালের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় সেই তালিকায় নাম ছিল—বিডিএম হাসপাতাল,সেবিকা জেনারেল হাসপাতাল, জনসেবা নার্সিং হোম, লাইফ কেয়ার নার্সিং হোম, রয়্যাল মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল, নবাব সিরাজউদ্দোলা মেন্টাল হাসপাতাল, মনমিতা মেন্টাল হাসপাতাল, প্লাজমা মেডিক্যাল সার্ভিস অ্যান্ড ক্লিনিক, শেফা হাসপাতাল, ইসলামিয়া মেন্টাল হাসপাতাল, মক্কা মদীনা জেনারেল হাসপাতাল, নিউ ওয়েল কেয়ার হাসপাতাল ও বাংলাদেশ ট্রমা স্পেশালাইজড হাসপাতাল।
এসব হাসপাতালের ওপর একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের সূত্র ধরে আদালতে রিট আবেদন করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। গত ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে সেই রিট আবেদনের শুনানি শেষে লাইসেন্সবিহীন তথাকথিত এই ১৪টি হাসপাতাল অবিলম্বে বন্ধের আদেশ দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এগুলোর কোনোটি ছোট্ট বাড়িতে কোনটি আবার বহুতল ভবনে অবস্থিত। হাসপাতাল নাম হলেও কোনও কোনটির আয়তন এত ছোট যে কোনও চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার ভেবে ভুল করতে পারেন যে কেউ। শেফা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, এটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। সামনে অবস্থানকারি চা বিক্রেতা আব্দুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই হাসপাতাল তো এক মাস আগে থেকে বন্ধ আছে। তবে, এটা কয়েকদিনের মধ্যেই খুলে দেবে।
লাইফ কেয়ার নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে এটি সিলগালা অবস্থায় পাওয়া যায়। বন্ধ পাওয়া যায় মক্কা মদিনা জেনারেল হাসপাতালেরও গেট। এটির সামনে একটি টু-লেট সাইনবোর্ড ঝুলছে। এতে লেখা রয়েছে সম্পূর্ণ বাড়ি ভাড়া হবে। রয়্যাল মাল্টিস্পেশালিস্ট হাসপাতালের গেটটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এটির সামনে দারোয়ান ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাসপাতালের মালিক বিদেশ থেকে ফেরত আসার পর আর হাসপাতাল চালু করেননি। কবে খুলবে বলতে পারি না।
সিলগালা অবস্থায় পাওয়া যায় নিউ ওয়েলকেয়ার হাসপাতাল, নবাব সিরাজউদ্দৌলা মেন্টাল হাসপাতাল দুটি। তালাবদ্ধ আছে লাইফ কেয়ার নার্সিং হোম, মনমিতা মেন্টাল হসপিটাল, প্লাজমা মেডিক্যাল সার্ভিস অ্যান্ড ক্লিনিক, ইসলামিয়া মেন্টাল হসপিটাল ও বাংলাদেশ ট্রমা স্পেশালাইজড হসপিটাল। তবে, খোলা পাওয়া যায় সেবিকা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এটার রিসেপশনে বসে ছিলেন রোগী আবু তাহের (৭০)। প্রথমবার এই হাসপাতালে এসেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি রাস্তা পার হচ্ছিলাম। এমন সময় হোন্ডা আমার পায়ে মাইর্যাে দিসে। এরপর থেকে পা দেখাইতেসি। এখনও পা ব্যথা করে। পা ব্যান্ডেজ করা থাকলে ব্যথা কম থাকে। নাহলে বেশি ব্যথা করে।
তিনি বলেন, আমি পঙ্গু হাসপাতালে (নিটোর) গেছিলাম। সেখানে সিট নাই তাই ছেলেরা এইখানে আনসে। ছেলেরা যা করবে তাই করা হবে।
সেবিকা জেনারেল হাসপাতালের সত্ত্বাধিকারী এস এম সাখাওয়াত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার হাসপাতালের সব কাগজপত্র আছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত এসেছিল। আমি সব কাগজ দেখিয়েছি। তারা কার্যক্রম চালানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আমার লাইসেন্স রিনিউ করা আছে। তারপরও হাইকোর্টের রায়ে একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম। এরমধ্যে যদি কোন জরিমানা হয় তা শোধ করার ক্ষমতা নাই। ম্যাজিস্ট্রেট যা যা কাগজপত্র চেয়েছে তা দিয়েছি। একটা কপি স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার এখানে রোস্টারে একজন চিকিৎসক কাজ করেন। দুইজন নার্স কাজ করেন। এখন ৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমার এখানে শুধু অস্ত্রোপচার করা হয়। এটার বেডের অনুমতি ছিল ২০টির। আমি এখন সাতটা বেড রেখেছি। এখানে বেড ভাড়া ১ হাজার টাকা আর সার্ভিস চার্জ ২শ টাকা নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমার এখানে কোনও চেম্বার নেই। কোনও ল্যাব রাখিনি। কোনও পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হলে তা ট্রমা সেন্টার থেকে করা হয়। এখানে শুধু অপারেশন করা হয়। ঔষধপত্র আলোচনার মাধ্যমে রোগীদের দেওয়া হয়। তাদের জিজ্ঞেস করে নেওয়া হয়। তারা যদি বলে যে আমরা ভালো বুঝিনা, আপনারা যা করবেন তাই করেন তখন আমরা নিজেরা রোগীদের ওষুধ কিনে দিই।
বিডিএম হাসপাতালের ম্যানেজার মো. সাইদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের হাসপাতালকে এরমধ্যে একটা জরিমানা করেছে দেখেছেন। আমাদের হাসপাতালটা মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য চমৎকার হাসপাতাল। এখানে ভাল ভাল সার্জনরা আছে। একটা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা সহজ, কিন্তু,গড়ে তোলা কঠিন। একটি হাসপাতাল ২০ বছর ধরে চলছে, কাগজপত্র ছাড়া কী চলা সম্ভব এই ঢাকা শহরে? কাজেই সহজ একটা হিসাব। ঢাকা শহরের ভেতরে কেন্দ্রের মধ্যে এটি অবস্থিত। টুকটাক কিছু ধরেছে। জরিমানা করেছে। এটা এ্যাপোলো, ল্যাবএইড সব হাসপাতালেই হয়। সরকার চাইলেই বন্ধ করতে পারে। কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠান গড়া কঠিন।
তিনি বলেন, এখানে দেড়শ স্টাফ আছে। তারা উপকৃত হচ্ছে। কোনও না কোনও ফ্যামিলি উপকার পাচ্ছে। এখন আমাদের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ উঠেছে এটা আমাদের জন্য একটা কলঙ্ক হয়ে গেল। গত বছরের লাইসেন্স করতে টানা আট মাস লেগেছে। কিন্তু এটা তো কেউ দেখবে না। এই হাসপাতালে বেড আছে ৫০টি। অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় এখানে খরচ খুব একটা বেশি না।

/টিওয়াই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ: আইজিপি
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ: আইজিপি
তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া