X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিঃশঙ্ক বাকস্বাধীনতার প্রত্যাশায় ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৮ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৩৯আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৫০

ঝুমুরের তালে নেচে উঠেছিলো ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম প্রহর। বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বাংলা একাডেমিতে শুরু হওয়া অষ্টম ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজন শুরু হয় মুনমুন আহমেদ ও তার দল রেওয়াজের কত্থক নাচের মধ্য দিয়ে। এত আনন্দ আয়োজন, তবু শঙ্কার বার্তা দিয়েই শুরু করলেন বক্তারা। সম্প্রতি পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এ আয়োজনের পরিচালকরা।

নৃত্যের তালে তালে শুরু হয় ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিনের আয়োজন
বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট-২০১৮-এর অনাড়ম্বর সূচনা ঘোষণা করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এসময় মঞ্চে  উপস্থিত ছিলেন ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্ এবং আহসান আকবার। তাদের সঙ্গে আলো ছড়ান জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও পরিচালক নন্দিতা দাস এবং  পুলিৎজারজয়ী লেখক অ্যাডাম জনসন।

নিঃশঙ্ক বাকস্বাধীনতার প্রত্যাশায় ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিন

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “স্পিকার, লেখক এবং বিদেশি অতিথিদের শুভেচ্ছা জানাই। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ একটি সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালে তিনি অগ্রাহ্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিকদের এই মিলনমেলায় আমি কীভাবে যাই।’ এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করলে তিনি একটি শর্ত দেন। তিনি বলেন, ‘সেখানে কবি জসীমউদদীন, চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদীন ও প্রফেসর আব্দুল মতিন চৌধুরীকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে।’”

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ক্রিয়েটিভিটি এবং জ্ঞানের ওপর বিশ্বাস করেন। ঠিক এমনটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি সব সময় সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ঢাকা লিট ফেস্টের অংশ হতে পেরে গর্বিত। আমি ঢাকা লিট ফেস্টের সাফল্য কামনা করি।’

ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক এবং বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে বাকস্বাধীনতা ঝুঁকিতে পড়ছে। ঢাকা লিট ফেস্ট সব সময় মুক্তচিন্তা এবং বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। ঢাকা লিট ফেস্ট বরাবরই নারী, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং বাকস্বাধীনতা নিয়ে কথা বলে। সংস্কৃতির প্রতি বাংলাদেশ সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণে আমরা অষ্টমবারের মতো এই আয়োজন করতে পারছি। ঢাকা লিট ফেস্টের কেউ কথা বলতে বাধার সম্মুখীন হয় না। এটা একটি মুক্ত জায়গা, খোলামেলা আলোচনা করার জন্য।’এ সময় তিনি ঢাকা লিট ফেস্টকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান।

অভিনেত্রী নন্দিতা দাস বলেন, ‘আমার অনুরোধ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এবং ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালককে, আপনারা ভারতে আসুন এবং বাকস্বাধীনতা নিয়ে কথা বলুন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম কারাগারে আছেন। তার জন্য আমাদের সবার একসঙ্গে আওয়াজ তোলা উচিত বলে আমি মনে করি।’

নিঃশঙ্ক বাকস্বাধীনতার প্রত্যাশায় ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিন

ঢাকা লিট ফেস্টের অন্যতম পরিচালক সাদাফ সায্ বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে আমরা বিশ্বের নামিদামি শিল্পীদের বাংলাদেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এ বছর ৯০টিরও বেশি সেশন নিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের আয়োজন। যেখানে বিশ্বের সব জায়গায় মুক্তচিন্তার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে, সেখানে এরকম আয়োজন করতে গেলে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ ধরনের আয়োজনে আমরা যেসব বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করবো তা বিশ্বের কোথাও হয়তো একত্রে করা সম্ভব নয়। নারী ইস্যু, হ্যাশট্যাগ মি টু, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা বিষয়ে আলোচনায় উঠে আসবে বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতা। ঢাকা লিট ফেস্টের ধারণাটি অনেক শক্তিশালী বলে আমি মনে করি। আমরা যা বলতে চাই, তা বলে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

নিঃশঙ্ক বাকস্বাধীনতার প্রত্যাশায় ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিন

এরপর পরই বর্তমান সময়ের গণ্ডি বিবেচনায় দুশো বছরের পুরোনো এই রাষ্ট্রযন্ত্রের ভবিষ্যত খুঁজতে আলাপে বসেন অ্যাডাম জনসন, ডেভিড বিয়েলো, জেমস মিক, কোর্টনি হোডেল ও নিশিদ হাজারির মতো পণ্ডিতেরা। পোস্ট-আমেরিকা ফিউচার শিরোনামে ঢাকা লিট ফেস্টের উদ্বোধনী এই সেশন সঞ্চালনা করেন কাজী আনিস আহমেদ। কেবল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটই নয়, বক্তারা আলোচনা করেন দেশটির সংস্কৃতি, সাহিত্য, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের খুঁটিনাটি নিয়ে।

দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বাংলা একাডেমির কসমিক টেন্টে আয়োজিত ‘প্রকাশনা শিল্প ও বইয়ের বিপণন’শীর্ষক আলোচনায় যোগ দেন প্রকাশক খান মাহাবুব, মিলন কান্তি নাথ, সৈয়দ জাকির হোসেন, মারুখ মহিউদ্দীন এবং পশ্চিমবঙ্গের ‘দে প্রকাশনা’র প্রকাশক অপু দে। সঞ্চালনায় ছিলেন ফিরোজ আহমেদ

বই প্রকাশনা শিল্প এগিয়ে নিতে কার কী দায়িত্ব? সরকারের, প্রকাশকের, লেখকের এবং পাঠকদের দায়িত্ব নিয়ে কথা উঠেছে। কথা উঠেছে প্রকাশনা শিল্প ও বইয়ের বিপণনের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়েও। পাশাপাশি ‘প্রকাশনা শিল্প ও বইয়ের বিপণন’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তাদের কণ্ঠে ফুটে ওঠে শঙ্কাও। তারা এই শিল্পের সংকটের দিকে দৃকপাত করেন।

বাংলাদেশের মেয়ে নাইমা। রিকশা চালানোর ইচ্ছে তার প্রবল। ওকে ঘিরেই মিতালি বোস লিখেছেন ‘রিকশা গার্ল’উপন্যাস। ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিন দুপুরে বাংলা একাডেমি লনে ‘নিউইয়র্ক লাইব্রেরি নির্বাচিত গত শতাব্দীর সেরা ১০০ শিশু সাহিত্য’তালিকায় স্থান করে নেওয়া এই বইটি নিয়ে সুপ্রভা তাসনিমের সঙ্গে মনখোলা আড্ডায় মাতেন তিনি। সবার সামনে তুলে ধরেন তার লেখক জীবনের ইতিবৃত্ত, সংগ্রাম, প্রেরণার গল্প।

শিশু সাহিত্যিক হওয়ার পেছনে মিতালি বোসের প্রবল আগ্রহের কারণ ছিল একটি। তিনি বিশ্বাস করেন, শিশুদের হৃদয় গড়ে দেওয়া গেলে সামনের পৃথিবীটা আরও অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।

ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথমদিনের দুপুরে কবি শামসুর রহমান সেমিনার হলে আয়োজিত হয় আলোচনা সভা ‘যে গল্পের পাঠক নেই।’ছোট গল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয় সভায়। এতে অংশগ্রহণ করেন সাহিত্যিক মইনুল আহসান সাবের, সাহিত্যিক আহমেদ মুস্তফা কামাল, সাহিত্যিক হামীম কামরুল হক এবং সাহিত্যিক রাশিদা সুলতানা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ছোটগল্পকার পারভেজ হোসাইন।

হামীম কামরুল হক বলেন, “যে গল্পের পাঠক নেই বলতে বুঝায় যে গল্প সবাই পড়তে পারবে না।  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘লেখার নান্দনিকতার প্রথম শর্ত হচ্ছে লেখাটা যেন সহজেই পড়া যায়।’ আমিও এরকমই মনে করি।’

নিঃশঙ্ক বাকস্বাধীনতার প্রত্যাশায় ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিন

আহমেদ মুস্তফা কামাল বলেন, ‘একটা গান মানুষ হাজার বারও শোনে। কিন্তু একটা গল্প মানুষ এক থেকে দুই বারের বেশি পড়ে না। এমন গল্প বা উপন্যাস লেখকদের তৈরি করা উচিত, যেটা পাঠকদের এক বার, দুই বার পড়া পরও তৃতীয় বার পড়ার স্বাদ জাগে।’

সারাবিশ্বে চলছে বিরামহীন যুদ্ধ। যুদ্ধ এখন বাস্তবতা।  এ প্রেক্ষাপটে ‘ক্র্যাশিং রিয়েলিটিস’শিরোনামে আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মঞ্চে কথা বলেন পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক মোহাম্মদ হানিফ। সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ সাহিত্য ম্যাগাজিন গ্রান্টার নির্বাহী সম্পাদক রস পর্টার। মাত্র ২৪ ঘণ্টার জন্য ঢাকায় ছিলেন তিনি। কথা বললেন তার নতুন বই ‘রেড বার্ডস’নিয়ে।

গল্পটা নামহীন, বিরতিহীন যুদ্ধের। এলি নামের একজন আমেরিকান পাইলট যিনি তার বোমারুবিমান নিয়ে দুর্ঘটনার পরে নিজেকে খুঁজে পান মরুভূমিতে। মোহাম্মদ হানিফ তার চিরায়ত স্বভাব স্যাটেয়ার দিয়েই যুদ্ধের নির্মমতা বোঝান। হতাশা আর স্যাটায়ার একাকার ‘রেড বার্ডস’ বইটিতে। তিনি বলেন, ‘যে বছর আমার জন্ম তখন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, যখন আমি প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করি, তখন বাংলাদেশ-পাকিস্তানের যুদ্ধ এবং যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ! সেই যুদ্ধ এখনও চলমান।’

বঙ্গবন্ধুর সময় নষ্ট করে নেতাকর্মীরা নিজেদের কর্তৃত্ব দেখলেও তারা বঙ্গবন্ধুর অনেক ক্ষতি করেছিল— জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের জবানিতে উচ্চারিত হলেও কথাগুলো আসলে ‘বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়’বই থেকে উদ্ধৃতি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরও দুটি বই ‘মুজিব ভাই’ও ‘শেখ মুজিব ট্রায়ামফ অ্যান্ড ট্রাজেডি’নিয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয় ‘ঢাকা লিট ফেস্ট-২০১৮’-এর উদ্বোধনী দিন।

‘দিনগুলি: স্মৃতিচারণ' শীর্ষক সেশনে আলোচনা হয় ‘বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভা’, ‘মুজিব ভাই’ এবং ‘শেখ মুজিব ট্রায়ামফ অ্যান্ড ট্রাজেডি’ বই তিনটি নিয়ে। এ তিন বইয়ের লেখক যথাক্রমে মফিজ চৌধুরী, এবিএম মুসা এবং এস এ করিম।

লিট ফেস্টের প্রথমদিন দুপুরে আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ‘সময়ের গান, অসময়ের কবিতা’শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানও। এতে অংশগ্রহণ করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শামীম রেজা।

অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমাকে কেউ সিরিয়াসলি নেয়নি। কারণ, আমি ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলেছি, হকি খেলেছি, ইন্টার কলেজে ফাইনাল খেলেছি। এছাড়া স্কাউটিং করতাম, ভলিবল খেলতাম, ডিবেট করতাম। মানে আমার যা কিছু করার, করেছি। অনেকে বলে নূর তো রাজনীতি করে, কিন্তু ওকে ঠিক পলিটিশিয়ান বলা যায় না। আবার অনেকে বলে, ও তো নাটক করে। অনেকে বলে, এখন তো আর করে না! আমার মনে হয়েছে, কেউ আমাকে সিরিয়াসলি নেয় না।’

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আমি ১৯৭৯ সালে জার্মান গিয়েছিলাম একদম শ্রমিক হিসেবে। আমি দু’বছর ছিলাম সেখানে। প্রবাস সম্পর্কে যে বাংলা সাহিত্য আমাদের দেশে প্রকাশিত হয়েছে তার অনেকগুলো আমি পড়ে দেখেছি। সেখানে পাঠকরা জেনেছে ইউরোপ-আমেরিকায় গেলে হাওয়ায় ডলার উড়তে থাকে, হাত বাড়ালেই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমি সেখানে গিয়ে দেখি এর উল্টো। সেখানে অমানবিক কাজ হয়। ভালো বাসা ভাড়া দেয় না কেউ। যেখানে টাকা দিয়ে সুবিধা পাওয়া সম্ভব সেখানেও সুবিধা পাওয়া যায় না  গায়ের রঙের কারণে।’

এদিকে নিওরো বিজ্ঞানী গর্গ চ্যাটার্জির সঞ্চালনায় আয়োজিত হয় ‘মিথ্যা বলার অধিকার নিয়ে কথা’। ‘রাইট টু লাই’ শীর্ষক এই আয়োজনে আরও ছিলেন জাকির কিবরিয়া, সৈয়দ মফিজ কামাল অনিক এবং ডেভিড বিওয়েল। তারা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ও ব্যক্তি আচরণ নিয়ে কথা বলেন। প্রযুক্তির অপব্যবহার মানুষকে মিথ্যুক করে তুলছে। মানুষ কথা বলার সময় ও সুযোগ হারিয়ে ফেলছে। সব মিলিয়ে প্রতারণা বাড়ছে।

সাহিত্যের ক্ষেত্রে অনুবাদে সৃজনশীলতার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কারণ, অনুবাদে ভিন্ন ভাষার মূল অক্ষুণ্ন রেখেও রূপান্তর সম্ভব। এমন অভিমতের পাশাপাশি ভিন্ন বক্তব্যও উঠে আসে ‘অনুবাদ: মূলানুগ নাকি রূপান্তর’ শীর্ষক আলোচনায়। ভাস্কর নভেরা এক্সিবিশন হল মিলনায়তনে অনুবাদক আলীম আজিজ , আলম খোরশেদ এবং মোজাফফর হোসেনের আলাপচারিতায় সূত্রধরের ভূমিকায় ছিলেন প্রথিতযশা অনুবাদক রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী।

এরপর শুরু হয় সাদাত হোসেন মান্টোর জীবনী নিয়ে নন্দিতা দাসের চলচ্চিত্র ‘মান্টো’র প্রদর্শনী। চলচ্চিত্র প্রদর্শন শেষে নন্দিতা বলেন এই ছবি তৈরির গল্প।

এ সময় বটতলার মঞ্চে জয়িতা খান রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন। একই সময় ভাস্কর নভেরা মঞ্চে শিশুদের লেখার কর্মশালা করান শিশুতোষ লেখিকা মিতালি পার্কিন্স। এর আগে লনের মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তি হয়।  বিকালের শেষভাগে বাংলা একাডেমির লনে কবিতা পাঠ করেন দেশের শীর্ষ কবিরা। কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজীর সঞ্চালনায় এই আবৃত্তিতে অংশ নেন আলফ্রেড খোকন, রাজু আলাউদ্দিন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, এবারের লিট ফেস্টে আলোচনা, পারফরম্যান্স চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজনে শতাধিক সেশন থাকছে। আরও আছে আনপ্লাগড মিউজিক কনসার্ট। সম্ভাব্য সেশনের আনুষ্ঠানিক তালিকা ইতোমধ্যেই লিট ফেস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। www.dhakalitfest.com-এ পাওয়া যাবে প্রোগ্রাম তালিকা।

এবার লিট ফেস্টে বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে থাকছেন ভারতীয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বাংলা ভাষার লেখকদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা অতুলনীয়। ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনে তিনি যোগ দেবেন এই আয়োজনে, কথা বলবেন বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের সঙ্গে।

বিদেশি অতিথিদের মধ্যে আগামীকাল শুক্রবার ও এরপর দিন শনিবার আরও অংশ নেবেন ব্রিটিশ উপন্যাসিক ফিলিপ হেনশের, বুকার বিজয়ী ব্রিটিশ উপন্যাসিক জেমস মিক, ভারতীয় জনপ্রিয় লেখিকা জয়শ্রী মিশরা, লন্ডন ন্যাশনাল একাডেমি অব রাইটিংয়ের পরিচালক ও কথাসাহিত্যিক রিচার্ড বেয়ার্ড, ভারতীয় লেখিকা হিমাঞ্জলি শংকর, ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এশিয়ার প্রধান হুগো রেস্টল, মার্কিন সাংবাদিক প্যাট্রিক উইন, লেখক ও সাংবাদিক নিশিদ হাজারি।

দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা লিট ফেস্টে থাকছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী টিলডা সুইন্টন। এবারও আসছেন তিনি নিজের লেখালেখি নিয়ে কথা বলতে। তারকাদের তালিকায় এবার যুক্ত হচ্ছেন বলিউড কাঁপানো অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা। লিট ফেস্টে তিনি আসছেন নিজের আত্মজীবনী নিয়ে কথা বলতে। আসছেন অভিনেত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট নন্দিতা দাস। কথা বলেন তিনি নারী অধিকার, অভিনয় জীবন ও বহুল আলোচিত হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন নিয়ে।

বিদেশি কবি-লেখক-চলচ্চিত্রকার-সাংবাদিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রায় দেড়শ’ লেখক, অনুবাদক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ থাকছেন বার্ষিক এ আয়োজনে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ড. আনিসুজ্জামান, আফসান চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কামাল চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী, ফখরুল আলম, ইমদাদুল হক মিলন, মঈনুল আহসান সাবের, আলী যাকের, সেলিনা হোসেন, শামসুজ্জামান খান, আনিসুল হক, কায়সার হক, খাদেমুল ইসলাম, অমিতাভ রেজা, মুন্নী সাহা, শাহনাজ মুন্নী ও নবনীতা চৌধুরীসহ অনেকে।

বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে স্বনামধন্য ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল শুক্রবার ঘোষণা করা হবে। একই দিনে লঞ্চ করা হবে ক্যামব্রিজ শর্ট স্টোরি প্রাইজ।

তিন দিনের এই সাহিত্য উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতায় আছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় এই উৎসব পরিচালনা করছেন কথাসাহিত্যিক এবং বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ, কবি সাদাফ সায্ সিদ্দিকী ও কবি আহসান আকবার। ঢাকা লিট ফেস্টের টাইটেল স্পন্সর হিসেবে থাকছে বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউন, কি-স্পন্সর হিসেবে থাকছে ব্র্যাক ব্যাংক। গোল্ড স্পন্সর এনার্জিস, স্ট্রাটেজিক পার্টনার ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং পুরো আয়োজন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে যাত্রিক।

ঢাকা লিট ফেস্টে অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন চলছে এই ঠিকানায়- www.dhakalitfest.com/register/। উৎসবের শেষ দিন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন চলবে।

 

/এফএএন/এইচআই/এনএ/
সম্পর্কিত
আমি ইউটিউবে বাংলাদেশের নাটক দেখি: শীর্ষেন্দু
দৃঢ় হলো পাঠক-লেখকের বন্ধন, শেষ হলো ঢাকা লিট ফেস্ট
ফেক নিউজ: অধিকার, দায়বোধ, প্রতিকার
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!