X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা: ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে

নুরুজ্জামান লাবু
০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:১৩আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:২০

অভিযুক্ত ১০ জনের মধ্যে গ্রেফতার হওয়া ৭ জন

রাজধানীর কল্যাণপুরের জাহাজবাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান ও জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলিতে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করে চার্জশিট প্রস্তুত করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম- সিটিটিসি ইউনিট। ১০ আসামির মধ্যে ৩ জন এখনও পলাতক রয়েছে। বাকি ৭ জন বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তবে এই আস্তানায় বসে রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী পরিকল্পনা করলেও ঘটনার সময় নিহত ৯ জন ও নারায়ণগঞ্জে নিহত তামিম চৌধুরী ও আশুলিয়ায় নিহত সরোয়ার জাহানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সিটিটিসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সিটিটিসির উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘কল্যাণপুরের অভিযানের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার চার্জশিট প্রস্তুত করে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলেই তা আদালতে জমা দেওয়া হবে। চার্জশিটে ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন এখনও পলাতক রয়েছে।’

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ওই মাসেরই ২৬ জুলাই জঙ্গি আস্তানায় প্রথম পাল্টা অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপারেশন স্টর্ম-২৬ নামের পুলিশের ওই অভিযানে ৯ জঙ্গি মারা যায়। রাকিবুল হাসান রিগ্যান নামে একজনকে গ্রেফতার করলেও ঘটনাস্থল থেকে একজন পালিয়ে যায়। ওই অভিযানের পর শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা বলছিলেন, কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ওয়েকআপ কল’। ওই অভিযানে আস্তানায় থাকা জঙ্গিদের নিষ্ক্রিয় করতে না পারলে হোলি আর্টিজান বেকারির মতো আরও ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল।

সিটিটিসি সূত্র জানায়, কল্যাণপুরের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সাত জনকে এজাহারভুক্ত আসামি উল্লেখ করে পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজধানীর মিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিল। এর প্রায় আড়াই বছর অনুসন্ধানের পর দশ জনকে আসামি করে চার্জশিট প্রস্তুত করে সিটিটিসি। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলো- রাকিকুল হাসান রিগ্যান (২১), সালাহ্ উদ্দিন কামরান (৩০), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩), আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), আজাদুল কবিরাজ ওরফে বিপ্লবি ওরফে হার্টবিট (২৮), মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে নাসরুল্লা হক ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে কুলমেন (৩৩) ও হাদিসুর রহমান সাগর  (৪০)। চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে শরীফুল ইসলাম খালেদ, মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন ও আজাদুর কবিরাজ এখনও পলাতক রয়েছে। বাকিরা গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। পলাতক তিন জনের মধ্যে খালেদ ও রিপন দীর্ঘ দিন ধরে ভারতে অবস্থান করছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

তদন্ত সূত্র জানায়, মামলার এজাহারে যে সাত জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে তিন জনের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। এরা হলো ইকবাল, জুনায়েদ খান ও বাদল। এদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই তিন জনের একজন জুনায়েদ খান তার ভাই ইব্রাহীম হাসান খানসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়ার জন্য সিরিয়ায় গিয়েছে বলে কথিত রয়েছে।

সূত্র জানায়, কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাকে অজ্ঞাত হিসেবে ধরে ঘটনাস্থলে নিহত ৯ জনসহ এগার জনকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা হলো ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত তামিম আহমেদ চৌধুরী ওরফে আবু তালহা, ওই বছরের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ার বসুন্ধরার টেক এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে পাঁচ তলা থেকে পরে গিয়ে নিহত সারোয়ার জাহান মানিক, ঘটনাস্থলে নিহত মোতালেব ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে রনি, আবু হাকিম নাঈম, তাজ-উল হক ওরফে রাশিক, আকিফুজ্জামান খান, রায়হান ওরফে রায়হানুল কবির ওরফে তারেক, মতিউর রহমান, জুবায়ের হোসেন, সেজাদ রউফ ওরফে অর্ক। এছাড়া এই মামলায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার দেখানো হলেও আহমেদ আজম ইমতিয়াজ ওরফে অমি ওরফে জহিরুল ইসলাম ওরফে জসিম এবং বাগেরহাটের একটি মামলার আসামি আকাশ ওরফে বাবু, হাবিবুল্লাহ, কবিরুল ইসলাম ওরফে কবির মুহুরি ও মিজানুর রহমানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

চার্জশিটের বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, কল্যাণপুরের আস্তানায় অবস্থানকারী ও যাতায়াতকারীরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল বাংলাদেশ (জেএমবি)’র নেতেৃত্বের উগ্র অংশ। তারা দেশে খেলাফত বা কথিত শারিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজেদের নব্য জেএমবি পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। তারা পরষ্পর যোগসাজোশে কূটনৈতিক এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়ে সেখানে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো ছুরির আঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে আসামিরা বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন ও বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কল্যাণপুরের ওই আস্তানায় এমন অন্তত পাঁচ জন নিহত হয়েছিল, যারা হোলি আর্টিজান বেকারির মতো আরেকটি হামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। অভিযানের পর আস্তানা থেকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস এর পতাকা সম্বলিত জঙ্গিদের ছবিও উদ্ধার করা হয়, যা গুলশান হামলার দিবাগত মধ্য রাতে আইএসের প্রোপাগান্ডা চ্যানেল আমাক এজেন্সি থেকে প্রকাশিত ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে। সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, কল্যাণপুরের আস্তানাটি মূলত ব্যবহৃত হয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে।

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!