বর্তমানে দেশে ১ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ৬৪ জেলার মধ্যে ১৩টি জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে।
বুধবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘ম্যালেরিয়া নির্মূলে বাংলাদেশ: বাস্তবতা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি, দৈনিক সমকাল ও ব্র্যাক যৌথভাবে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
সমকাল-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সঞ্চালনায় বৈঠকের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘২০৩০ সাল নাগাদ ম্যালেরিয়া নির্মূলে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে, আমি আশা করছি ওই সময়ের মধ্যে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। কারণ অল্প সময়ে যদি আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করতে পারি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে অন্ধকার থেকে আলোকিত করতে পারি, তাহলে ম্যালেরিয়া কেন নির্মূল করতে পারবনা?’ তিনি এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারের পাশাপাশি ব্র্যাকসহ এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা ও সামাজিক শক্তিকে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দেন।
ম্যালেরিয়া নির্মূলে মশারি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকাগুলোতে শুধু মশারি বিতরণ যথেষ্ট নয়, বরং তা সত্যিকার অর্থে জনগণ ব্যবহার করছে কিনা সেদিকে আমাদের বেশি মনোযোগ দিতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ও কমিউনিকেবল ডিজিজেস কন্ট্রোল বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘সীমান্তে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আরও বেশি আলোচনা করতে হবে।’ এছাড়া দূর্গম এলাকায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের জলপথে দ্রুত আনা-নেওয়ার সুবিধার্থে নৌ অ্যাম্বুলেন্স প্রদানের জন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কমিউনেকবল ডিজিজেস সার্ভাইল্যান্স-এর মেডিক্যাল অফিসার ডা. মিয়া সেপাল ম্যালেরিয়া নির্মূলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ব্র্যাকের কমিঊনিকেবল ডিজিজেস, ওয়াশ ও ডিএমসিসি কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম ম্যালেরিয়া নির্মূলে কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এগুলো হচ্ছে: প্রত্যন্ত অঞ্চলে ম্যালেরিয়া শনাক্তকরণের গুণগত মান ঠিক রাখা, সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা জোরদার করা, চিকিৎসা সেবায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ করা ও নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রণোদনা দেওয়া, নির্বাচনি ইশতিহারে ম্যালেরিয়াসহ যক্ষ্মা ও এইড্সকে গুরুত্ব দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী দিনের কর্মসূচির পরিকল্পনা করা।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও বেন-ম্যাল ও ডেঙ্গু কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান।
বৈঠকে বলা হয়, বর্তমানে দেশে ১ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছর এই রোগে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর প্রায় ৯৮ ভাগ সংঘটিত হয়ে থাকে ১৩টি জেলায়। জেলাগুলো হচ্ছে: রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং কুড়িগ্রাম। তবে সবচেয়ে বেশি প্রকোপ পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি-এই তিন জেলায়।
