ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের সব মহাসড়ককে সার্বক্ষণিক ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরার (সিসিটিভি) আওতায় আনা হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পুরোটাই সিসিটিভির আওতায় আনতে চায় পুলিশ, যেন এরমাধ্যমে এই মহাসড়কের সারাদিনের ভিডিওচিত্র পর্যালোচনা করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। তবে, এ কাজটি শুরু করতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যায়ক্রমে অন্য মহাসড়কগুলোকেও সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে পুলিশের। এছাড়া রেকার ও অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ও সরঞ্জাম কেনার মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশকে আরও গতিশীল করারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও আমদানি-রফতানি বাড়ানোর জন্য মহাসড়কগুলোয় শৃঙ্খলা ও নিরাপদ যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। দেশের অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশ ও অগ্রযাত্রায় মহাসড়কগুলোর পূর্ণ ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণের কোনও বিকল্প নেই। সার্বিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে যানবাহনের সংখ্যা। ফলে মহাসড়কগুলোয় তৈরি হচ্ছে যানজট। ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চত করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের হাইওয়ে ইউনিটের সক্ষমতা না বাড়ালে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সে জন্য পুলিশ সদর দফতরের প্রস্তাবনা অনুযায়ী সরকার হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের মহাসড়কগুলোর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি দেশের মূল বাণিজ্যিক রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেজন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সিটিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনে সার্বক্ষণিক নজরদারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, ট্রাফিক জ্যাম ও সড়ক দুর্ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। নাগরিকের জীবন ও সম্পদেরও নিরাপত্তা দেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে। প্রায় একবছর আগেই হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে আধুনিক সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় যানবাহন সংগ্রহের মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ‘হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ নামে ২৪৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হাইওয়ে-তে যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে। দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয়ে মামলার তদন্তের ক্ষেত্রেও সুফল পাওয়া যাবে। অস্ত্র ও মাদকপাচার রোধ ও চোরাচালান প্রতিরোধ করা যাবে। সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়া যাবে। মহাসড়কের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ বাড়িয়ে তোলা সম্ভব হবে। এছাড়া আধুনিক টেকনোলজির মাধ্যমে সন্দেহজনক গতিবিধি শনাক্ত করা, অটোমেটিক নম্বর প্লেট শনাক্ত করা, উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরা বা সন্দেহজনক আচরণ শনাক্ত করার মাধ্যমে মহাসড়ককে যানজট মুক্ত রাখা যাবে।
মহাসড়কগুলোকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসাসহ হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মো. আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন মহাসড়ককে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসার কাজ শুরু করতে আরও সময় লাগবে। এগুলো বাস্তবায়ন করতে আরও অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হবে।’ তবে এটা বাস্তবায়িত হলে মহাসড়কের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে হাইওয়ে পুলিশ অনেক এগিয়ে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
