X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যারিটেবল মামলায় যেসব গ্রাউন্ডে খালাস চেয়েছেন খালেদা জিয়া

বাহাউদ্দিন ইমরান
১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৬আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:৪০





খালেদা জিয়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর বিচারিক আদালতের দেওয়া এই কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেছেন তার আইনজীবীরা। এক্ষেত্রে ২০টি গ্রাউন্ডের কথা ওই আপিল আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাইকোর্টে আপিল আবেদনকারী মামলার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড ব্যারিস্টার নওশাদ জমির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন ও খালাস চেয়ে মূল ৪১ পৃষ্ঠার আপিল আবেদন দাখিল করেছি। ওই আবেদনের সঙ্গে বিচারিক আদালতের ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় সংযুক্ত করা হয়েছে। আর আপিল আবেদনে ২০টি গ্রাউন্ডের উল্লেখ করা হয়েছে।’
চ্যারিটেবল মামলায় আপিলে দাখিল করা ১১টি গ্রাউন্ড হলো—
১. জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় খালেদা জিয়া হস্তক্ষেপ করেননি এবং এ মামলায় ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন প্রযোজ্য নয়।

২. জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে হিসাব খোলার আবেদন ফর্মে খালেদা জিয়ার সই থাকলেও তার পদবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ নেই কিংবা তার প্রধানমন্ত্রী পদবীর কোনও সিল নেই। এই ট্রাস্টের কোনও হিসাবেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ নেই। এই ট্রাস্ট তিনি তার ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে পরিচালিত করতেন।
৩. এই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোনও তথ্যপ্রমাণ ছিল না। এই মামলায় তাকে ধারণার ওপর নির্ভর করে অভিযুক্ত এবং সাজা প্রদান করা হয়েছে।
৪. রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ফান্ডে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।
৫. ডা. ফারজানা আহমেদ নামের এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু তাকে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষী বা তার কোনও লিখিত বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।
৬. দুদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং পক্ষপাতমূলকভাবে এ মামলার অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যা রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়।

৭. কারাগারের ভেতরে স্থাপিত আদালতে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে এ মামলার বিচারকার্য পরিচালনা, সাজা ও দণ্ড প্রদান করা হয়েছে, যা বেআইনি।
৮. জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যক্তিগত ট্রাস্ট্র, যা ট্রাস্ট আইন ১৮৮২ দ্বারা পরিচালিত হবে। তাই এর বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষমতা দুদকের নেই।
৯. মামলার এক কোটি ৩৫ লাখ টাকার পে অর্ডার সম্পর্কিত বিচারিক আদালতের অনুসন্ধানটি মামলার মূল নথির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
১০. মামলার দালিলিক প্রমাণ ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য এটা প্রমাণ করে যে, মেট্রো মেকার অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড মামলা সংশ্লিষ্ট পাঁচটি পে অর্ডারের আবেদন করেছিল।
১১. মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে, মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পাঁচটি পে অর্ডার সম্পর্কিত বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য।
এছাড়া আপিল আবেদনের বাকি নয়টি গ্রাউন্ড মামলা পরিচালনার স্বার্থে প্রকাশ করতে নারাজি জানান ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। তিনি বলেন, ‘মামলাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মামলা পরিচালনার স্বার্থে অবশিষ্ট গ্রাউন্ডগুলো এখনই প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’
গত ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান এ রায় দেন।
এছাড়া খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের ব্যক্তিগত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ব্যক্তিগত সহকারী সচিব মনিরুল ইসলামকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ট্রাস্টের নামে ঢাকা শহরে থাকা ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রায়ত্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় কারাবন্দি খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে মামলার অন্যতম আসামি হারিছ চৌধুরী পলাতক থাকলেও কারাগারে থাকা অন্য দুই আসামি জিয়াউল ও মনিরুল আদালতে রায় ঘোষণার সময় হাজির ছিলেন।
এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বর্তমানে সেই সাজা খাটছেন তিনি। এ অবস্থায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় হয় গত ২৯ অক্টোবর।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন বিচারিক আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই ওইদিন খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
কৃষিজমির উপরিভাগ কাটার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
কৃষিজমির উপরিভাগ কাটার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
রাজধানীর শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন
রাজধানীর শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন
বিএসএফের ছোড়া ৩০টি ছররা গুলি লাগলো বাংলাদেশি যুবকের শরীরে
বিএসএফের ছোড়া ৩০টি ছররা গুলি লাগলো বাংলাদেশি যুবকের শরীরে
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি