X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

তাবলিগের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, ২৫ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি

শেখ জাহাঙ্গীর আলম
০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:৫৮আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:১৭

 

শনিবারের সংঘর্ষের পর ইজতেমা ময়দানে পড়ে থাকা মুসল্লিদের মালামাল টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় রবিবার (২ ডিসেম্বর) রাতে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। এতে ২০-২৫ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শনিবার  বেলা ১১টার দিকে ওই সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুরো ইজতেমা ময়দান। ময়দানের চারপাশ ও ভেতরে বিপুল পরিমাণে পুলিশ, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। ময়দানে পড়ে থাকা অসংখ্য মালামাল সঠিক ব্যক্তিদের কাছে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ খোদ প্রশাসন। রবিবার (২ ডিসেম্বর) টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে সরেজমিন এমন চিত্র দেখা যায়। 

শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় টঙ্গী পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) রকিবুল হাসান বাদী হয়ে ২০-২৫ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-০১। তবে এই ঘটনায় এখনও কোনও আসামি গ্রেফতার হয়নি। এছাড়াও ওই সংঘর্ষে ইসমাইল মণ্ডল (৭০) নামে একজন নিহতের ঘটনায় এখনও কোনও মামলা দায়ের হয়নি। 

পুলিশ বলছে, প্রতিপক্ষের হামলায় ইজতেমার ময়দানের ভেতরে ইসমাইল মণ্ডল নিহত হন। এই ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে একটি মামলা করার কথা রয়েছে। এদিকে, ইসমাইল মণ্ডল নিহতের ঘটনায় শনিবার রাতেই টঙ্গী পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক রেজাউল করিম একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর-৯) দায়ের করেন। 

ওসি এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওইদিন প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত ইসমাইল মণ্ডলের স্বজনরা তার মরদেহ দাফন করার জন্য গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। দাফন শেষে তার ছেলে বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’ 

ইজতেমার ময়দানে সরেজমিন দেখা গেছে, গেটের বাইরে শত শত মুসল্লি দাঁড়িয়ে আছেন আর ভেতর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মুসল্লিদের সারিবদ্ধভাবে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। ভেতরে প্রবেশ করে মুসল্লিরা পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে নিজেদের মালামাল বুঝে নিচ্ছিলেন। এ সময় ইজতেমার ময়দানের ভেতরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে ভাঙচুর করা গাড়ি ও আগুনে পোড়া মোটরসাইকেল।

নিরাপত্তায় নিয়োজিত র‌্যাব এদিকে, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের মালামালের ইনভেন্টরি তৈরি করা, রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক ব্যক্তির কাছে মালামাল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ওয়াইএম বেলালুর রহমানের নির্দেশে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. আবু হানিফকে কমিটির প্রধান করা হয়। এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের একজন প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি, টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ সুপার (এসি) মো. আহসানুল হক, গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. কাওসার আহমেদ, টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক, জিএমপির সিটিএসবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফ ইউসুফ, মাওলানা সা’দের অনুসারী আলহাজ মো. মনির হোসেন ও মাওলানা জোবায়েরের অনুসারী ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহফুজ।  

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর দফতরের উপ-কমিশনার (ডিসি ক্রাইম) মো. শরীফুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ময়দানের ভেতরে মুসল্লিদের যেসব মালামাল আছে সেগুলো দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির মাধ্যমে মালামাল দেওয়া হচ্ছে। এসব মালামাল নিতে মুসল্লিদের নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। এরপর মুসল্লিদের মালামাল দেওয়া হচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। তার ছেলে বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি মামলা করার কথা রয়েছে। সেটি এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন, সে কারণেও মামলা দায়ের হবে।’

মুসল্লি মো. সোহেল খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইজতেমায় অংশ নিতে টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকা থেকে এসেছিলাম। গতকাল সংঘর্ষের ঘটনায় আমরা আহত হয়েছিলাম। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রশাসন সবাইকে ময়দান থেকে বের করে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের মাল-সামানা ময়দানেই ছিল। সেগুলো নিতে আজ (রবিবার) সকালে এসেছিলাম। মাল-সামানা বুঝে পেয়েছি, এখন বাড়ি যাবো।’ 

তিনি বলেন, মাল-সামানা নিতে হলে প্রথমে নিজেদের মাল-সামানার তালিকা দিতে হয়েছে, পরে ভেতরে গিয়ে নাম পরিচয় ও মোবাইল নম্বর এন্ট্রি করে পরে মাল-সামানা নিয়ে এসেছি। 

মুসল্লিদের অন্য একজন আবদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘গতকাল আমরা ময়দানের ভেতরে বসে জিকির করছিলাম। শনিবার সকাল ১১টার দিকে সাদপন্থিরা ময়দানের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তখন আমরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে ছুটোছুটি করি। তারপরও আমরা হামলা থেকে বাঁচতে পারিনি। গতকাল সবাইকে ময়দান থেকে বের করে দিলেও আমাদের মালামাল ভেতরে ছিল। আজ (রবিবার)এগুলো নিতে এসেছিলাম। নাম-ঠিকানা মোবাইল নম্বর এন্ট্রি করে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে মালামাল নিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই দেশে শান্তি বিরাজ করুক। এ বিষয়টি সুরাহা করে তাবলিগ জামাতের তরিকা অনুযায়ী পুনরায় যাতে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।’

 

/এমএএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সিলেটে আবারও শুরু হচ্ছে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম
সিলেটে আবারও শুরু হচ্ছে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন