X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় আদিবাসী কোড ৭৭ এর অপব্যবহারের অভিযোগ

তাসকিনা ইয়াসমিন
১৫ নভেম্বর ২০১৮, ২৩:৪০আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ২৩:৪২

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি

মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় আদিবাসী কোড ৭৭ এর অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এই কোডটি ব্যবহার করে সমতলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। ফলে, বঞ্চিত হচ্ছে সমতলের আদিবাসীরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) এর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ৪৫টি জাতিসত্ত্বার প্রায় ৩০ লাখ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। সরকারিভাবে যারা ‘ক্ষুদ্র- নৃ গোষ্ঠী’ হিসেবে পরিচিত। তিন পার্বত্য জেলায় ১৩টি ভাষাভাষীর ১২টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। বাকি ৩২টি জাতিগোষ্ঠী দেশের শেরপুর, জামালপুর,নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, গাজীপুরসহ রাজশাহী বিভাগের বেশ কিছু সংখ্যক জেলায় বাস করে, যারা সমতলের আদিবাসী বলে পরিচিত। এমবিবিএস মেডিক্যাল ভর্তি কার্যক্রমে  কোটার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়ার জন্য সমতলের আদিবাসীদের জন্য মোট ৮টি আসন রয়েছে, যা সরকারিভাবে ‘ ট্রাইবাল কোটা (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত) ’ বলে উল্লেখ রয়েছে। এই কোটা সুবিধা নিতে হলে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সময় কোড নম্বর ‘ ৭৭ ’ টিক চিহ্ন দিতে হয়।

তাদের মতে, যারা এই কোড নম্বরে টিক চিহ্ন দেবেন,তারাই ট্রাইবাল শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। কিন্তু  অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে অনেক ‘ নন-ট্রাইবাল ’ শিক্ষার্থী   ট্রাইবাল (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত)  শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ‘৭৭’ কোড নম্বরে টিক চিহ্ন ব্যবহার করে আসছে। কারণ বরাদ্দকৃত মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যতীত ‘৭৭’ কোড নম্বর ব্যবহারকারীর ‘ট্রাইবাল সার্টিফিকেট’ যাচাই বাছাই করার মাঝপথে আর কোনও কর্তৃপক্ষ নেই। একজন শিক্ষার্থী যখন ভর্তির অনুমতি পেয়ে কোনও কলেজে ভর্তি হতে যায়, শুধু তখন ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ দ্বারাই ট্রাইবাল সার্টিফিকেট যাচাই হয়। মেধাস্কোর ও মেধাস্থানের বিবেচনায়  তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকার সুযোগে  কোড নম্বর ‘৭৭’  ব্যবহারকারী  অনেক ‘নন-ট্রাইবাল ’পরীক্ষার্থী ট্রাইবাল কোটার আসন দখল করে নেয়। আবার ‘৭৭’ কোড নম্বর ব্যবহার করে ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও ‘নন-ট্রাইবাল’ পরীক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষকে ট্রাইবাল সার্টিফিকেট দেখাতে না পেরে কলেজে ভর্তি হতে পারেন না।

বাগাছাস এর ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি প্যাট্রিক চিসিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষার মূল ফলাফল থেকে তৃতীয় মাইগ্রেশন পর্যন্ত চলে ‘নন-ট্রাইবাল’ শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ প্রদান এবং ট্রাইবাল সার্টিফিকেট না থাকায় তাদের ভর্তি হতে না পারার খেলা। ততক্ষণে ভর্তি হওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যায়। আর প্রকৃত টাইবাল শিক্ষার্থীরা পড়ে থাকে আলোচনার বাইরে। শূন্য রয়ে যায় ট্রাইবাল কোটার আসন। অথচ কোনো শিক্ষাবর্ষেই ন্যূনতম পাস নম্বর প্রাপ্য ৮ জন ট্রাইবাল শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। গত বছরও দু’টি আসন শূন্য রয়ে যায়।

গতবছর ভর্তির নূন্যতম নম্বর পেয়ে ভর্তি হতে পারেননি সমতলের আদিবাসি মেধাবী শিক্ষার্থী  রিম্মিত আমুয়া চিরান একজন গারো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ন্যূনতম পাস নম্বরের বেশি নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি।  আমার ভর্তি পরীক্ষার রোল নং- ১৪৩৪২৯, টেস্ট স্কোর -৫৬.৭৫, মেধাস্কোর-২৪৭.৫  ও মেরিট পজিশন -১১৩৭০।   কিন্তু ট্রাইবাল শিক্ষার্থীদের  জন্য বরাদ্দকৃত ৮টি আসনে আমার  নাম নেই । অথচ কোনো শিক্ষাবর্ষেই ন্যূনতম পাস নম্বর প্রাপ্য ৮ জন ট্রাইবাল শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। আদিবাসী নেতৃবৃন্দ থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তাই গত ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায়  ভালো ফলাফল করেও প্রাপ্য টাইবাল কোটার আসন হারানোর তিক্ত অভিজ্ঞতা এবারও আমাকে শঙ্কিত করে তুলেছে।

তার বাবা বচন নকরেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর চাইলে শুরুতেই সমতলের আদিবাসিদের এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। তারা যদি ৭৭ কোডটি পূরণ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জমা নেয় তাহলে তাদের ভর্তি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। তিনি বলেন, পাওন আদিবাসীরা মুসলমান। তারা তো এই কোড এ টিকচিন্থ দেয়। কিন্তু বাঙালিরা আদিবাসী কোডে টিকচিহ্ন দেয়। এতে করে তারাও ভর্তি হতে পারে না। আবার আদিবাসীরাও ভর্তি হতে পারে না। আর একটা ব্যাপার হিল ট্রাকসের আদিবাসী ও সমতলের আদিবাসী অনেক পার্থক্য।

বাগাছাস এর সাধারণ সম্পাদক জেউন্স ঘাগ্রা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এবছরও  ৪  জন   ‘ নন - ট্রাইবাল ’ শিক্ষার্থী নিশ্চিতভাবে ট্রাইবাল কোটার আসন দখল করেছে । গতবছর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল তারা এখনও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। অন্যদিকে, আরও একটি ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে  বলেন, আমাদের কাছে এই ধরনের একটা অভিযোগ আছে যে, যারা উপজাতীয় না তাদেরকে উপজাতীয় হিসেবে মর্যার্দা দিয়ে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের উপজাতীয় কোটা নির্ধারণের সিস্টেম হলো এই যে, ওরা যখন মেডিক্যাল ফরম পূরণ করে তখন তারা বলে যে আমরা উপজাতীয়। যে এই দাবি করে তাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সনদপত্র দিতে হয়। এই সনদপত্রে তাকে উপজাতীয় হিসেবে লেখা হয় তাহলে তাকে আমরা উপজাতীয় হিসেবে গ্রহণ করি না হলে করিনা। কারণ তাকে প্রুফ করতে হয় যে সে উপজাতীয়। এখন সমস্যা যেটা হয় কেউ কেউ মুসলিম হয়েছে। যারা মুসলিম নাম গ্রহণ করেছে তাকে তো নাম দেখে চেনার উপায় থাকে না। আমার কাছে যে অভিযোগ এসেছে সেখানে বলা হয়েছে নাম উপজাতীয় হচ্ছে না। আমরা ডিসি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সনদপত্র এনেছি। এখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যখন বলবে যে সে উপজাতীয়। আমরা যেহেতু কয়েকজনের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি আমরা নিজস্ব চ্যানেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আমরা আগে এই কাজটি করতাম না। মূল সমস্যা হচ্ছে কিছু সমতলের ট্রাইবালের সঙ্গে নামগুলো উপজাতীয়দের নামের সঙ্গে মেলেনা। যেমন দিনাজপুরের সমতলের ট্রাইবাল অনেকের নাম মেলেনা। একজন মুসলমান হলে তার নাম মুসলমানের মতোই নাম রাখবে। তার তো একটা অধিকার আছে। তার বাবা, মা আছে । ভাই বোন আছে এবং তারা উপজাতীয়। আমরা চাই যে, সকলের যে অধিকার প্রাপ্য তা থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হয়। সেক্ষেত্রে আমরা পুনঃতদন্ত করে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা