রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০১৮ সালের ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে ঘষামাজার অভিযোগের দ্বিতীয় দফা তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। প্রথম দফা তদন্তে ঘষামাজার প্রমাণ পাওয়ার পর আলাদা তদন্তের উদ্যোগ নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। গত ২৬ সেপ্টেম্বর চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু গত তিন মাসেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ভর্তি পরীক্ষায় মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার খাতায় ভুল উত্তর রাবার দিয়ে মুছে ফেল করা ছাত্রদের পাস করানোর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগে অধ্যক্ষ ড. শাহান আরার বিরুদ্ধে তিন কোটি টাকা আয় করার উল্লেখ করা হয়। এই অভিযোগের তদন্ত করে ঢাকার জেলা প্রশাসন। তদন্তে উত্তরপত্রে ঘষামাজার অভিযোগের প্রমাণ মেলে।
শ্যামলী সিমু নামের এক অভিভাবকের অভিযোগের পর গত ১৯ এপ্রিল ঢাকা জেলা প্রশাসককে তদন্তের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। জেলা প্রশাসন থেকে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পরবর্তী সময়ে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, ঢাকা) তাসলিমা মোস্তারিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাসলিমা মোস্তারি ঘটনা তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান গত ৮ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের মাতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল, মুগদা ও বনশ্রী শাখায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তীর্ণ ১২২ জনের খাতা পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনা করা খাতার মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির বালক (ক্যাচমেন্ট) বাংলা মাধ্যম মতিঝিল শাখার ৩৩টি, দ্বিতীয় শ্রেণির বালিকা বাংলা মাধ্যম (মতিঝিল শাখা) ৮টি, তৃতীয় শ্রেণির বালক (উন্মুক্ত) বনশ্রী শাখার ৮টি, তৃতীয় শ্রেণির বালক (বাংলা মাধ্যম) মুগদা শাখার ৭টি ও তৃতীয় শ্রেণির বালক (উন্মুক্ত) বনশ্রী শাখার ৯টিসহ মোট ৬৯টি খাতায় ঘষামাজা ও ওভাররাইটিং থাকায় জব্দ করা হয়। কিছু খাতার উত্তর রাবার দিয়ে মুছে ঘষামাজা ও ওভার রাইটিং করা হয়েছে। কিছু কিছু খাতায় হাতের লেখায় অসামঞ্জস্য রয়েছে।
তবে, ঘষামাজার সঙ্গে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম, সহকারী প্রধান শিক্ষক আ. ছালাম খান, হিসাব সহকারী দীপা, সাব-এসিটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার কাম অফিস সহকারী মো. আতিকুর রহমান খান, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. কবির হোসেন ও আতিকুর রহমানের লেখার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি অনুসন্ধানে স্পষ্ট করা সম্ভব হয়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আর অধ্যক্ষের তিন কোটি টাকা আয় করার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে কিছুই বলা হয়নি।
তদন্তে ঘষামাজার প্রমাণ পাওয়া গেলেও ঘটনা তদন্তে মাউশি আলদা কমিটি গঠন করে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা অঞ্চলের পরিচালককে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গত তিন মাসেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। অন্যদিকে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির ২০১৯ সালের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একাধিকবার তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে মাউশির মহাপরিচালকের কাছে। কিন্তু গত কয়েক মাসেও দুদককে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি মাউশি। এ বিষয়ে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করলে জেলা প্রশাসনের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন ও মাউশির তদন্ত প্রতিবেদন দুটোই দুদককে দেওয়া হবে।’
দ্বিতীয় দফা অভিযোগেও মতিঝিল আইডিয়ালের অধ্যক্ষহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান।
তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মো. ইউসুফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামনের ভর্তি পরীক্ষার আগেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’ দায়সারা গোছের তদন্ত না করে ভালোভাবেই তদন্ত করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন।