আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের গ্রেফতারের একশ’ দিনের মাথায় মুখে লাল ফিতে বেঁধে ও হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন আলোকচিত্রীরা। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ প্রতিবাদ জানায় আলোকচিত্রীরা।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির বলেন, একশ’ দিন পার হয়ে গেল শহিদুল আলমকে টেনে-হিঁচড়ে ঘর থেকে নিয়ে গেছে। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে নিয়ে গেছে। এ হলো বর্তমান বাংলাদেশ।
তিনি বলেন,‘এদেশের নাগরিক হিসেবে আমি আমার বিচার পাবো, জায়গা পাবো—এখন সেই জায়গাটাও আমাদের কাছে নেই। সেই জায়গাটা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সরকার আমাদের হয়তো বোঝাতে চেয়েছে আপনারা কথা বলবেন না। কথা বললে পরিণতি এটা হবে। হোক, কত হবে, কত জনকে নিয়ে যাবে। আজ এখানে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছি। এখান থেকে একজনকে নিয়ে গেলে বাকিরা চুপ থাকবে না। আমরা আরও বেশি জোরেশোরে কণ্ঠ মেলাতে শুরু করবো।’
ছবির শিক্ষালয় পাঠশালার শিক্ষক মুনেম ওয়াসিফ বলেন, ‘একটা দেশে নানা ধরনের, নানান জনের মত থাকতেই পারে। একজনের সঙ্গে অন্যজনের দ্বিমত থাকতেই পারে। রাষ্ট্র যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিমত থাকলে রাষ্ট্রকে যেন প্রশ্ন করতে পারি, সেজন্যই দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার এত দিন পর যখন মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে না তখন এই স্বাধীনতা নিয়ে কোথায় যাবো আমরা?’
তিনি বলেন, নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্বরাসহ আরও অসংখ্য মানুষ শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু আজ একশ’ দিন পরে আমাদের এখন এটা মনে হচ্ছে, এই বক্তব্যগুলো সেই অর্থে কারও কানে পৌঁছায়নি। যদি কারও কানে গিয়ে না পৌঁছায় তবে কার কাছে বলবো?
কত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শহিদুল আলমের মতো মানুষ তৈরি হয়, তা আমরা বুঝতে চাই না। যখন এমন মানুষ হারাবো, তখন বুঝে খুব একটা লাভ হবে না।’
তেল গ্যাস, বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি খুনের আসামি—যে ফাঁসির জন্য অপেক্ষা করছে, তাকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দিয়েছেন। এছাড়া এর আগে অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে এবং তাদের সসম্মানে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এটা হচ্ছে আইন আদালতের একটা দিক। ইয়াবা সম্রাট হিসেবে যাকে দেখি তাকে ক্ষমতার মধ্য থেকে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় ওমরাহ করার জন্য। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাই আর বিলম্ব না করে একশ’ দিনের দায়-দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে আপনারা শহিদুলকে আগামীকালেরর মধ্যে মুক্তি দিন।’
মানববন্ধনে আলোকচিত্রীরা ছাড়াও শহিদুল আলমের স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ, অভিনেত্রী বন্যা মির্জা, তসলিমা আক্তার, তানজিম ওয়াহাব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।